কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের বিএনপি কর্মী কুদরত আলী হত্যা মামলায় কুষ্টিয়ার সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) এস এম তানভীর আরাফাতকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। সোমবার (২৮ জুলাই) দুপুর ১টা ৪১ মিনিটে কড়া নিরাপত্তায় তাকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। পরে দৌলতপুর আমলি আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তফা পারভেজের আদালতে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। দুপুর ১টা ৫১ মিনিটে তাকে পুনরায় কারাগারে পাঠানো হয়।
এর আগে বিএনপির আরেক কর্মী সুজন মালিথা হত্যা মামলার প্রধান আসামি হিসেবে তানভীর আরাফাতকে গ্রেপ্তার করা হয়। সেই মামলায় তিনি বর্তমানে কুষ্টিয়া কারাগারে রয়েছেন। গ্রেপ্তারের আগে তিনি সিলেট রেঞ্জ ডিআইজি অফিসে উপ-পুলিশ কমিশনার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
২০২০ সালের ২৩ জুলাই গভীর রাতে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের মুন্সিগঞ্জ গ্রামে বিএনপি কর্মী কুদরত আলীকে নিজ বাড়ি থেকে অপহরণ করা হয়। মামলার বাদী নিহত কুদরত আলীর ছেলে অভিযোগ করেছেন, “আওয়ামী লীগ সমর্থিত সন্ত্রাসী ও কিছু সুবিধাভোগী পুলিশ আমার বাবাকে বিএনপি কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ ঠেকাতে হত্যার পরিকল্পনা করে।”
বাদীর ভাষ্য অনুযায়ী, তৎকালীন দৌলতপুর থানার ওসি তদন্ত নিশিকান্ত সরকার, এসআই রোকনুজ্জামান, এসআই মেহেদী হাসান, এসআই শাহজাহান, এএসআই আনিচুর রহমান এবং কুষ্টিয়ার এসপি এস এম তানভীর আরাফাতসহ আরও ১০-১২ জন পুলিশ ওই রাতে বাড়িতে প্রবেশ করে কুদরত আলীকে অপহরণ করে নিয়ে যায়।
পরিবারের সদস্যরা থানায় গিয়ে কুদরত আলীর সন্ধান চাইলে পুলিশ কোনো তথ্য দেয়নি। ২৫ জুলাই সকালে তারা জানতে পারে, অপহরণের পর নির্যাতন ও গুলি করে কুদরত আলীকে হত্যা করা হয়েছে। তার মরদেহ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়।
পরিবারটি ২৬ জুলাই মামলা করতে গেলে তৎকালীন ওসি তদন্ত নিশিকান্ত সরকার মামলা নেননি এবং বাদীকে হুমকি দিয়ে থানা থেকে বের করে দেন।
বাদী অভিযোগ করেন, “সেসময় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল এবং কুষ্টিয়ার এসপি হিসেবে তানভীর আরাফাত থাকায় মামলা করা সম্ভব হয়নি।”
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ২০২৪ সালের ২ অক্টোবর কুদরত আলী হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলাতেই সোমবার তানভীর আরাফাতকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সোলাইমান শেখ বলেন, “দৌলতপুর থানার একটি মামলায় কুষ্টিয়ার সাবেক পুলিশ সুপার এস এম তানভীর আরাফাতকে গ্রেপ্তারের আবেদন করা হয়েছিল। আদালত আবেদনের প্রেক্ষিতে তা মঞ্জুর করেছেন।”
কুদরত আলী বিএনপির একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন এবং স্থানীয়ভাবে তার ব্যাপক জনপ্রিয়তা ছিল। বিএনপি নেতারা বলছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বিরোধী রাজনৈতিক কর্মীদের ওপর দমন-পীড়নের অংশ হিসেবে এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থানীয় নেতারা জানিয়েছেন,”এ হত্যাকাণ্ডের বিচার যেন দ্রুত হয় এবং পরিকল্পনাকারীদের আইনের আওতায় আনা হয়।”