এলপিসি ও সার্ভিস বুক
আটক, তদন্তের নির্দেশ

এইচ এম আলাউদ্দিন ঃ সহকর্মীদের কাছ থেকে প্রায় ৭০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যোগ দিয়েছেন একজন স্বাস্থ্যকর্মী। কার্ডিওগ্রাফার পদে কর্মরত রয়েছেন মোঃ হাফিজুর রহমান নামের ওই ব্যক্তি। তবে সহকর্মীদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়ার ফলে কর্তৃপক্ষ তার এলপিসি ও চাকুরী বহি আটকে দিয়েছেন। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এজন্য পত্র দিয়েছেন খুমেক হাসপাতালের পরিচালকের কাছে।
মিরপুরের উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা ডাঃ পিযুষ কুমার সাহা স্বাক্ষরিত গত ২৪ এপ্রিল দেয়া ওই পত্রে বলা হয়, কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সাবেক কার্ডিওগ্রাফার মো: হাফিজুর রহমান ওই প্রতিষ্ঠানে থাকাবস্থায় দীর্ঘদিন যাবত অননুমোদিতভাবে কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন এবং সেখানকার বিভিন্ন কর্মচারীর কাছ থেকে বিভিন্ন কায়দায় অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। যা লিখিতভাবে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। এছাড়া তার কাছে রক্ষিত উক্ত প্রতিষ্ঠানের সরকারি সম্পত্তি তিনি বুঝিয়ে দেননি বলেও ওই পত্রে উল্লেখ করা হয়। এজন্য এসব সমস্যা সমাধানের জন্য সাময়িকভাবে তার এলপিসি ও চাকুরী বহি প্রেরণ করা সম্ভব হচ্ছে না।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ছাড়াও ওই পত্রের কপি দেয়া হয়েছে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক, কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন, মিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার, এবং মিরপুরের হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তাকেও। পত্রের সাথে ১০ জনের একটি তালিকা দিয়ে তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন অংকের টাকা নেয়া হয়েছে বলেও জানানো হয়। যাদের কাছ থেকে টাকা নেয়া হয়েছে তাদেরকে চেক দেয়ার পাশাপাশি নন জুডিশিয়াল ষ্ট্যাম্পে স্বাক্ষরও দিয়েছেন উক্ত কার্ডিওগ্রাফার। তালিকায় উল্লেখ করা হয়, মিরপুরের উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার(এসএসিএমও) মো: শরিফ হাসানের কাছ থেকে সাড়ে চার লাখ টাকা, মো: কাওসার আহমেদের কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা, মো: রাশিদুল ইসলামের কাছ থেকে আট লাখ টাকা, মো: কামাল উদ্দিনের কাছ থেকে ১২ লাখ টাকা, মো: জিল্লুর রহমানের কাছ থেকে ২২ লাখ টাকা, ফার্মাসিষ্ট মো: আলামিনের কাছ থেকে ৮০ হাজার টাকা, মো: মহিউদ্দিনের কাছ থেকে ১৭ লাখ টাকা, পরিচ্ছন্নতাকর্মী মিঠু চন্দ্র বেদের কাছ থেকে তিন লাখ ৩০ হাজার টাকা, জুনিয়র মেকানিক মো: সিরাজ উদ্দিনের কাছ থেকে তিন লাখ টাকা এবং হারবাল গার্ডেনার মো: কাশেমের কাছ থেকে ৭০ হাজার টাকা নিয়েছেন। ওই টাকা নেয়ার পর তিনি কিছুদিন গা ঢাকা দেয়ার পর সর্বশেষ খুমেক হাসপাতালে বদলী হয়ে আসেন।
এ ব্যাপারে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা: বিধান চন্দ্র ঘোষ বলেন, এ সংক্রান্ত একটি পত্র হাসপাতালে এসেছে। কিন্তু বিষয়টি যেহেতু কুষ্টিয়ার সেহেতু সেখান থেকেই মীমাংসা হয়ে আসতে হবে। তবে যতদিন পর্যন্ত এলপিসি ও সার্ভিস বুক না আসবে ততদিন তার বেতন হবে না। এজন্য উভয় পক্ষ আইনের আশ্রয় নিয়েও সমাধান করতে পারে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা: রাশেদা সুলতানা বলেছেন, খুমেক হাসপাতালের বর্তমান কার্ডিওগ্রাফার মো: হাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে প্রায় ৭০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ সম্পর্কিত একটি পত্র তিনি পেয়েছেন। বিষয়টি তিনি কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জনকে তদন্ত করে প্রতিবেদন পাঠাতে বলেছেন। তবে এতো বিপুল পরিমাণ টাকা তিনি কেন নিয়েছেন এবং যারা দিয়েছেন তাদেরও ওই টাকা দেয়ার পেছনে কোন রহস্য আছে কি না সবকিছুই তিনি তদন্ত করে দেখার জন্য কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জনকে বলেছেন। প্রকৃত দোষী হলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
তবে খুমেক হাসপাতালের কার্ডিওগ্রাফার মো: হাফিজুর রহমান বলেন, তার বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাতের যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা’ সঠিক নয়। তাহলে এমন অভিযোগ তার বিরুদ্ধে কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে।