স্টাফ রিপোর্টার ঃ শিক্ষকের মৃত্যুর ঘটনায় উদ্ভুত উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) আগামী ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। একই সঙ্গে বিকাল ৪টার মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশনা দেওয়া হয়। কর্তৃপক্ষের নির্দেশে শুক্রবার বিকাল ৪টার মধ্যে ৭টি হল ছেড়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
তবে সিন্ডিকেটের সভায় তদন্ত কমিটির বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। করোনা পরিস্থিতিতে দীর্ঘদিন ক্যাম্পাস বন্ধ থাকার পর আবারও বন্ধ ঘোষণা করায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া বিঘিœত হবে বলে জানিয়েছেন তারা।
এদিকে ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণার পর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠে। দ্রুত তারা ক্যাম্পাসের ৪টি গেটে তালা লাগিয়ে দেয় এবং হল না ছাড়ার ঘোষণা দেয়। পরে পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তাকর্মীরা তালা ভেঙে গেটগুলো খুলে দেয়। বিকাল ৪টার পরে ছাত্রলীগ কর্মীরাও হল ত্যাগ করে।
প্রসঙ্গত, গত ৩০ নভেম্বর দুপুর আড়াইটায় হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান কুয়েটের ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ও লালন শাহ হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মো. সেলিম হোসেন। এর আগে দুপুর সাড়ে ১২টায় ক্যাম্পাসের ভেতরে শিক্ষকের সঙ্গে দুর্ব্যবহার ও লাঞ্ছিত করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে। মানসিক নির্যাতনে ড. সেলিম হোসেনের মৃত্যু হয়েছে দাবি করে গত ১ ডিসেম্বর থেকে ক্লাস বর্জন শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তারা দায়ীদের ক্যাম্পাস থেকে বহিষ্কার না করলে কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। সার্বিক পরিস্থিতি করণীয় ঠিক করতে সিন্ডিকেটের জরুরী সভা আহ্বান করা হয়।
সূত্র জানায়, কুয়েটের মূলতবি জরুরি সিন্ডিকেট সভা শুক্রবার সকাল ১০টায় শুরু হয়। সভা শেষে দুপুর সাড়ে ১২টায় রেজিস্টার প্রকৌশলী মোঃ আনিসুর রহমান ভূঁইয়া জানান, আগামী ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত কুয়েট বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া বিকাল ৪টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটির ২ জন বুধবার তদন্তে অপারগতা প্রকাশ করেন। তবে রেজিস্ট্রার জানান, তদন্ত কমিটির বিষয়ে সিন্ডিকেট সভায় কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা গেছে, সিন্ডিকেট সভা চলাকালে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেয়। এছাড়া তারা উপাচার্যের কাছে ৫ দফা দাবি সম্বলিত একটি স্মারকলিপি দেয়। এ সময় সাধারণ শিক্ষার্থীরা সকালে প্রায় দুই ঘণ্টা ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সামনে অবস্থান নেয়। তারা ড. সেলিম হোসেনের মৃত্যুর জন্য দায়ীদের বহিষ্কারসহ শাস্তির দাবি জানান।
সিন্ডিকেট সভা শেষে হল ছাড়ার নির্দেশ প্রত্যাখ্যান করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ সময় বিক্ষুব্ধ কর্মীরা রশিদ হলের সামনে অবস্থান নেয়। আরেকটি দল বিভিন্ন গেটে তালা মেরে দেয়। বেলা সোয়া তিনটার সময় তারা প্রশাসনিক ভবনের সামনে গিয়ে অবস্থান নেয়। এ সময় তারা রেজিস্ট্রারসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাদের কাছে তাদের পাঁচ দফা দাবির বিষয়ে কী করেছেন তা’ জানতে চায়। তখন কর্তৃপক্ষ তাদের জানায়, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই হল ছাড়তে হবে। তবে তাদের দাবির বিষয়টি পরবর্তীতে বিবেচনা করা হবে। এ সময় সাংবাদিকরা ছবি তুলতে গেলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের সাথে দুর্ব্যবহার করে এবং ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেয়।
অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পুলিশ ও নিরাপত্তা কর্মীরা বিভিন্ন গেটের তালা ভেঙ্গে ফেললে দুপুর দুইটার দিকে ১/২জন করে ছাত্র-ছাত্রী ক্যাম্পাস ত্যাগ করতে শুরু করে। বিকাল চারটার মধ্যে বেশিরভাগ সাধারণ শিক্ষার্থী ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যায়। বিকাল চারটার পরে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হাল ছাড়তে বাধ্য হয়।
কুয়েটের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ আবদুুল্লাহ আর রফি ও মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, করোনার কারণে দীর্ঘদিন তাদের ক্যাম্পাস বন্ধ ছিল। এখন আবার ক্যাম্পাস বন্ধ করায় তাদের লেখাপড়া বিঘিœত হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, রাজনৈতিক কর্মকান্ডের কারণে এবার তাদের ক্লাস-পরীক্ষা বিঘিœত হচ্ছে।
এছাড়া হঠাৎ করে হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়ায় শিক্ষার্থীরা বিপাকে পড়েছে। ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে নগরীর ফুলবাড়িগেট এলাকায় গিয়ে অনেকেই দূর-দূরান্তের বাসের টিকিট পাচ্ছেন না।
রুমানা পারভীন ও শিউলী আক্তার নামের দুই ছাত্রী বিকাল সাড়ে চারটায় জানান, তারা দুইজন ময়মনসিংহ যাবেন, কিন্তু এখন কোনো বাস পাচ্ছেন না।