/ কেএমপি কমিশনার বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীরা দ্বিধা-বিভক্তিতে

কেএমপি কমিশনার বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীরা দ্বিধা-বিভক্তিতে

  • আজ রূপসা সেতু টোল প্লাজা বøকেড কর্মসূচি একাংশের
  • মেলা চায় না বৈষম্য বিরোধীর অপরাংশসহ ৮ সংগঠন
  • মেলার অনুমতি না দেওয়ার আহবান ইমাম পরিষদের

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ(কেএমপি) কমিশনার মোঃ জুলফিকার আলী হায়দারের অপসারণ দাবি নিয়ে চলমান আন্দোলন দ্বিধা-বিভক্ত হয়ে পড়েছে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একাংশের পক্ষ থেকে কেএমপি সদর দপ্তরে সোমবারও(৩০ জুন) বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়। অপরদিকে, দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে অপরাংশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘আমাদের মূল দাবি বাস্তবায়ন হয়ে গেছে। এসআই সুকান্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সুতরাং কেএমপি কমিশনারের পদত্যাগ বা অপসারণ দাবির আর কোন যৌক্তিকতা নেই।’ এছাড়া খুলনা জেলা ইমাম পরিষদের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসক ও কেএমপি কমিশনারের কাছে দেওয়া স্মারকলিপিতেও কোন প্রকার মেলার অনুমতি না দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে।
কেএমপি কমিশনারবিরোধী আন্দোলন: গত বুধবার থেকে কেএমপি কমিশনারের অপসারণ দাবিতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে গøাক্সো মোড়ের কেএমপি সদর দপ্তর ঘেরাও করা হয়। শুক্রবার বাদে প্রতিদিনই দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত চলে তাদের বিক্ষোভ। এরপর জুলাই মাসব্যাপী নগরীর জিয়া হলের ফাঁকা জায়গায় বিভিন্ন কর্মসূচি পালন, স্টল বরাদ্দ, রাইড স্থাপনের জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে অনুমতি চেয়ে না পেয়ে তার বিরুদ্ধেও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয় ওই অংশের পক্ষ থেকে। তবে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, জুলাই কর্মসূচিতে কোন আপত্তি নেই, কিন্তু কোন মেলার অনুমতি তার একার পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়। এজন্য ২ জুলাইয়ের আইন-শৃংখলা কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত লাগবে। সে পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
কেএমপি কমিশনারের পদত্যাগ দাবিতে চলমান আন্দোলনের সম্মুখ সারিতে থাকা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন খুলনা জেলা শাখার সদস্য সচিব সাজিদুল ইসলাম বাপ্পি বলেন, কেএমপি কমিশনারের পদত্যাগ না হওয়া পর্যন্ত তাদের বিক্ষোভ ও কেএমপি ঘেরাও কর্মসূচি চলবে। প্রতিদিনের ন্যায় গতকালও তাদের কর্মসূচি চলে। তবে গতকাল প্রথমে কেএমপি সদর দপ্তর ছাড়াও সোনাডাঙ্গার উপপুলিশ কমশিনার(দক্ষিণ) ও খালিশপুরের উপপুলিশ কমিশনার(উত্তর) এর কার্যালয়ও ঘেরাও করা হয়। কিন্তু বৃষ্টির কারণে সেখান থেকে পরে সবাই কেএমপি সদর দপ্তরে একত্রিত হয়। সেখানে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিক্ষোভ চলে।
খুলনা মহানগর বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব জহুরুল তানভীরের নেতৃত্বে এসময় উপস্থিত ছিলেন বৈষম বিরোধী ছাত্র আন্দোলন খুলনা জেলার আহ্বায়ক তাসলিম আহমেদ, সদস্য সচিব সাজিদুল ইসলাম বাপ্পি, খুলনা মহানগর এনসিপির সংগঠক উশান, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের খুলনা মহানগর সহকারী মুখপাত্র রুমি রহমান, যুগ্ম সদস্য সচিব ফয়সাল ফাহিম, খুলনা জেলা বৈষমবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য ইসরাত সুলতানা, খুলনা মহানগর যুগ্ম আহ্বায়ক আসাদুল্লাহ গালিব, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন খুলনা মহানগর যুগ্ম সদস্য সচিব আবু সাঈদ, খুলনা জেলা নাগরিক পার্টির সমন্বয় কমিটির প্রধান সমন্বয়ক মাহমুদুল হাসান ফয়জুল্লাহ, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন খুলনা মহানগর অন্যতম সংগঠক রাফসান, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন খুলনা মহানগরের মুখ্য সংগঠক সাজ্জাদুল ইসলাম আজাদ, এনসিপির অঙ্গ সংগঠন যুব শক্তির কেন্দ্রীয় কমিটির সংগঠক ওয়াহিদ অনি, এনসিপি খুলনা জেলা সমন্বয় কমিটির সদস্য মোঃ কদরুল, এনসিপির খুলনা মহানগর সদস্য মোঃ শামীম হোসেন খান, ইমন ইসলাম, ৫নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক মনজুরুল ইসলাম, সদর থানা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাকিব, সুন্দরবন কলেজ ছাত্রদলের সেক্রেটারি আলমগীর, আজম খান সরকারি কমার্স কলেজ ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মাহিন রহমান, সরকারি মজিদ মেমোরিয়াল সিটি কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সদস্য সচিব আরিফ মোল্লা তূর্য, সাবেক সদস্য মাইমুল হক মাহিম, সাংগঠনিক সম্পাদক ইশতিয়াক আহমেদ রিশাত, বিএল কলেজ ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ফারহান জামাল, দপ্তর সম্পাদক রিফাত আহমেদ, খুলনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র দলের সভাপতি এনামুল হক, মহানগর ছাত্রদলের সবেক সদস্য মাকসুদুর রহমান, খুলনা মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সদস্য ইমরান তুহিন প্রমুখ।
দিনের কর্মসূচি শেষে রাত আটটায় কেএমপি সদর দপ্তরের সামনে জরাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে সাজিদুল ইসলাম বাপ্পি জানান, কেএমপি কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দারের অপসারণের দাবিতে আজ(মঙ্গলবার) বিকেল তিনটায় খুলনার প্রবেশদ্বার রূপসা সেতুর টোলপ্লাজায় ’বøকেড’ ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি পেশ করা হবে। তিনি আরো বলেন, ‘যতদিন এই কমিশনারকে অপসারণ করা না হবে, ততদিন আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।’
মেলা চায়না ৮ সংগঠন : খুলনায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বর্তমান দাবির সাথে একমত নয় এবং মেলার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অপর অংশসহ আটটি সংগঠন। সংগঠনগুলো হলো- রেড জুলাই, জুলাই রেভ্যুলেশনারী এলায়েন্স, জাস্টিস ফর জুলাই, ইনকিলাব মঞ্চ, আপ বাংলাদেশ, রঙমশাল ও পুসাব।
উক্ত আট সংগঠনের পক্ষ থেকে গতকাল সোমবার দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলন থেকে বলা হয়, ‘জুলাই কেন্দ্রিক এমন কোন কর্মকাÐ করব না যাতে জুলাই আন্দোলনকে বিতর্কিত করে।’ সাম্প্রতিক সময়ে খুলনার ভেঙ্গে ফেলা জিয়া হলের ফাঁকা জায়গায় জুলাই মাসব্যাপী মেলা আয়োজনের যে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল তাদের সাথেও ওই আটটি সংগঠনের কোন সম্পৃক্ততা নেই বলেও জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন খুলনা মহানগর আহবায়ক আল শাহরিয়ার।
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জানানো হয়, ‘কেএমপি কমিশনারের পদত্যাগের এক দফার সাথে আমাদের কোন সম্পৃক্ততা নেই। কেননা, যে দাবিতে কেএমপি ঘেরাও কর্মসূচি শুরু করেছিলাম সে দাবি বাস্তবায়ন হয়েছে। অর্থাৎ এসআই সুকান্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সুতরাং এখন আর এই ইস্যুতে আন্দোলনের যৌক্তিতা নেই। একইভাবে জেলা প্রশাসকের কাছে যারা মেলার অনুমতি চেয়ে না পেয়ে বিষদগার করছে তাদের সাথেও ওই আটটি সংগঠনের মূল ধারার কারও সংশ্লিষ্টতা নেই।
সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির সাথে সমন্বয় করে জুলাই মাসব্যাপী তথা ৩৬দিনব্যাপী কর্মসূচি পালন করার কথা জানানো হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন, সাঈফ নেওয়াজ, মিরাজুল ইসলাম ইমন প্রমুখ।
ইমাম পরিষদের আপত্তি : মেলার নামে লটারি, জুয়াসহ সকল প্রকার অনৈতিকতা বন্ধের দাবি জানিয়েছে খুলনা জেলা ইমাম পরিষদ। পরিষদের পক্ষ থেকে গতকাল সোমবার দুপুরে খুলনার জেলা প্রশাসক ও কেএমপি কমিশনার বরাবরে দেওয়া পৃথক স্মারকলিপিতে এ আহবান জানানো হয়।
ইমাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা গোলাম কিবরিয়া স্বাক্ষরিত স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, ‘সাম্প্রতিক সময়ে পত্র পত্রিকা ও সোস্যাল মিডিয়াসহ একাধিক সুত্রে জানা গেছে , খুলনা শহরের অত্যন্ত ব্যস্তময় স্থান বাবরি চত্বরে (শিববাড়ি মোড়) ও পরিত্যক্ত জিয়া হল এলাকায় মাসব্যাপী মেলার আয়োজনের চেষ্টা চলছে। অতীতে আমরা দেখেছি যেখানেই মেলার আয়োজন করা হয়েছে সেখানে নগ্নতা ও অনৈতিকতা থাকে। লটারি, জুয়াসহ অনেক অসামাজিক ও অনৈসলামিক কাজ চলে থাকে। ফলে সমাজে ও রাষ্ট্রে অপরাধ প্রবনতা বৃদ্ধি পায়। কাজেই এ ধরণের কোন মেলার অনুমতি না দেওয়ার জন্য খুলনা জেলা ইমাম পরিষদের পক্ষ থেকে দাবি জানানো হয়।
স্মারকলিপি পেশকালে উপস্থিত ছিলেন, অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুর রহমান, অধ্যক্ষ মাওলানা এ এফ এম নাজমুস সউদ, মাওলানা নাসিরুদ্দিন কাসেমী, মুফতি জিহাদুল ইসলাম, ড. মুফতি আব্দুর রহিম, হাফেজ মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, মাওলানা আনোয়ারুল আজম, মাওলানা মোল্লা মিরাজুল হক, মাওলানা মুশফিকুর রহমান, মাওলানা হেকমত উল্লাহ প্রমুখ।
জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেওয়ার পর পরই খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার বরাবর একই দাবিতে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। এসময়ও ইমাম পরিষদের উল্লিখিত নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।