একান্ত সাক্ষাতকারে চেয়ারম্যান ড. মোল্যা আমীর হোসেন

স্টুডেন্ট প্রোফাইলসহ নতুন নতুন উদ্ভাবনায় সকল বোর্ডের মধ্যে এগিয়ে

স্টাফ রিপো : দেশের আটটি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের এবং অন্য ২টি বোর্ডের চেয়ারম্যানবৃন্দ আগামীকাল ২৪ তারিখ ঢাকায় মিলিত হচ্ছেন। এদিন আলোচনায় স্থগিত এইচ এসসি পরীক্ষা গ্রহণের বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাবে। অনেকেরই ধারণা পরীক্ষা গ্রহণের সময়সীমা এবং প্রস্তুতি, ঝুঁকি বিবেচনা, আসন বিন্যাস, পরীক্ষা কেন্দ্র, প্রশ্নপত্রসহ বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা হবে। এই গুরুত্বপূর্ণ সভার বিষয়টি সামনে রেখে দৈনিক পূর্বাঞ্চলের পক্ষ থেকে সাক্ষাতকার নেওয়া হয় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, যশোর এর চেয়ারম্যান ড. মোল্যা আমীর হোসেনের। বর্তমান করোনাকালে তিনি অনেকটা ঝুঁকি নিয়েও বোর্ডের অধীন বিভিন্ন বিদ্যালয় এমনকি প্রত্যন্ত এলাকাতেও গেছেন। বোরো মৌসুমে কৃষকের মাঠে পড়ে থাকা পাকা ধান কেটেছেন শিক্ষকদের নিয়ে। তিনি যশোর বোর্ডে যোগদান করেই কাজের গতি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি দক্ষতা বৃদ্ধি ও প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের দিকেও নজর দেন। ইতিমধ্যে তার উদ্যোগে ও নেতৃত্বে বেশকিছু কাজে আশাব্যঞ্জক সাফল্য এসেছে। অন্যান্য অনেক বোর্ড এবং প্রতিষ্ঠানও যশোর বোর্ড উদ্ভাবিত পন্থা অবলম্বন করছে। সর্বশেষ যে কাজে হাত দেওয়া হয়েছে তা’ হচ্ছে স্টুডেন্ট প্রোফাইল। একজন শিক্ষার্থী ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হলেই তার ব্যক্তিগত তথ্যের পাশাপাশি তার অর্জনসমূহ এখানে যুক্ত হবে, উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত সাত বছর ধরে শিক্ষার্থীর সে প্রোফাইল যতেœর সাথে হালনাগাদ থাকবে। এমন সব নতুন নতুন উদ্ভাবন ও সময়ের চাহিদার সাথে সঙ্গতি রেখে পরিবর্তন, সংযোজন ও আধুনিকায়নের নানা উদ্যোগের কথা জানান এই বোর্ড চেয়ারম্যান।
প্রশ্ন: আগামীকাল ২৪ তারিখ বোর্ড চেয়ারম্যানদের যে বৈঠক হতে যাচ্ছে সেখানে যশোর বোর্ডের কি কি প্রস্তুতির কথা জানানো হবে?
উত্তর: এইচএসসি পরীক্ষার গ্রহণের বিষয়টি এখন আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। লাখ লাখ পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভবাবকসহ বলতে গেলে গোটা জাতি আজ উদ্বেগ ও অধীর আগ্রহের সাথে অপেক্ষা করছে। আমরাও এ বিষয়টিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে মাথায় রেখেছি। এটুকু বলা যায় যে, সরকার তথা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত এবং তারিখ ঘোষণা হলে সে সময় ও নির্দেশনা মতো পরীক্ষা গ্রহণের প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে। আমরা দুই বা তিন সপ্তাহ সময় পেলেই হলো। আমরা পরীক্ষা গ্রহণের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিতে পারবো।
প্রশ্ন: করোনা পরিস্থিতির বিষয়টি মাথায় রেখে কেন্দ্র বা আসন বিন্যাসের বিষয়টি নিয়ে কী ভাবা হয়েছে?
উত্তর: হ্যাঁ, বিষয়টি নিয়ে আমরা ইতোমধ্যে কয়েক দফা অনলাইনে সভা করেছি, কেনো কোনো ক্ষেত্রে সরেজমিনে আমরা গিয়ে দেখেছি। তাতে করে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে পরীক্ষা গ্রহণে তেমন কোনো সমস্যা হবে না। আমরা যদি একটি বেঞ্চের দুই মাথায় দু‘জন পরীক্ষার্থীকে বসাই এবং দুটি বেঞ্চের মাঝে তিন ফুট দূরত্ব রাখি তবে অসুবিধা হবে না। প্রয়োজন হলে আমরা এক বেঞ্চে একজন পরীক্ষার্থীকেও বসাতে পাবো। যে কেন্দ্রে এভাবে আসন বিন্যাসের পর সংকুলন হবে না কেবলমাত্র সেখানে পার্শ্ববর্তী ভালো স্কুলে আসন বিন্যাসে আমরা বিবেচনায় রাখবো।
প্রশ্ন: পরীক্ষার পরিদর্শক, কেন্দ্র সচিব এসব বিষয়ে কি ভাবছেন?
উত্তর: এটা আমাদের জন্য কোনো বিষয় নয়, আমাদের প্রস্তুতি আছে তারিখ ঘোষণা হলেই তা’ আমরা চূড়ান্ত করতে পারবো।
প্রশ্ন: যশোর বোর্ডের সক্ষমতা সম্পর্কে কিছু বলবেন কি?
উত্তর: মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, যশোর এখন প্রযুক্তিগত দিক এবং অন্যান্য সাধারণ সব ক্ষেত্রে অনেক সক্ষমতা অর্জন করেছে। এখানকার কর্মচারি ও কর্মকর্তাদের সহায়তায় বোর্ডের সকল ইউনিটের কার্যক্রমে গতি এসেছে। স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, শৃঙ্খলা ও সমন্বয়ের দিকে আমাদের নজর আছে। কোথাও কেনো সমস্যা হলে আমরা অতিদ্রুত তা’ নিরসনের চেষ্টা করছি। আপনারা লক্ষ্য করবেন এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণার পর যশোর বোর্ড ফলাফলের সাথে শিক্ষার্থীদের প্রাপ্ত মার্কও প্রদর্শন করেছে। আমরা নতুন নতুন উদ্ভাবনা করছি। এখন শিক্ষক বা পরীক্ষার্থীদের যশোর বোর্ডে এসে সময় ও অর্থ নষ্ট করা লাগে না। আমরা সব কিছুই স্কুল বা কলেজকেন্দ্রিকে নিয়ে গেছি।
প্রশ্ন: আপনি সম্প্রতি স্টুডেন্ট প্রোফাইল সর্ম্পকে বলেছেন। এটা নিঃসন্দেহে ভালো উদ্যোগ। বিষয়টি খুলে বলবনে কি?
উত্তর: আমরা এখন থেকে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে একজন শিক্ষার্থী ভর্তি হলেই তার নিজস্ব একটা প্রোফাইল খুলবো। এখানে শিক্ষার্থীর নাম, পিতার নাম, মাতার নাম, বয়স নিবন্ধনের তথ্যসহ প্রয়োজনীয় তথ্য থাকবে। এমনিক ওই শিক্ষার্থী পিইসি, জেএসসিতে বৃত্তি পেলে কিংবা তার কোনো বিশেষ অর্জনের তথ্যও থাকবে। এটি আপডেট হবে এবং শিক্ষার্থীর এইচ এসসি পর্যন্ত অর্থাৎ ৭বছর ধরে এ প্রোফাইল থাকবে। এ ব্যবস্থা এখনও অনেক বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রতিষ্ঠানে নেই। আমরা অচিরেই এটা উদ্বোধন করবো।
প্রশ্ন: আপনার সময়কালে আপনি যশোর বোর্ডের অগ্রগতি নিয়ে আর কি ভাবছেন?
উত্তর: আমি বোর্ডের সকলকে সাথে নিয়ে দেশের মধ্যে এ শিক্ষা বোর্ডকে সেরা ও আদর্শস্থানীয় হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। বিশেষ করে প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বোর্ডের সকল কাজ সম্পাদন এবং ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও জবাব দিহিতা প্রতিষ্ঠা করতে চাই। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা, শিক্ষামন্ত্রী, মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানাই তাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রাপ্ত নির্দেশনার আলোকে বোর্ডের কার্যক্রমে প্রত্যাশিত পর্যায়ে উন্নীত করতে পারবো। আমি এ বোর্ডের সচিব, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকসহ সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা কর্মচারিদের এবং বোর্ডের অধীন সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতার জন্যও আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। একই সাথে অনলাইন, প্রিন্ট ও ইলেট্রোনিক মিডিয়ার যে সহযোগিতা পেয়েছি সে জন্যও আমি কৃতজ্ঞতা জানাই।