# কেসিসির নজরদারির অভাবে বেশিরভাগ ফুটপাতই দখলে

এ এইচ হিমালয় ঃ খুলনা নগরীর ডাকবাংলো মোড় থেকে তুলাপট্টি পর্যন্ত ক্লে রোডের দুই পাশে ১ কোটি ৩৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ড্রেন ও ফুটপাত নির্মাণ করেছে খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি)। পথচারীদের হাঁটার জন্য ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে লাগানো হয়েছে টাইলস। ২০২১ সালের আগস্টে পথচারীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয় ফুটপাত। কিন্তু কোটি টাকার এই ফুটপাতে এক সপ্তাহও হাঁটতে পারেননি পথচারীরা। উন্মুক্ত করার ৭ দিনের মধ্যে দখল হয়ে গেছে ফুটপাতের পুরোটাই।
শুধু ক্লে রোডই নয়; নগরীর অধিকাংশ সড়কেরই একই দশা। পথচারীদের হাটার জন্য কোটি টাকা ব্যয় করে ফুটপাত নির্মাণ করা হলেও এর সুফল পাচ্ছেন না নগরবাসী।
কেসিসির কর্মকর্তা ও নাগরিক নেতারা জানান, প্রায় সাড়ে ৪৫ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের খুলনা মহানগরীতে মানুষের হাটার জায়গা খুবই কম। নগরীর ফুটপাতগুলোর অবস্থা ছিলো রুগ্ন দশা। বিভিন্ন সভা-সেমিনারে নগর পরিকল্পনাবিদ ও নাগরিক নেতারা প্রশস্ত ফুটপাত নির্মাণ এবং হাঁটার জায়গা বাড়ানোর পরামর্শ দেন। ২০১৮ সালে বর্তমান মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক দায়িত্বগ্রহণের পর সড়ক ও ড্রেন সংস্কার এবং ফুটপাত সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেন।
কেসিসি থেকে জানা গেছে, বর্তমানে নগরীতে ৮২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে জলাবদ্ধতা নিরসনে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং ৬০৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নগরীর ক্ষতিগ্রস্ত ও গুরুত্বপূর্ণ সড়ক মেরামত প্রকল্পের কাজ চলছে। প্রকল্পের আওতায় প্রধান সড়কের পাশে ড্রেন এবং ড্রেনের ওপর সøাব দিয়ে প্রশস্ত ফুটপাত নির্মাণ করা হচ্ছে। দাতাসংস্থাও এই কাজে অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে।
ইতোমধ্যে নগরীর কেডিএ অ্যাভিনিউ, আহসান আহমেদ রোড, রতন সেন স্মরণি ও ক্লে রোডের দুই পাশে ফুটপাত নির্মাণ শেষ হয়েছে। বিভিন্ন রঙের বর্ণিল টাইলস ও নতুন নকশায় নির্মাণ করা ফুটপাত পেয়ে খুশি নগরীর মানুষ।
কেসিসির ক্ষতিগ্রস্ত ও গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা মেরামত প্রকল্পের পরিচালক ও নির্বাহী প্রকৌশলী মশিউজ্জামান খান বলেন, নগরীর প্রতিটি প্রধান সড়কের পাশে প্রশস্ত ফুটপাত নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। কিছু ফুটপাতের কাজ শেষ হয়েছে। সাউথ সেন্ট্রাল রোড, ট্যাংক রোড, শামসুর রহমান রোড, ফারাজিপাড়া সড়কে ফুটপাত নির্মাণের কাজ চলছে।
তিনি বলেন, প্রতিটি ড্রেন ও সড়কের সঙ্গেই ফুটপাত নির্মাণের জন্য পৃথক ব্যয় ধরা রয়েছে। প্রকল্পের সব ড্রেনের ওপর স্লাবসহ ফুটপাত ও টাইলস যোগ করে ফুটপাতের জন্য আনুমানিক ৬০ থেকে ৭০ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে।
নগরীর ক্লে রোড ঘুরে দেখা গেছে, ডাকবাংলো মোড় থেকে বড় বাজার পর্যন্ত ফুটপাতের পুরোটাই দখলে। বাজারের ব্যবসায়ীরা নিজ নিজ দোকানের সামনের ফুটপাত দখল করে মালামাল রেখেছে। এসএমএ রব শপিং কমপ্লেক্সের পাশে বেশ কয়েকটি ফলের দোকান।
ফুটপাতে মালামাল রাখার কারণে জানতে চাইলে পাপ্পু নামের এক ফল ব্যবসায়ী পাল্টা প্রশ্ন করেন, আমার দোকানের সামনে আমি মালামাল রেখেছি, তো কি হয়েছে?
প্রায় ২ কোটি ব্যয়ে নির্মাণ করা ৭ ফুট প্রশস্ত ফুটপাত নির্মাণ করা হয়েছে কেডিএ অ্যাভিনিউতে। নগরীর সবচেয়ে প্রশস্ত ও দৃষ্টিনন্দন ফুটপাত পেয়ে খুশি নগরবাসী।
দেখা গেছে, সড়কের সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে ফুটপাতের অর্ধেকটা জুড়েই মটর সাইকেল পার্কিং করা। হাসপাতালের পাশে বেশ কিছু পোল্ট্রি ফিডের দোকান। দোকানের বেশিরভাগ মালামাল রাখা হয়েছে ফুটপাতের ওপর। এর পাশে মুদি দোকান, খাবারের দোকানের মালামাল রয়েছে ফুটপাতজুড়ে। ওই স্থান দিয়ে হাটতে পারেন না মানুষ।
নগরীর সবচেয়ে ব্যস্ততম ফুটপাত আহসান আহমেদ সড়কে। দুটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ বেশ কিছু নামী কোচিং থাকায় সারাদিনই ফুটপাতে শিক্ষার্থীদের পদচারণা থাকে।
দেখা গেছে, সিটি ল কলেজের পাশে বিক্রির জন্য গ্যাস সিলিন্ডার রাখা হয়েছে ফুটপাতের ওপর। ফুটপাতের জায়গা জায়গা মটর সাইকেল পার্কিং করা। রতন সেন স্মরণী শিশু হাসপাতালের দুই পাশে ফুটপাত ব্যবসায়ীদের দখলে।
ইতোপূর্বে সিটি মেয়র তালুকদার আবদুল খালেকের প্রথম মেয়াদে (২০০৮-২০১৩) নগরীর এম এ বারী সড়ক (সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনাল থেকে গল্লামারী) এবং জলিল স্মরণী (বয়রা কলেজ মোড় থেকে বাজার)তে প্রশস্ত ফুটপাত নির্মাণ করা হয়েছিলো। তদারকির অভাবে এম এ বারী সড়কের ফুটপাতের বেশিরভাগ অংশ দখল হয়ে গেছে।
সার্বিক বিষয় নিয়ে বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ উজ জামান বলেন, প্রশস্ত ফুটপাত নির্মাণের বিষয়টি প্রশংসার দাবি রাখে। কিন্তু নির্মাণ করে তদারকি না করায় এর সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে নগরীর মানুষ। ফুটপাতগুলো অবৈধ দখলমুক্ত করতে নিয়মিত অভিযান পরিচালনার অনুরোধ জানান তিনি।