সম্পাদকীয়
প্রতিবেশী ভারতসহ বিভিন্ন দেশে কোভিড সংক্রমণ বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে দেশজুড়ে বিভিন্ন সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সংক্রমণ এড়াতে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ভারত এবং ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়া অন্যান্য দেশে ভ্রমণ থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি ঝুঁকি মোকাবেলায় সব স্থল ও বিমানবন্দরে হেলথ স্ক্রিনিং ও নজরদারি বাড়াতে বলা হয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক সতর্কবার্তায়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে গতকাল বিকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৪৩ জনের পিসিআর ল্যাব টেস্টে দুজনের দেহে কোভিড ধরা পড়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ হালিমুর রশিদের স্বাক্ষরিত গতকাল এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন দেশে নভেল করোনাভাইরাসের নতুন সাব ভ্যারিয়েন্ট, বিশেষ করে ওমিক্রন এলএফ ৭, এক্সএফজি, জেএন-১ এবং এনবি ১.৮.১-এর সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীদের মাধ্যমে বাংলাদেশে এর সম্ভাব্য সংক্রমণ প্রতিরোধে ভারত ও অন্যান্য সংক্রামক দেশ এবং বাংলাদেশ থেকে ভারত ও অন্যান্য সংক্রামক দেশে ভ্রমণকারী নাগরিকদের জন্য দেশের সব স্থল, নৌ, বিমানবন্দরের আইএইচআর ডেস্কে নজরদারি জোরদার করতে হবে। পাশাপাশি ঝুঁকি মোকাবেলায় কিছু কার্যক্রম নিতে হবে। দেশে গত বৃহস্পতিবার কোভিডে আক্রান্ত হয়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে। কোভিড-১৯ সংক্রমণের হার বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় জনসমাগমপূর্ণ এলাকায় মাস্ক পরার জন্য নাগরিকদের অনুরোধ জানিয়েছে। বিশেষত বয়স্ক ও অসুস্থ ব্যক্তিদের জনসমাগম এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে ঈদ-পরবর্তী ট্রেনযাত্রায় সব যাত্রীকে মাস্ক পরা এবং স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের অনুরোধ জানিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। সংক্রমণ এড়াতে যাত্রীদের মাস্ক পরার অনুরোধ করেছে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষও। কোভিড ভাইরাসের সংক্রমণের আগাম সতর্কতা হিসেবে ভারত থেকে যেসব রুটের ফ্লাইট ঢাকায় অবতরণ করে সেগুলোর সব যাত্রীকে স্ক্রিনিং শুরু করেছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। বিমান বন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রæপ ক্যাপ্টেন এসএম রাগীব সামাদ জানান, বিমান যাত্রীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ২ জুন থেকেই একাধিক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। বিশেষ করে ভারত থেকে আগত যাত্রীদের স্ক্রিনিং করা হচ্ছে। বিমানবন্দরে পর্যাপ্তসংখ্যক মাস্ক ও পিপিই রাখা হয়েছে। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় আছে। পাশাপাশি বিমানবন্দরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাও সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দায়িত্ব পালন করছেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আবারও কোভিড সংক্রমণ বাড়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ভারতে কোভিড বেশ দ্রæতই ছড়িয়ে পড়ছে বলে খবরে জানা যায়। এমনি অবস্থায় বাংলাদেশেও আবারও কোভিড ঝুঁকি দেখা দিয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে কোভিড সর্তকর্তা জারী করা হয়েছে। জনসমাবেশে মাস্ক পরতে বলা হয়েছে। অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়েও বলা হয়েছে। সভ্যতা বিধ্বংসী কোভিড ২০১৯ সালের শেষের দিকে প্রথম চীনে সংক্রমণ হয়। পরবর্তীতে নানা দেশে ঘুরে বাংলাদেশেও এই মরণব্যাধী সংক্রমণ ঘটায় বাংলাদেশে পরের বছরের মার্চে এবং দেশে প্রথম কোভিড আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয় ২০২০ সালের ৮ মার্চ। এরপর থেকে ১ কোটি ৫৭ লাখ ২৬ হাজার ২২৪টি নমুনা পরীক্ষা করে ২০ লাখ ৫১ হাজার ৭৩৯ জনের দেহে ভাইরাসটি শনাক্ত হয়। তাদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৫০০ জনের। বিশ্বব্যাপী কোভিড মানব সভ্যতার জন্য এক ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরী করে। বৈশ্বিক মহামারী হিসেবে এই কোভিড প্রায় ১৮ কোটি মানুষকে আক্রান্ত করে এবং সাড়ে ১৭ লক্ষেরও বেশী মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয়। জ্ঞান বিজ্ঞানের চরম উন্নতির শতাব্দীতেও বৈশ্বিক এই মহামারির কাছে মানুষের পান্ডিত্য, শিক্ষা, জ্ঞান, বিজ্ঞান, দক্ষতা, অর্থ-বিত্ত, ক্ষমতা সবই ছিল অসহায়। মানুষ এত ক্ষমতাধর হয়েও কোভিডের কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। এ কারণে লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণ দিতে হয় এই সংক্রমণ ব্যাধিতে। পরবর্তীতে কোভিডের টিকা আবিষ্কার হওয়ায় মানুষ রক্ষা পায়। কিন্তু সেই টিকাও জীবনব্যাপী সুরক্ষা নিশ্চিতে যথেষ্ট নয়। এ জন্য আবার কোভিডের বিভিন্ন সাব ভেরিয়েন্টের সংক্রমণ দেখা দেয়ায় মানুষের মধ্যে এক ধরনের আশংকা তৈরী হচ্ছে। এ জন্য বাংলাদেশের স্বাস্থ্য বিভাগ বেশ আগ হতেই এই বিষয়ে সর্তকতার কথা জানিয়ে আসছে। আমরা মনে করি স্বাস্থ্য বিভাগের সতর্কতা সকলের মেনে চলা উচিত। কথায় বলে সাবধানের মার নেই। আমরা মনে করি আমাদের সাবধানে থাকতে হবে। কোভিড আমাদের যে শিক্ষা দিয়েছে, তা’ আমাদের জীবনভর মনে থাকার কথা। সুতরাং আমাদের সকলেরই উচিত ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য বিধি অনুসরন করা। বিশেষ করে শিশু এবং বয়ষ্কদের বিষয়ে বেশী সতর্কতা অবলম্বন জরুরী। এ বিষয়ে প্রচার মাধ্যমগুলিকে বেশী বেশী সচেতনতামুলক কর্মসূচী প্রয়োজন। একই সাথে স্বাস্থ্য বিভাগ দেশের সার্বিক বিষয় মনিটরিং করে জনগণকে সঠিক তথ্য দিয়ে তাদের সুরক্ষার বিষয়ে আরও তৎপর থাকবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। তবে কোনভাবেই যেন আতঙ্ক এবং অতিরঞ্জিত কোন তথ্য প্রচারিত না হয় সে বিষয়ে আমাদের সকলকেই নজর রাখতে হবে বলে মনে করি।