শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে কুয়েট শিক্ষকদের প্রতি আবারো খোলা চিঠি দিয়ে ক্ষমা চাওয়া হয়েছে। দাবি জানানো হয়েছে ক্লাস শুরুর। কিন্তু শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে গতকাল আবারো ক্লাস বর্জনের পাশাপাশি এবার প্রশাসনিক কাজে অসহযোগিতার কথা জানানো হয়েছে। সমিতি আজ রবিবার সকালে সাধারণ সভা আহবান করেছে।
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে গতকাল শনিবার খোলা চিঠি দিয়ে বলা হয়, ‘শ্রদ্ধেয় শিক্ষকগণ, আপনারা আমাদের পিতৃতুল্য, আমাদের প্রেরণা, জীবনের প্রতিটি সাফল্যের পেছনে আপনাদের অমূল্য অবদান। আমরা বিশ্বাস করি, আপনাদের জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও মমতার স্পর্শ ছাড়া প্রকৃত অর্থে একজন প্রকৌশলী বা মানুষ হয়ে ওঠা সম্ভব নয়। আপনাদের ছায়ায়ই আমরা বেড়ে উঠেছি, শিখেছি কীভাবে অন্ধকারে আলো খুঁজে নিতে হয়। কিন্তু আজ আমাদের সেই আশ্রয়, সেই পথপ্রদর্শক শিক্ষকদের স্নেহ থেকে আমরা দূরে। আমাদের ভাইবোনরা বিশেষ করে ১৯ ব্যাচ প্রচন্ড মানসিক চাপ, ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা ও হতাশায় বিপর্যস্ত। একের পর এক নিয়োগ সার্কুলার চলে যাচ্ছে চোখের সামনে দিয়ে, অথচ তারা শুধু তাকিয়ে থাকতে পারছে। কারণ আমরা এখনো ক্লাসে ফিরতে পারিনি। আর্থিক টানাপোড়েন, পারিবারিক চাপ, মানসিক অবসাদ—সবকিছুর সঙ্গে লড়তে লড়তে আমাদের ভাই বোনেরা এখন ভেঙে পড়ার দ্বারপ্রান্তে।
১৮ ফেব্রæয়ারি রামদা, চাপাতি, পিস্তল দিয়ে কুয়েট ছাত্রদল ও বিএনপি সন্ত্রাসীদের ন্যক্কারজনক হামলায় দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী এবং একজন সম্মানিত শিক্ষক আহত হন। এটা কুয়েটের ইতিহাসে এক গভীর, মর্মন্তুদ, কলঙ্কজনক অধ্যায়। আমরা, শিক্ষার্থীরা, এই ঘটনার নিরপেক্ষ বিচার চাই। শুধু শিক্ষার্থীদের নয়, শিক্ষক লাঞ্ছনারও নিরপেক্ষ তদন্ত ও সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি। এছাড়াও আমরা এখনো দেখতে পাচ্ছি, কিছু ফেসবুক পেজ থেকে উস্কানিমূলক কথা এবং শিক্ষকদের বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হচ্ছে। আমরা চাই এসব এর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হোক’।
বিচারের প্রক্রিয়া যেন পক্ষপাতহীন, গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য হয় সেজন্য বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানানো হয় শিক্ষার্থীদের পত্রে।
খোলা চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘আমরা পূর্বেও বিনীতভাবে ক্ষমা চেয়েছি, বারবার ক্ষমা চেয়েছি-আজ আবারো, অনুতপ্ত হৃদয়ে, আমরা করজোড়ে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। যদি আমাদের কথায়, আচরণে বা অবস্থানে আপনাদের মনে বিন্দুমাত্র কষ্ট দিয়ে থাকি আমরা তার জন্য দুঃখিত, লজ্জিত এবং আন্তরিকভাবে ক্ষমাপ্রার্থী’।
অপরদিকে, টানা ১০দিন ক্লাস বর্জনের পর এবার প্রশাসনিক কাজে সহযোগিতা থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে খুুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) শিক্ষক সমিতি।
গতকাল শনিবার পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মোঃ ফারুক হোসেন এমনটি জানিয়েছেন। এছাড়া চলমান পরিস্থিতি নিয়ে আজ রবিবার সকাল ১০ টায় কুয়েটের প্রশাসনিক ভবনে ৬ষ্ঠ জরুরি সভা আহবান করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ১৮ ফেব্রয়ারি বহিরাগতদের হামলায় কুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের দেড় শতাধিক আহত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রায় তিন মাস ধরে অচলাবস্থা চলছে। গত ৪ মে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হলেও শিক্ষক লাঞ্ছনার প্রতিবাদে শিক্ষকরা ক্লাস বর্জন শুরু করেন। আজ রবিবার পুন:সভা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা শিক্ষক সমিতির।