সম্প্রতি চালের দাম বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে খাদ্য সঙ্কটের আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট। তারা বলছে, দেশের অভ্যন্তরীণ খাদ্য চাহিদা পূরণ করেও আগামী জুন পর্যন্ত কমপক্ষে ৩০ লাখ টন চাল উদ্বৃত্ত থাকবে। চালের দ্বিতীয় প্রধান মৌসুম আমন ধান উঠলেও দাম বৃদ্ধির কারণ খোঁজা হচ্ছে। অতিরিক্ত
মজুদের কারণে দাম বাড়তে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। সরকার চালের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতেও আমদানিসহ নানা উদ্যোগ নিয়েছে। সরকারের এসব উদ্যোগে
চালের দাম কমতে শুরু করেছে। ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে জানা গেছে, দেশে এ বছর অতিবৃষ্টিতে পাঁচ-ছয় দফা বন্যায় ৩৫ জেলার আমন ধান ক্ষতিগ্রস্ত হলেও
সারাবছরের উৎপাদন ও চাহিদা বিবেচনা করলে দেশে খাদ্য ঘাটতির কোন আশঙ্কা নেই। উপরন্তু আগামী জুন পর্যন্ত দেশের চাহিদা পূরণ করেও কমপক্ষে ৩০ লাখ টন
চাল উদ্বৃত্ত থাকবে। গত এক মাস ধরে দেশের ১৪টি কৃষি অঞ্চলে জরিপ করে তথ্য- উপাত্ত বিশ্লেষণের মাধ্যমে তারা এই তথ্য বের করেছে। সারাদেশে চালের উৎপাদন
কম এবং খাদ্য ঘাটতি হওয়ার আশঙ্কার কথা যেভাবে ফলাও করে প্রচার করা হচ্ছে তা’ আদৌ ঠিক নয় বলে মনে করছে প্রতিষ্ঠানটি। তাদের গবেষণাটি ইতোমধ্যেই
কৃষি মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেছে। একই সঙ্গে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটিতেও দেখানো হয়েছে। ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের
মহাপরিচালক ড. মোঃ শাহজাহান কবীর বলেন, এ বছর আউশ, আমন ও বোরো মিলিয়ে মোট চাল উৎপাদন হবে প্রায় ৩৭.৪২ মিলিয়ন টন। আমরা যদি মাথাপিছু
দৈনিক চাল গ্রহণের পরিমাণ ৪০৫ গ্রাম এবং মোট উৎপাদনের ২৬ ভাগ ননহিউম ্যান কনসাম্পশন বিবেচনা করি তাহলে মোট ১৬ কোটি ৭০ লাখ মানুষের জন্য
জুন ২০২১ পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ চালের চাহিদা মিটিয়েও কমপক্ষে ৩০ লাখ টন চাল উদ্বৃত্ত থাকবে। সুতরাং উৎপাদন কম হয়েছে বলে ঘাটতির যে আশঙ্কা করা হচ্ছে তা’ ঠিক নয় এবং অভ্যন্তরীণ মজুদ নিয়ে নেতিবাচক খবরে আতঙ্কিত না হয়ে সবাইকে ধৈর্য সহকাওে পরিস্থিতি মোকাবেলা করা এবং সরকারী পদক্ষেপের প্রতি আস্থা রাখার অনুরোধ
জানাচ্ছি। তবে বাজারে চালের দামে যে তারতম্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে তা’ মনিটরিং- এর মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা আবশ্যক বলে আমি মনে করি। গবেষণায় দেশের ১৪টি
কৃষি অঞ্চলের সর্বমোট ১৮০০ কৃষকের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। পাশাপাশি ৫৬ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও ১১২ উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার কাছ থেকে ধানের
আবাদ ও বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এই গবেষণায় সরাসরি এবং টেলিফোন সাক্ষাতকারের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এতে এই প্রম
উৎপাদন নির্ণয়ের জন্য স্যাটেলাইট ইমেজ ব্যবহার করে আমন ধানের আবাদকৃত এলাকার তথ্য বের করা হয়েছে। চলতি বোরো মৌসুমে আবাদ নির্বিঘড়ব করতে
কয়েকটি সুপারিশও উত্থাপন করা হয়েছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষণা প্রতিবেদনে। ব্রি বলছে, এ বছর যেসব এলাকায় বন্যা হয়েছে, সেসব
জায়গায় প্রয়োজনীয় বীজ, চারা ও সারসহ সকল উপকরণ যথাসময়ে সরবরাহ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ব্রি, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর (ডিএই) ও বাংলাদেশ কৃষি
উনড়বয়ন কর্পোরেশনকে (বিএডিসি) সমন্বয় করে কাজ করতে হবে। চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে কৃষকদের জন্য ধান ও চালের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হবে।
সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান কিনতে হবে। চাল আমদানির সিদ্ধান্ত যৌক্তিকতা বিবেচনা করে নিতে হবে। বছর বছর বন্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে বন্যাপ্রবণ এলাকাগুলোর খাল ও নালা খনন ও পুনঃখনন কার্যμম গ্রহণ করতে হবে। সারাবছর ধানের আবাদ এলাকায় সেচ ব্যবস্থা নির্বিঘড়ব রাখতে হবে। সেচ প্রকল্পগুলো সঠিক সময়ে চালু করা এবং মৌসুমব্যাপী কার্যকরের ব্যবস্থা করতে হবে। পারিপার্শ্বিক পরিবেশ বিবেচনায় নিয়ে যৌক্তিকভাবে ধানের আবাদ এলাকা নির্ধারণ করতে হবে। বোরো আবাদে বীজ, সার ও যান্ত্রিকীকরণে প্রণোদনা অব্যাহত রাখতে হবে। ধান কাটা এবং পরবর্তীতে সহায়তা অব্যাহত রাখতে হবে। কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি আমন ধান কেনা বাড়াতে হবে। ধান ও চাল সংগ্রহ কার্যμমকে আরাও গতিশীল ও কৃষকবান্ধব করতে হবে। ধান কাটার পর দুই মাস কোন ধরনের চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে না, এক্ষেত্রে বাজার পঞ্জিকা অনুসরণ করা প্রয়োজন। দেশে অভ্যন্তরীণ চালের চাহিদা, যোগান ও মজুদ পরিস্থিতির সামগ্রিক তথ্য সবার জন্য উন্মুক্ত এবং সহজপ্রাপ্য করতে হবে। দেশে চালের বাজার অস্থির হওয়ার পেছেনে ব্যবসায়ীদের অতিমুনাফার লোভ
দায়ী বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা অন্যদিকে ভোক্তা ও সাধারণ মানুষ মনে করছে, সরকারের সঠিক মনিটরিংয়ের ঘাটতিও রয়েছে। চালের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে ধানের দাম বেশির অজুহাত দিচ্ছেন ধান-চালের আড়তদার, ব্যবসায়ী ও মিল মালিকরা। আমরা মনে করি, দেশে খাদ্য উৎপাদন পরিস্থিতি সন্তোষজনক। তবে খাদ্যশস্যের ব্যবস্থাপনা ও বেসরকারী মজুদদারী অপতৎপরতা সন্তোষজনক নয়। খাদ্য মজুদ যথেষ্ট থাকলেও এবং ভরা আমন মৌসুম থাকলেও চালের মূল্য বৃদ্ধি অযৌক্তিক। এটার অনুসন্ধান করা এবং কারণ বের কওে প্রতিকার প্রয়োজন যাতে চালের বাজার স্থিতিশীল থাকে।