# সামেক হাসপাতালে প্রশাসনিক অনুমোদন হলেও অর্থ নেই
# চলমান রয়েছে ১ কোটি ১৫ লাখ টাকার তিনটি কাজ
# অফিস আদেশের ছয় মাস অতিবাহিত

এইচ এম আলাউদ্দিন ঃ অফিস আদেশের সাড়ে ছয়মাস অতিবাহিত হলেও খুলনা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেরামত, রক্ষণাবেক্ষণ, সংস্কার এবং অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য এখনও কোন অর্থ বরাদ্দ পায়নি স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। আবার সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ(সামেক) ও হাসপাতালের ক্ষেত্রে প্রশাসনিক অনুমোদন পাওয়া গেলেও মেলেনি অর্থ বরাদ্দ। কিন্তু প্রশাসনিক অনুমোদন পেয়েই এ পর্যন্ত প্রায় এক কোটি ১৫ লাখ টাকার কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। যার মধ্যে তিনটির কাজ এখন চলমান রয়েছে। কিন্তু অর্থ বরাদ্দ না হলে ওই কাজও থমকে যেতে পারে বলে আশংকা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের নির্মাণ অধিশাখার উপসচিব মুহাম্মদ শাহাদত খন্দকার স্বাক্ষরিত গত ৫ সেপ্টেম্বরের এক পত্রে বলা হয়, খুলনা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেরামত, রক্ষণাবেক্ষণ, সংস্কার এবং অবকাঠামো উন্নয়ন সম্পর্কিত যাবতীয় কাজ স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের মেইনট্যানেন্স খাতায় অন্তর্ভুক্ত করা হলো। উক্ত দু’টি হাসপাতালের পরিচালকের অনুরোধের প্রেক্ষিতে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলেও পত্রে উল্লেখ রয়েছে। আগে ওই দু’টি প্রতিষ্ঠানসহ দেশের বৃহৎ স্বাস্থ্য সেবা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উল্লিখিত কাজগুলো সম্পন্ন করতো গণপূর্ত অধিদপ্তর। অবশ্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এমন আদেশের পর থেকেই গণপূর্ত বিভাগ কাজগুলো তাদের আওতায় রাখতে বিভিন্নভাবে তদ্বির করতে থাকে বলে জনশ্রুতি রয়েছে। যার অংশ হিসেবে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান প্রধানদের কাছ থেকে লিখিত নেয়াসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকেও ডি.ও লেটার নিয়ে মন্ত্রণালয়ে জমা দেন। যার ফলে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ক্ষেত্রে প্রশাসনিক অনুমোদন হলেও খুলনা মেডিকেলের ক্ষেত্রে কিছুই হয়নি। আর প্রশাসনিক অনুমোদন না পাওয়ার কারণে খুমেক ও হাসপাতালের মেরামত, রক্ষণাবেক্ষণ, সংস্কার ও অবকাঠামোর কোন উন্নয়ন কাজ করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের(এইচইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী আশুতোষ কর্মকার। তিনি বলেন, প্রশাসনিক অনুমোদন পাওয়ার ফলে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ছাত্রী হোস্টেলের সীমানা দেয়াল নির্মাণ, ডাক্তার ডরমেটরীর(মহিলা ভবন) সীমানা দেয়াল নির্মাণ এবং বিদ্যমান সীমানা প্রাচীরের কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। যা এখনও চলমান রয়েছে। ওই তিনটি কাজের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৮ লাখ টাকা। এছাড়া ৪৬ লাখ টাকা মূল্যের আরও দু’টি কাজের জন্য ইতোমধ্যে টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। শীঘ্রই যার কার্যাদেশ দিয়ে কাজ শুরু করা হতে পারে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
এদিকে, তথ্য অধিকার আইনের আলোকে সম্প্রতি স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে আবেদন করা হলে তিনি জানান, উক্ত দু’টি প্রতিষ্ঠানের কাজের জন্য প্রশাসনিক অনুমোদন ও অর্থ বরাদ্দের কাজটি বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তিনি বলেন, খুলনা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের বিপরীতে প্রশাসনিক অনুমোদন ও অর্থ বরাদ্দ পাওয়া না গেলে কোন কাজ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না।
পক্ষান্তরে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের আওতায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সব কাজ হওয়া জরুরি বলে মনে করছেন ঠিকাদাররা। তাদের বক্তব্য হচ্ছে, যে মন্ত্রণালয়ের কাজ সেই মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বাস্তবায়ন না হলে জবাবদিহিতার বিষয়টি থাকে না। ঠিকাদার কল্যাণ সমিতির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান ইফতেখার চালু বলেন, স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর বা এইচইডি এখন অনেকটা স্বয়ংসম্পূর্ণ। ইতোমধ্যে এইচইডির মাধ্যমে যেসব ভবন নির্মাণ ও সংস্কার কাজ সম্পন্ন হয়েছে সেগুলো তার প্রমাণ বহন করে। বিশেষ করে সদ্য সমাপ্ত খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল অভ্যন্তরের দৃষ্টিনন্দন মাল্টিপারপাস ভবনটি জ¦লন্ত উদাহরণ। এছাড়া সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ গোপালগঞ্জসহ দেশের যেসব স্থানে এইচইডি কাজ করেছে সেগুলো প্রমাণ করে এখন আর দেশের কোন স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের কাজ অন্য কোন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সম্পন্ন করার প্রয়োজন নেই। খুলনার প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, যেহেতু এইচইডি অফিসটি খুমেক হাসপাতালের কাছেই অবস্থিত এজন্য এর ভালোমন্দ দেখভাল করার জন্য তাদের সুযোগ বেশি।
স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা এ প্রতিবেদককে বলেন, দেশে এইচইডির ৩০টি অফিস রয়েছে। অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী এসব অফিসের জনবল সংকট দূর করার চেষ্টা করছে সরকার। পর্যায়ক্রমে সকল অফিসে প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ দেয়ার মধ্যদিয়ে দেশের সকল স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের কাজ তাদের ওপর ন্যস্ত করা হবে এমন লক্ষ্য নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। সুতরাং একই মন্ত্রণালয়ের কাজ অন্য মন্ত্রণালয়ের আর করার প্রয়োজন হবে না। যেমনটি শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে এখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাজ করানো হচ্ছে তেমনি এইচইডির মাধ্যমেই দেশের সকল স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানগুলোর কাজ করানো হবে বলেও তিনি জানান।