স্টাফ রিপোর্টার ঃ পুরো নাম মোঃ নুরুল ইসলাম মৃধা। পিতা মৃত আনোয়ার হোসেন মৃধা। খুলনা মহানগরীর ছোট বয়রা এলাকার বাসিন্দা। ২০০৮ সাল থেকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আউটসোর্সিং কর্মচারী হিসেবে চাকরি করে আসছেন এই নুরুল ইসলাম। কিন্তু দীর্ঘ এক যুগ পর তিনি এখন বেকারত্বের জীবন কাটাচ্ছেন। ঠিকাদারকে কাংক্ষিত অর্থ প্রদান করতে না পারায় তিনি আজ বেকার। তার দু’টি কন্যা সন্তানের মধ্যে একটি এবার এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম এই ব্যক্তি এখন দিশেহারা চাকরি হারিয়ে। কেন তিনি বেকার, কিভাবে তার চাকরি গেল তা নিয়ে গতকাল রোববার কথা হয়েছিল নুরুল ইসলামের সাথে। তিনি জানালেন তার বেদনার কথা।
নুরুল ইসলাম জানান, ২০০৮ সালে মেসার্স খান এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আউটসোর্সিং কর্মচারী হিসেবে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি যোগদান করেন। প্রথমে বেতন ছিল আড়াই হাজার টাকা। ধীরে ধীরে বেতন বর্ধিত হয়ে আজ পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত বেতন পাচ্ছিলেন নূরুল ইসলামসহ আরো ৩০জন আউটসোর্সিং কর্মচারী। কিন্তু সম্প্রতি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং সরকারের নীতিনির্ধারণী মহলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হাসপাতালে নতুন নিয়মে আউটসোর্সিং কর্মচারী নিয়োগের প্রস্তুতি নেয়া হয়। ওই সিদ্ধান্তের আলোকে নতুন ঠিকাদার নিয়োগের জন্য ক্ষমতাসীন দলের এক ব্যক্তির ইন্ধনে একটি সিকিউরিটি কোম্পানি কাজ বাগিয়ে নেয়ার কর্মসূচি হাতে নেয়। নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখে ওই প্রতিষ্ঠানটি শেষ পর্যন্ত আউটসোর্সিং কর্মচারী নিয়োগের ঠিকাদারি পায়। এরপর থেকেই ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বাণিজ্য শুরু হয়। এক পর্যায়ে দীর্ঘ ১২ বছর ধরে চাকরি করা ৩০ জন আউটসোর্সিং কর্মচারী হাসপাতালে অভিভাবক পরিচালকের দ্বারস্থ হয়। কিন্তু পরিচালক সাফ জানিয়ে দেন তাদের চাকরি পেতে হলে নয়া ঠিকাদারের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। নয়া ঠিকাদারের পরিচালক হিসেবে তখন তারা চেনেন মোঃ আরিফুজ্জামান নামের এক ব্যক্তিকে। তারা আরিফের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি নুরুল ইসলামসহ সকলের কাছে তিন লক্ষ টাকা দাবি করেন। ওই ৩০জনের মধ্য থেকে যারা আরিফকে অধিক টাকা দিতে পেরেছেন তাদের চাকরি হয়েছে। কিন্তু হতভাগা নুরুল ইসলাম মাত্র দেড় লাখ টাকা তাকে দিলেও তার চাকরি হয়নি। এমনিভাবে মাছরাঙ্গা সিকিউরিটি সার্ভিসেস লিমিটেডের পক্ষ থেকে হাসপাতলে মোট ২০৭জন কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হয়। প্রতিটি নিয়োগেই স্বাক্ষর রয়েছে মাছরাঙ্গা সিকিউরিটি সারভিসেস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ ফারুক হোসেন হেমায়েতের। যদিও ফারুক হোসেন হেমায়েত দাবি করেন এই টাকা-পয়সা লেনদেনের সাথে তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। বরং আরিফ নামের ওই ব্যক্তি তাকে জিম্মি করে তার কাছ থেকে প্যাড নিয়ে তাতে স্বাক্ষর করিয়ে নিয়ে বিভিন্ন লোককে চাকরি দিয়েছেন।
সর্বশেষ এক তথ্যে জানা গেছে, গত শনিবার থেকে আরিফ নামের ওই ব্যক্তিকে হাসপাতাল থেকে এবং মাছরাঙ্গা ও কন্টাক্ট ক্লিনিং কোম্পানি থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে মাছরাঙ্গা সিকিউরিটি সার্ভিসেস প্রাইভেট লিমিটেড এবং কন্টাক্ট ক্লিনিং এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ ফারুক হোসেন হেমায়েত বলেন, তার প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে তিনি ছাড়া অন্য কোন ব্যক্তি কারো কাছ থেকে অবৈধ সুবিধা গ্রহণ করে থাকলে তার দায়ভার তিনি গ্রহণ করবেন না।