স্টাফ রিপোর্টার ঃ করোনাভাইরাসের ঊর্ধ্বমুখী গতি যেন কমছেইনা খুলনাঞ্চলে। বিভাগে প্রতিদিনই বাড়ছে শনাক্তের হার ও মৃত্যুর সংখ্যা। গতকালও খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে মৃত্যু হয়েছে পাঁচজনের। এছাড়া বিগত ২৪ ঘন্টার হিসাব দিয়ে গতকাল সকালে জানানো হয়, খুলনা জেনারেল হাসপাতালে একজন এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনজন অর্থাৎ মোট চারজনের মৃত্যু হয়। আবার খুলনা সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের সূত্রটি বলছে আগের ২৪ ঘন্টায় খুলনা জেলায় মৃত্যু হয়েছে নয় জনের।
খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা: রাশেদা সুলতানা বলেন, বিগত ২৪ ঘন্টায়ও বিভাগের ১০ জেলায় ৯৯৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। অথচ ওই সময়ে সুস্থ্য হয় ৩২১জন। তিনি বলেন, এ নিয়ে এ পর্যন্ত বিভাগে করোনা শনাক্ত হয় ৪৬ হাজার ৯৭৫ জনের। আর সুস্থ্য হয়েছেন ৩৪ হাজার ৯৪৮জন। এছাড়া বিগত ২৪ ঘন্টায় বিভাগে মৃত্যু হয়েছে ২৭ জনের। এ নিয়ে বিভাগের মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৬৪জন।
খুমেক’র করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের সূত্রটি বলছে, সোমবার দিবাগত রাত ১২টা ৫৩ মিনিট থেকে গতকাল মঙ্গলবার বেলা আড়াইটার মধ্যে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে রাত ১২টা ৫৩ মিনিটে মৃত্যু হয় বাগেরহাটের মংলার সামছুর রহমান রোডের বাসিন্দা বাদশা মিয়ার স্ত্রী লাকী বেগম(৫০) এর। করোনায় আক্রান্ত হলে তাকে ওই রাতেই হাসপাতে ভর্তি করা হয়।
সোমবার দিবাগত রাত একটা ১০ মিনিটে মৃত্যু হয় নগরীর সোনাডাঙ্গা আবাসিক এলাকার দ্বিতীয় ফেজের বাসিন্দা মরহুমর কাজী আনোয়ার হোসেনের পুত্র কাজী মারুফুর রহমান(৭৫)এর। তাকেও ওই রাতে এ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।
নড়াইল সদর থানাধীন গোবরা এলাকার বাসিন্দা মৃত উপেন্দ্র নাথ সাহার পুত্র নির্মল কান্তি সাহা(৭৯)এর মৃত্যু হয় গতকাল মঙ্গলবার সকাল নয়টা ১০ মিনিটের দিকে। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর গত ৫ জুন তাকে এ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।
বাগেরহাটের রামপাল উপজেলা এলাকার বাসিন্দা আমির হোসেন শেখের পুত্র আফজাল হোসেন শেখ(৬১) মৃত্যুবরণ করেন গতকাল সকাল সাড়ে নয়টার দিকে। তাকেও এ হাসপাতালের রেডজোনে ভর্তি করা হয়েছিল গত ৫ জুন।
এছাড়া গতকাল দুপুর ২টা ৩৫ মিনিটের সময় মৃত্যু হয় যশোরের বাঘারপাড়ার ছোট বাগড়া এলাকার বাসিন্দা আলতাফ গাজীর স্ত্রী ভানু বেগমের(৬০)। তাকে এ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল গত ১৫ জুন।
এছাড়া খুলনার গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা: গাজী মিজানুর রহমান গতকাল সকাল ১০টায় জানান, বিগত ২৪ ঘন্টায় ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনজনের মৃত্যু হয়। এদের মধ্যে একজন নগরীর গোবরচাকা এলাকার বাসিন্দা নুরুদ্দিন(৩১), একজন নগরীর সাতরাস্তা মোড়ের বাসিন্দা ফিরোজা বেগম(৫২) এবং একজন যশোরের মনিরামপুরের বাসিন্দা বিজয় কুন্ডু(৬৭)।
নগরীর গোবরচাকা এলাকার শেখ মো: নরুদ্দিন বিগত ২৭দিন ধরে এ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। সোমবার বিকেলে তার মৃত্যু হয়। নুরুদ্দিন খুলনার বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন। তার পাঁচ বছর বয়সী একটি পুত্র সন্তান এবং ১৪ মাস বয়সী একটি কন্যা সন্তান রয়েছে বলে তার বড়ভাই এসএম আমিনুল ইসলাম জানিয়েছেন।
অপরদিকে, ৭০ শয্যা বিশিষ্ট খুলনা জেনারেল হাসপাতালের করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের মুখপাত্র ডা: কাজী আবু রাশেদ বলেন, সোমবার রাত তিনটার দিকে ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একজনের মৃত্যু হয়। তার নাম শেখ মোশাররফ হোসেন(৭৬)। তিনি যশোরের অভয়নগর থানাধীন নওয়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা।
খুমেক ল্যাবে শনাক্ত ২২৪ ঃ খুলনা মেডিকেল কলেজের আরটি পিসিআর ল্যাবে গতকাল ৫৬৪টি নমুনা পরীক্ষার পর গতকাল মঙ্গলবার ২২৪ জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে খুলনার ১৮৪জন, বাগেরহাটের ২৭জন, সাতক্ষীরার একজন, যশোরের সাতজন, পিরোজপুরের তিনজন, গোপালগঞ্জের একজন এবং চুয়াডাঙ্গার একজন রয়েছেন বলে খুমেক’র উপাধ্যক্ষ ডা: মো: মেহেদী নেওয়াজ জানিয়েছেন।