/ খুলনায় আত্মহত্যার প্রবণতা উদ্বেগজনক

খুলনায় আত্মহত্যার প্রবণতা উদ্বেগজনক

নিহতের ৮০শতাংশ তরুণ ও যুবক

রঞ্জু আহমদ: খুলনায় আত্মহত্যা থামছেই না। দুশ্চিন্তা, পারিবারিক কলহ, বেকারত্ব, প্রেমঘটিত কারণে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে অনেকেই। আত্মহননকারীদের মধ্যে শতকরা ৮০ শতাংশ তরুন ও যুবক। যাদের অধিকাংশই শিক্ষার্থী। গেল ১০ মাসে খুলনায় অন্তত: ৬৫ জনের আত্মহত্যার তথ্য রয়েছে পুলিশের কাছে। আত্মহত্যা রোধে পারিবারিকভাবে কাউন্সিলিংয়ের পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষষজ্ঞরা।

চলতি বছরের ৯ জুন মাহফুজা আফরিন (২৩) নামের এক ছাত্রী ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নগরের লবণচরা থানার জিন্নাপাড়া এলাকার নিজ বাসা থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। তিনি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ডিসিপ্লিনের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। মৃত্যুর তিনি একটি নোট লিখে যান। সেখানে আফরিন লেখেন, ‘মিথ্যা বলতে বলতে জীবনের এমন একটা পর্যায়ে আছি যে সুইসাইড নোটেও মিথ্যা লিখে যাওয়া শ্রেয় মনে হয়। পাছে কেউ যদি সেটা পড়ে হাঁসে। খারাপ লাগবে তো নাকি।’

চলতি বছরের ১৯ আগস্ট নগরীর বয়রা এলাকার পাঁচতলা একটি ভবন (মেস বাসা) থেকে তিসা (১৯) নামের এক কলেজছাত্রীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তিসা সরকারি বয়রা মহিলা কলেজের ছাত্রী। তার বাড়ি যশোর জেলার অভয়নগর উপজেলায়। মৃত্যুর আগে চিরকুটে লিখে-‘বাবা-মা আমাকে ক্ষমা করে দিও।’

পুলিশের কারও ওপর অভিমান করেই সে আত্মহত্যার মত পথ বেছে নিয়েছে শুধু তিসা বা আফরিন নয়। গত এক মাসে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আত্মহত্যার মত ঘটনা নিয়ে এসেছে ৩৬টি। এই তালিকায় খুলনা মহানগর এবং জেলাসহ জেলার বাইরের ঘটনাও রয়েছে।

এ বিষয়ে সরকারি সুন্দরবন কলেজের মনোবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রকাশ চন্দ্র অধিকারী বলেন, জীবনের একটি পর্যায়ে এসে সন্তানরা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। এ সময় তাদের পারিবারিকভাবে যেমন খেয়াল রাখা প্রয়োজন তেমনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও কাউন্সিলিং সেন্টার তৈরি করে সেবা দেয়া প্রয়োজন।

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের দেওয়া তথ্য মতে, খুলনা মহানগরী এলাকায় চলতি বছরের গত ১০ মাসে ৬৫ জন আত্মহত্যা করেছে। এরমধ্যে ৫২ জনের বয়স ৩০ বছরের নিচে। যাদের মধ্যে ৪০ জন মেয়ে। মৃত্যুর কারণ এবং অবস্থান পর্যালোচনায় দেখা গেছে বেশিরভাগ আত্মহননকারীর মধ্যে এক ধরনের হতাশা কাজ করতো। যাদের মধ্যে কেউ বেকারত্ব নিয়ে হতাশ ছিলো। কেউ কেউ পড়াশোনায় পরিবারের প্রত্যাশা পুরণ করতে পারেনি। ভয় শঙ্কা এবং সামাজিক মর্যাদায় ছোট হওার ভয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। এছাড়াও ঋন থেকে সামাজিক মুক্তির জন্য অনেকেই আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে।

গত ৩১ আগস্ট ডুমুরিয়ায় মণেশ মন্ডল নামে এক স্কুল শিক্ষক আত্মহননের পথ বেছে নেন। অনলাইন জুয়ার ফাঁদে পড়ে জীবনের সর্বস্ব খুইয়ে ফেলেন তিনি। এরপর ঋণ থেকে বাঁচতে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন।

আত্মহত্যার কারণ নিয়ে মনরোগ বিশেষজ্ঞ খুলনা মেডিকেল কলেজ হাপাতালের বিভাগীয় প্রধান ডা. সাইফুল ইসলাম রাজু বলেন, বিশ্বে প্রতি ৪০ সেকেন্ডে একজন করে আত্মহত্যা করে। দেশে ৪০ মিনিটে একজন আত্মহত্যা করে। দেশের মৃত্যুর তৃতীয় প্রধান কারণ আত্মহত্যা। আত্মহত্যায় বাংলাদেশ বিশ্বে দশম। দেশের মোট আত্মহত্যার ১৫ শতাংশ স্কুল শিক্ষার্থী। মনের ওপর চাপ তৈরি থেকে এই ঘটনা ঘটায় মানুষ। এর জন্য প্রয়োজন পারিবারিক শিক্ষা ও সামাজিক বন্ধন।

বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা খুলনার সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট মোমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আত্মহত্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। এ ক্ষেত্রে সচেতনতা ও মানসিক শক্তি বৃদ্ধিতে উদ্যোগ নিতে হবে। যে কোনো সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানে পদক্ষেপ নিলে এ প্রবণতা হ্রাস পাবে।’