/ খুলনায় মাত্র ঘণ্টাখানেকের বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা, স্থবির জনজীবন

খুলনায় মাত্র ঘণ্টাখানেকের বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা, স্থবির জনজীবন

সিটি কর্পোরেশনের কোটি টাকার প্রকল্প প্রশ্নবিদ্ধ, নাগরিকদের ক্ষোভ

খুলনা শহরে আবারও বৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গে নেমে এসেছে জলাবদ্ধতার দুর্যোগ। মঙ্গলবার (১৭ জুন) সকাল ৮টার পর থেকে শুরু হওয়া মাত্র এক ঘণ্টার টানা ভারী বর্ষণে নগরীর রাজপথ ও গলিপথ ডুবে যায় পানির নিচে। এর আগে রাতভর থেমে থেমে বৃষ্টিও হয়েছিল। ফলে সকাল থেকে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি অফিসগামী মানুষ, স্কুল ও কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থীসহ সাধারণ নাগরিকরা পড়েন চরম দুর্ভোগে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নগরীর রূপসা, লবণচরা, খানজাহান আলী, গল্লামারী, সোনাডাঙ্গা, শিববাড়ী, নিরালা, মজিদ সরণি, দৌলতপুর এবং বরাবরের মত সবচেয়ে বেশি জলাবদ্ধ হয়েছে রয়েল মোড় এলাকা। হাঁটু সমান পানিতে চলাচল করছেন মানুষ। অনেক অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল অচল হয়ে পড়ে গেছে। গণপরিবহন চলাচল ব্যাহত হওয়ায় সকাল থেকে ভোগান্তিতে পড়েছেন হাজারো যাত্রী।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. হায়দার আলী জানান, “এটা নতুন কিছু নয়। প্রতিবছর বর্ষা এলেই খুলনার রাস্তাগুলো পানিতে তলিয়ে যায়। সিটি কর্পোরেশন শুধু উন্নয়নের গল্প শোনায়, কাজের অগ্রগতি নেই।”

নগরবাসীর অভিযোগ, খাল ও ড্রেনের ওপর নির্মাণ, অপরিকল্পিত রাস্তা ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা এবং দুর্নীতির কারণে সিটি কর্পোরেশনের নেয়া প্রকল্পগুলো কার্যকর হচ্ছে না।

খুলনা সিটি কর্পোরেশন সূত্র জানায়, গত ৫ বছরে নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে বিভিন্ন প্রকল্পে প্রায় ১৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বিশ্বব্যাংক ও এডিবির সহায়তায় ‘ড্রেনেজ উন্নয়ন প্রকল্প’, জলাবদ্ধতা নিরসন ও সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পসহ আরও বেশ কিছু উদ্যোগ। তবে বাস্তবে এসব প্রকল্পের কাজ অসম্পূর্ণ, ধীরগতির, এবং কোথাও কোথাও নিম্নমানের হওয়ায় জলাবদ্ধতা কমার পরিবর্তে বরং দিনদিন বেড়েই চলেছে।
বৃষ্টির পানির দ্রুত নিষ্কাশনের জন্য কিছু প্রকল্প চলমান রয়েছে। তবে কিছু এলাকায় অবৈধ দখল ও সড়ক সংস্কার কাজের কারণে পানিনিষ্কাশনে সমস্যা হচ্ছে।

নাগরিক সমাজের নেতা এড.বাবুল হাওলাদার বলেন, “খুলনা শহরের জলাবদ্ধতা শুধুই বৃষ্টির জন্য নয়, এটি মূলত একটি পরিকল্পনাহীন নগর ব্যবস্থাপনার ফল। খাল-ড্রেনের দখল, খনন না করা, প্লাস্টিক বর্জ্যে ড্রেন বন্ধ হওয়া, উন্নয়ন প্রকল্পের অসম্পূর্ণতা—সব মিলিয়ে এটি একটি নীতিগত ব্যর্থতা।”
জলাবদ্ধতার ফলে স্কুলগামী শিশুদের জুতা হাতে পানি পার হতে দেখা গেছে। পানি ঢুকে দোকানপাট ও ব্যবসায় ক্ষতি হয়েছে। অনেকেই পানি জমে থাকায় ঘর থেকে বের হতে পারেননি। এছাড়া বৃষ্টির পানিতে বর্জ্য মিশে যাওয়ায় সৃষ্টি হয়েছে স্বাস্থ্যঝুঁকি।