লটারীর মাধ্যমে তৃতীয়
শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষা

এইচ এম আলাউদ্দিন ঃ ছাত্রীর নাম এক এক জায়গায় এক এক রকম হলেও পিতা-মাতা উভয়ের নাম একই। তবে জন্ম নিবন্ধন নম্বরও ভিন্ন ভিন্ন। এমন এক শিক্ষার্থী খুলনা সরকারি করোনেশন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষায় এবার উত্তীর্ণ হয়েছে। লটারীর মাধ্যমে ভর্তির কারণে এমন প্রতারণার আশ্রয় নেয়ার সুযোগ পাওয়া গেলো বলেও মনে করছেন কোন কোন অভিভাবক। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় লটারীর ফলাফল প্রকাশের পর বিষয়টি দ্রুত সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এটি নিয়ে বেশ সমালোচনার ঝড় ওঠে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, খুলনার ১১টিসহ দেশের ৫৫৫টি সরকারি স্কুলে তৃতীয় শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয় গতকাল বিকেল পাঁচটার পর। লটারির মাধ্যমে কেন্দ্রীয়ভাবে ঘোষিত ওই ফলাফলে দেখা যায়, মাত্র দু’টি ছবি ব্যবহার করে একটি মেয়ে করোনেশনের প্রাত:শাখায় আট জায়গায় এবং দিবা শাখায় এক জায়গায় অর্থৎ মোট নয় স্থানে চান্স পেয়েছে। মেয়েটির পিতার নাম দেয়া হয় অনিরুদ্ধ সরদার ও মায়ের নাম নিপা রায়। ছাত্রীর নাম কোথাও অনিন্দিতা সরদার আশি কোথাও অংকিতা সরদার নির্ঝ আবার কোথাও অংকিতা সরদার আশি দেয়া হয়। এভাবে ভিন্ন ভিন্ন নাম ও ভিন্ন জন্ম নিবন্ধন নম্বর ব্যবহার করা হয় আবেদন ফরমে।
প্রাত:শাখার ফলাফল সীটের সিরিয়াল নম্বর ১৯, ৩২, ৩৭, ৮১, ৮২, ৯০, ৯৩ ও ১০৮ নম্বর এবং দিবা শাখার সিরিয়াল নম্বর ২৫ এ ওই ছাত্রীর নাম রয়েছে। অর্থাৎ ঘোষিত ফলাফল সীটে দেখা যায় অংকিতা নামের ওই ছাত্রী শুধুমাত্র করোনেশনেই প্রাত:শাখায় আট স্থানে ও দিবা শাখায় এক স্থানে অর্থাৎ মোট নয় স্থানে চান্স পেয়েছে নামের কিছুটা ভিন্নতা ও জন্ম নিবন্ধন ভিন্ন ভিন্ন ব্যবহার করে।
এছাড়া পিতা-মাতার মোবাইল নম্বরও ব্যবহার করা হয় দু’টি। এক জায়গায় মোবাইল নম্বর দেয়া হয় ০১৩১১-৩৩৩০২১ আবার অপর ফরমে নম্বর দেয়া হয় ০১৭৮৮-৬৫৬৬৪৪। যদিও গতরাতে এ ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর উক্ত দু’টি নম্বরে রিং করে প্রথম নম্বরটি বন্ধ পাওয়া গেলেও ০১৭৮৮-৬৫৬৬৪৪ নম্বরের মোবাইলটি রিসিভ করে নিজের নাম নিপা বললেও তার মেয়ে করোনেশন স্কুলে ৫ম শ্রেণিতে পড়ে বলে জানান। তবে তার মোবাইলটি কিভাবে ভর্তির ফরমে আসলো সে সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না বলে জানান। অবশ্য তার ৫ম শ্রেণির মেয়েটি নগরীর মির্জাপুর রোডের একটি কোচিং সেন্টারে পড়ে বলেও তিনি জানান।
গতরাতে স্কুল গেটে ফলাফল টানানোর পর বিষয়টি কৌতুহলী অভিভাবকদের দৃষ্টিতে আসে। একই মেয়ে ভিন্ন নামে একাধিক ফরম পূরণ করে ভর্তি পরীক্ষার লটারীতে অংশ নেয়ার ফলে এমনটি হয়েছে উল্লেখ করে উপস্থিত অভিভাবকরা বলেন, এর ফলে অন্যান্য শিক্ষার্থীরা ভর্তির সুযোগ বঞ্চিত হলো। তাছাড়া যেসব অভিভাবক এমনটি করেছেন তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেয়ারও দাবি জানান অনেকে। কেউ কেউ বলেন, এভাবে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের দুর্নীতির শিক্ষা দিয়ে ভর্তির সুযোগ করে দেয়ায় প্রকারান্তরে ওই শিক্ষার্থীর উজ্জল ভবিষ্যৎ নষ্ট করারই শামিল। এর সাথে শুধু যে ওই অভিভাবক জড়িত তাই নয়, বরং এর সাথে সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলর অফিসের যে বা যারা একাধিক জন্ম নিবন্ধন দিয়ে সহযোগিতা করেছেন তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া উচিত। একই ব্যক্তির নামে একাধিক জন্ম নিবন্ধন কিভাবে দেয়া হলো সেটিও খতিয়ে দেখার দাবি তোলেন সচেতন অভিভাবকরা।
এ ব্যাপারে খুলনার জেলা প্রশাসক ও তৃতীয় শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষা কমিটির সভাপতি খন্দকার ইয়াসির আরেফীন বলেন, বিষয়টি তিনি গতকাল সন্ধ্যায়ই শুনেছেন। এ ব্যাপারে তদন্ত সাপেক্ষে দায়ীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। অবশ্য কোমলমতি শিক্ষার্থীদের নিয়ে এমনটি করা উচিত নয় বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
ভর্তি কমিটির সদস্য সচিব ও খুলনা জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক ফারহানা নাজ বলেন, এটি একটি বাজে দৃষ্টান্ত হয়ে গেলো। এখনই এ ব্যাপারে দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ না নেয়া হলে আরও অনেক অভিভাবক উৎসাহী হবে। সুতরাং যে কোন মূল্যে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে। এছাড়া আরও কোন স্কুলে এমন ঘটনা ঘটেছে কি না সেগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জেলা প্রশাসকের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে আজ(মঙ্গলবার) একটি ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও তিনি জানান।
খুলনা সরকারি করোনেশন বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাকামী মাকসুদা বলেন, বিষয়টি আজকের খুলনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের মিটিংয়ে জেলা প্রশাসককে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে। এছাড়া এটি তিনি আজ মঙ্গলবার মাধ্যমিক ও শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককেও জানাবেন। এরপর উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের আলোকেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
খুলনার জিলা স্কুল, সরকারি করোনেশন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, খুলনা সরকারি বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়(মন্নুজান স্কুল), খুলনা গভ: ল্যাবরেটরী স্কুল, খুলনা সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ইকবাল নগর সরকারি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, বয়রা সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়, এ এইচ দেলদার আহমেদ সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সালাহউদ্দিন ইউসুফ সরকারি মধ্যমিক বিদ্যালয়সহ খুলনার ১১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষার লটারীর ফলাফল গতকাল প্রকাশ করা হয়। খুলনার ১১টিসহ দেশের ৫৫৫টি বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল গতকাল দুপুর ২টায় একযোগে প্রকাশের কথা থাকলেও অনলাইনে ফলাফল পাওয়া যায় বিকেল পাঁচটার পর। ফল প্রকাশের পর শুধুমাত্র করোনেশন স্কুলে এক ছাত্রীর নয় স্থানে চান্স পাওয়ার চিত্র দেখা গেলেও অন্যান্য স্কুলের ক্ষেত্রে এমনটি ঘটেছে কি না সেটি গতরাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
মনিরামপুরে গার্লস্ স্কুলে চান্স পেলো ছাত্র ঃ খুলনার অন্য কোন স্কুলের আর কোন অনিয়ম চিত্র না পাওয়া গেলেও গতকাল আমাদের মনিরামপুর(যশোর) অফিস প্রধান মো: মনিরুজ্জামান জানান, মণিরামপুর সরকারী বালিকা বিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলে একজন ছাত্রের নাম প্রকাশিত হয়েছে। এ ঘটনায় এলাকাবাসীর মাঝে মুখরোচক আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
লটারীর মাধ্যমে সোমবার সন্ধ্যায় মণিরামপুর সরকারী বালিকা বিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলের তালিকা প্রকাশিত হয়। এতে ৬ষ্ট শ্রেণীতে ৬০জন শিক্ষার্থীর নাম প্রকাশিত হলেও ৫৫ নং ক্রমিকে আব্দুল আহাদের নাম প্রকাশিত হয়। আব্দুল আহাদ পৌরসভার তাহেরপুর গ্রামের আব্দুল কাদেরের পুত্র। সে প্রভাতী বিদ্যাপীঠ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র।
গার্লস্ স্কুলে চান্স পাওয়া আব্দুল আহাদ জানায়, সে তার স্কুলের প্রধান শিক্ষক মাকসুদুর রহমান মাসুদের মাধ্যমে মণিরামপুর সরকারী পাইলট উচ্চ বালক বিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য আবেদন করে। কিন্তু তার ভর্তির অনুমতি হয়েছে মণিরামপুর সরকারী বালিকা বিদ্যালয়ে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার কবীর হোসেন পলাশ জানান, কম্পিউটারে মিসটেক হতে পারে। তিনি তদন্ত করে এ ব্যাপারে পরবর্তী ব্যবস্থা নেবেন বলেও উল্লেখ করেন।