# আবু নাসেরে প্রথম দিনে ১৮ রোগী ভর্তি

স্টাফ রিপোর্টার ঃ খুলনার করোনা রোগীদের জন্য গতকাল শনিবার ছিল সংকটময় একটি দিন। একদিকে হাসপাতালে শয্যা নেই অপরদিকে পরীক্ষা না করতে পারায় রোগী ছেড়েও দেয়া যাচ্ছে না। এজন্য অনেকে এ হাসপাতাল, ও হাসপাতাল ঘুরেও ব্যর্থ হয়ে রোগী নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন এমন চিত্রও দেখা গেছে। কেউ কেউ আবার একমাত্র বেসরকারি হাসপাতাল গাজী মেডিকেল থেকে পরীক্ষা করিয়ে ভর্তি করানোর চেষ্টা করেছেন আবু নাসের বা জেনারেল হাসপাতালে।
এদিকে, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও জেনারেল হাসপাতালের পর গতকাল থেকে করোনা ইউনিটে রোগী ভর্তি শুরু করেছে শহীদ শেখ আবু নাসের হাসপাতালে। প্রথম দিনেই ভর্তি হয় ১৮জন রোগী। এর মধ্যে চারজনকে রাখা হয় আইসিইউতে। বাকী ১৪জনকে রেডজোনে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, গত বুধবার খুলনা মেডিকেল কলেজের আরটি পিসিআর ল্যাবে জীবানুর সংক্রমন হওয়ায় বৃহস্পতিবার থেকে খুলনা বিশ^বিদ্যালয়ের ল্যাবে পরীক্ষা শুরু হয়। তবে সেখানে একদিনে সর্বোচ্চ ৯৪টি নমুনা পরীক্ষা করতে পারায় প্রথম দিন ৯১টি ও দ্বিতীয় দিন ৮০টি নমুনা পরীক্ষা হয়। এসব নমুনা সাধারণ রোগীদের জন্য নয়, বরং যারা দু’টি সরকারি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন তাদের জন্য। কেননা তাদের পরীক্ষা আগে না করা হলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয় সম্ভভ নয়। এজন্য তাদেরকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে খু’বি ল্যাব থেকে পরীক্ষা করানো হচ্ছিল। কিন্তু তৃতীয় দিনে এসে গতকাল শনিবার থেকে খুবি’র ল্যাবেও পরীক্ষা বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে খুলনার যে দু’টি সরকারি হাসপাতালে রোগী ভর্তি ছিল তাদের কাউকেই গতকাল ছাড়পত্র দেয়া যায়নি। এজন্য রোগীর সংখ্যা আরও বাড়তে থাকে। তাছাড়া নমুনা পরীক্ষা না করতে পারায় গতকাল থেকে আবু নাসের হাসপাতালে রোগী ভর্তি শুরু হলেও সেখানেও ভর্তির সুযোগ ছিল সীমিত। কেননা আবু নাসের ও জেনারেল হাসপাতালে কোন ইয়োলো জোন নেই যে, সেখানে উপসর্গের রোগী ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়া হবে। এজন্য আগে দরকার পরীক্ষা ও শনাক্ত হওয়া। তা না হলে ওই দু’টি হাসপাতালে ভর্তি করা যাচ্ছে না।
খুলনা মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ ডা: মো: মেহেদী নেওয়াজ বলেন, গতকাল খুলনা বিশ^বিদ্যালয়ের ল্যাবে নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানোর প্রস্তুতির আগেই জানা গেলো যে, সেখানের বায়োসেফটিক ল্যাবের আল্ট্রা ভায়োলেট লাইট নষ্ট হয়ে গেছে। এজন্য সেখানে গতকাল কোন নমুনা পাঠানো হয়নি।
আবার খুলনা মেডিকেলের পিসিআর ল্যাবে গতকাল পরীক্ষামূলক নমুনা দেয়া হলেও তা’ সাপোর্ট করেনি। আজ রোববার আবারো পরীক্ষামূলক নমুনা পরীক্ষার পর সফল হলে আগামীকাল সোমবার থেকে এ ল্যাবে পরীক্ষা শুরু করা যাবে।
খুলনা মেডিকেলে ৬ জনের মৃত্যু ঃ খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আওতাধীন ১৩০ শয্যা বিশিষ্ট করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল শনিবার তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টা থেকে গতকাল শনিবার বিকেল তিনটা ৫০ মিনিট পর্যন্ত ওই ছয়জনের মৃত্যু হয়। এরা হলেন, খুলনার ডুমুরিয়ার বেতাগ্রাম এলাকার মোশাররফ হোসেন(৬৩), নগরীর দৌলতপুরের দেয়ানা এলাকার বাসিন্দা মিসেস বেগম(৫০), নগরীর ডাকবাংলা এলাকার বাসিন্দা ইলিয়াস ফকির(৬০), খানজাহান আলী রোডস্থ শেখ ওহিদুজ্জামান(৫৮), নিরালার হায়দার আলী(৫৫) ও দোলখোলার আনোয়ারা বেগম(৬২)।
এ হাসপাতালের মুখপাত্র ডা: সুহাস রঞ্জন হালদার বলেন, গতকাল সকালে এখানে ২১৩জন রোগী ভর্তি ছিল। এর মধ্যে রেডজোনে ছিল ১১৩জন, ইয়োলো জোনে ছিল ৬০জন, এইচডিইউতে ২০জন এবং আইসিইউতে ২০জন ভর্তি ছিল।
কমে গেলো পরীক্ষা ঃ খুলনা মেডিকেল কলেজের আরটি পিসিআর ল্যাব বন্ধ থাকায় খুলনায় করোনার নমুনা পরীক্ষার হারও কমে গেছে। গতকাল সকালে খুলনার সিভিল সার্জন অফিসের দেয়া তথ্য মোতাবেক বিগত ২৪ ঘন্টায় জেলায় মোট নমুনা পরীক্ষা হয় ১৮০টি। এর মধ্যে শনাক্ত হয় ৭৪জনের। অর্থাৎ পিসিআর ল্যাব বন্ধ থাকায় আগের দিনের খুবি ল্যাবে ৮০টি ও অন্যান্য কেন্দ্রের এন্টিজেন পরীক্ষা হয় একশ’টি।
এছাড়া বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক দপ্তরের হিসাব মোতাবেক বিগত ২৪ ঘন্টায় বিভাগের ১০ জেলায় ৫৩৯জনের করোনা শনাক্ত হয়। এ নিয়ে বিভাগে মোট শনাক্ত হয় ৫৯ হাজার ২৬০জনের। এছাড়া বিভাগে বিগত ২৪ ঘন্টায় ৩২জনের মৃত্যু হয় উল্লেখ করে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দেখানো হয় এক হাজার ১৬৮জন।
আবু নাসেরে প্রথম দিনে ১৮ভর্তি ঃ শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে গতকাল সকাল ১০টা থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে রোগী ভর্তি শুরু হয়। এসময় ভার্চুয়ালি রোগী ভর্তি কার্যক্রম উদ্বোধন করেন, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান। হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা: এসএম মোর্শেদ ও করোনা ইউনিটের মুখপাত্র ডা: প্রকাশ চন্দ্র দেবনাথ এসময় প্রতিমন্ত্রীর সাথে যুক্ত ছিলেন। গতকাল রাত আটটা পর্যন্ত এ হাসপাতালে ১৮জন রোগী ভর্তি হয় উল্লেখ করে মুখপাত্র বলেন, এর মধ্য থেকে চতুর্থ তলার আইসিইউতে রাখা হয় চারজনকে। বাকী ১৪জনকে নিচতলার রেডজোনে রাখা হয়েছে।
অবশ্য শুরুতে গতকাল সকালে ৪৬জন রোগী ভর্তির জন্য নাম লেখায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর মধ্যে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে শুধুমাত্র যাদের করোনা শনাক্তের সনদ আছে তাদেরকেই ভর্তি করা হয়। এখন থেকে করোনা শনাক্ত সনদপত্র নিয়ে আসলেই রোগী ভর্তি করা হবে। তবে আইসিইউসহ ৪৫ বেড পূর্ণ হলে বেড খালি হওয়া সাপেক্ষেই রোগী ভর্তি করা হবে। যেমনটি খুলনা জেনারেল হাসপাতালে হচ্ছে।
পরিপূর্ণ জেনারেল হাসপাতাল ঃ খুলনা জেনারেল হাসপাতালে রোগী ভর্তির দিন থেকে শুরু করে এই প্রথম পরিপূর্ণ হলো ৭০টি বেড। গতকাল সকালে ওই হাসপাতালে ৭০জন রোগী ভর্তি ছিল বলে হাসপাতালের মুখপাত্র ডা: কাজী আবু রাশেদ জানান। গতকাল সকালে তিনি বলেন, বিগত ২৪ ঘন্টায় ওই হাসপাতালে একজনের মৃত্যু হয়েছে। তার নাম আলেয়া বেগম(৬৫) এবং তিনি যশোর সদর থানাধীন বারান্দিপাড়ার বাসিন্দা।