স্টাফ রিপোর্টার ঃ খুলনার কয়রা উপজেলায় একই পরিবারের তিন সদস্যকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। উপজেলার বাগালী ইউনিয়ন পরিষদের পাশের একটি পুকুর থেকে গতকাল সকালে ওই তিনজনের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। দুর্বৃত্তরা হত্যা করে মরদেহ তাদেরই পুকুরে ফেলে পালিয়ে যায়। একই পরিবারের তিন সদস্যের লাশ পাওয়া গেছে। নিহতদের পরিবারে চলছে শোকের মাতম। নিহতরা হলেন, বামিয়া গ্রামের মৃত আব্দুল মাজেদ গাজীর পুত্র হাবিবুল্লাহ গাজী (৩৩), তার স্ত্রী বিউটি খাতুন (২৫) ও একমাত্র কন্যা হাবিবা খাতুন টুনি (১৩)।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে পুলিশ জানান, গতকাল মঙ্গলবার সকালে এক নারী পুকুরে পানি আনতে গিয়ে প্রথমে লাশ দেখতে পায়। ভয় পেয়ে তিনি প্রতিবেশীদের খবর দেন। স্থানীয়রা পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে।
নিহত হাবিবুল্লাহর বড় ভাই মিজানুর রহমান জানান, আমার ভাই পেশায় একজন দিনমজুর। বিভিন্ন জায়গায় রাজমিস্ত্রীর কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতো। ভাইয়ের স্ত্রী পেশায় গৃহিনী। মেয়ে পার্শ্ববর্তী ঘুগরাঘাটি আলিয়া মাদ্রাসার ৬ষ্ঠ শ্রেনিতে পড়াশোনা করতো। তাদের সাথে কারো কোন শত্রুতা নেই। তবে বেশ কিছুদিন আগে পাশ্ববর্তী এক নারীর সাথে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাদের মতবিরোধ ঘটে। এই বিষয়টি ছাড়া আর কোন ঘটনা নেই। তিনি বলেন, শত্রুতা আমার ভাই ও ভাবির সাথে থাকতে পারে। তবে নিষ্পাপ মেয়েকে তারা হত্যা কেন করলো। এত নৃশংসভাবে কেউ কাউকে হত্যা করতে পারে তা’ আমার জানা ছিলো না। তিনি আরও জানান, আমার পিতা বেঁচে নেই। মা রয়েছেন। ছেলের এমন মৃত্যুতে পরিবারে হাহাকার অবস্থা। মাকে কোনভাবেই সান্ত¡না দেয়া যাচ্ছে না। আমরা খুনীদের শাস্তি চাই। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। এজন্য মঙ্গলবার সুরতহাল রিপোর্ট করা সম্ভব হয়নি। আজ বুধবার সুরতহাল শেষে লাশ বাড়ি এনে দাফন করা হবে।
কয়রা থানার ওসি (তদন্ত) মোঃ শাহাদাৎ হোসেন বলেন, একই পরিবারের তিনজনকেই হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। মাথা ও মুখে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। নারীর গলায় ফাঁস দেয়ার চিহ্ন রয়েছে। মেয়েটিকে হত্যার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ধারণা করা হচ্ছে বাবা মাকে হত্যার বিষয়টি দেখে ফেলায় দুর্বৃত্তরা তাকেও হত্যা করে। তথ্য উদঘাটন ও প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন প্রতিবেশীকে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে তিনি জানান।
বাগালী ইউনিয়ন পরিষদের নব নির্বাচিত চেয়ারম্যান আব্দুস সামাদ গাজী বলেন, যে তিন জনকে হত্যা করা হয়েছে তারা খুবই সহজ-সরল প্রকৃতির। ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। মাথা মুখ বুক ও পিঠে এলামেলোভাবে কোপানোর চিহ্ন রয়েছে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন খুলনার সহকারি পুলিশ সুপার (ডি-সার্কেল) মোঃ সাইফুল ইসলাম, উপজেলা নির্বাহী অফিসার অনিমেষ বিশ্বাসসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।