/ খুলনার নতুন কারাগার প্রস্তুত, দ্রুত বুঝে নেবে কারা কর্তৃপক্ষ

খুলনার নতুন কারাগার প্রস্তুত, দ্রুত বুঝে নেবে কারা কর্তৃপক্ষ

এ এইচ হিমালয় : দীর্ঘদিন পর খুলনার নতুন কারাগারের কাজ শেষ হয়েছে। গত ২৫ মে গণপূর্ত বিভাগের কাছ থেকে নতুন কারাগারটির বুঝে নেওয়ার কথা ছিল কারা কর্তৃপক্ষের। কিছু কাজ অসম্পূর্ণ থাকায় ওইদিন হস্তান্তর হয়নি। বাকি কাজ শেষ করে দ্রæত কারাগারটি হস্তান্তর করা হবে।
১৯১২ সালে নগরীর ভৈরব নদীর তীরে নির্মাণ করা হয় খুলনার প্রথম কারাগার। সেখানে বন্দি ধারণ ক্ষমতা ৬৭৮ জনের। বর্তমানে সেখানে রয়েছেন ১৪শ’র বেশি বন্দি। ১১৩ বছরের পুরাতন জরাজীর্ণ ভবনে ঝুঁকি নিয়ে থাকতে হয় বন্দিদের। এসব বিবেচনায় নিয়েই নতুন কারাগার নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
খুলনার সিটি (রূপসা সেতু) বাইপাস সড়কের জয়বাংলা মোড়ের অদূরে প্রায় ৩০ একর জমির ওপর নতুন কারাগার নির্মাণ হচ্ছে। মাস্টারপ্লান অনুযায়ী নতুন কারাগারে ৪ হাজার বন্দি থাকতে পারবেন। প্রকল্পের আওতায় আপাতত ২ হাজার বন্দি রাখার অবকাঠামো তৈরি হয়েছে। পরে প্রয়োজন পড়লে পৃথক প্রকল্প নিয়ে অন্য অবকাঠামো নির্মাণ হবে।
গণপূর্ত বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রাশিদুল ইসলাম জানান, কারাগারের ভেতরে পুরুষ, নারী ও সাজাপ্রাপ্ত বন্দিদের পৃথক ব্যারাক রয়েছে। এর বাইরে কিশোর, শ্রেণিপ্রাপ্ত বন্দিদের জন্য পৃথক ভবন, ফাঁসির মঞ্চ, নারীদের ডে কেয়ার সেন্টার, পৃথক ওয়ার্ক সেড ও বিনোদন কেন্দ্র, ৪টি রান্না ঘর, পুরুষদের মোটিভেশন সেন্টার, জেল লাইব্র্রেরি, স্কুল ও হাসপাতাল রয়েছে। এছাড়া পুরুষ ও নারী কারারক্ষীদের জন্য একাধিক কোয়াটার, প্রশাসনিক ভবন, সেলুন, লন্ড্রিসহ ৫২টি স্থাপনা রয়েছে।
ভেতরে ঘুরে দেখা গেছে, বন্দিদের প্রতিটি ব্যারাকের চারপাশে পৃথক সীমানা প্রাচীর রয়েছে। এক শ্রেণির বন্দিদের অন্য শ্রেণির বন্দিদের সঙ্গে মেশার সুযোগ নেই। কারাগারের ভেতরে শুধু সীমানা প্রাচীরই রয়েছে প্রায় ৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে। ভেতরে ড্রেন, ফুটপাত, নিজস্ব পয়ঃ বর্জ্য শোধন কেন্দ্র, ওয়াকওয়ে, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ব্যবস্থা, দুটি পুকুর ও সৌর বিদ্যুতের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সবকিছুর কাজ শেষ।
প্রকল্প অফিস থেকে জানা যায়, নতুন এ কারাগার নির্মাণ হচ্ছে সংশোধনাগার হিসেবে। এখানে বিচারাধীন ও সাজাপ্রাপ্ত বন্দিদের পৃথক স্থানে রাখা হবে। কিশোর ও কিশোরী বন্দিদের জন্য রয়েছে পৃথক ব্যারাক। নারীদের জন্য পৃথক হাসপাতাল, মোটিভেশন সেন্টার ও ওয়ার্কশেড আছে। একইভাবে বন্দিদের জন্য ৫০ শয্যার হাসপাতাল থাকবে।
আরও থাকবে কারারক্ষীদের সন্তানদের জন্য স্কুল, বিশাল লাইব্রেরি, ডাইনিং রুম, আধুনিক সেলুন ও লন্ড্রি। কারাগারে শিশুসন্তানসহ নারী বন্দিদের জন্য থাকবে পৃথক ওয়ার্ড ও ডে-কেয়ার সেন্টার। এ ওয়ার্ডটিতে সাধারণ নারী বন্দি থাকতে পারবেন না। সেখানে শিশুদের জন্য লেখাপড়া, খেলাধুলা, বিনোদন ও সংস্কৃতিচর্চার ব্যবস্থা থাকবে। কারাগারে পুরুষ ও নারী বন্দিদের হস্তশিল্পের কাজের জন্য আলাদা আলাদা ওয়ার্কশেড, বিনোদন কেন্দ্র ও নামাজের ঘর থাকবে।
খুলনা গণপূর্ত বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামান বলেন, নতুন কারাগারের সব কাজ শেষ। কয়েকটি স্থাপনায় রংয়ের শেষ প্রলেপ ও ফিটিংয়ের কিছু বাকি রয়েছে। আগে করলে এসব নষ্ট হয়ে যায়, এজন্য হস্তান্তর তারিখ নির্ধারণ হলে তখন এসব কাজ করা হবে।
খুলনার জেল সুপার মো. নাসির উদ্দিন প্রধান বলেন, কিছু কাজ বাকি ছিল, সেগুলো শেষ করতে বলা হয়েছে। সব ঠিক থাকলে চলতি জুন মাসেই আমরা কারাগার বুঝে নেব।