/ খুলনা’র ভৈরব-আতাই নদের জলপথ জলদস্যুদের দখলে

খুলনা’র ভৈরব-আতাই নদের জলপথ জলদস্যুদের দখলে

নিয়ন্ত্রণ করছে পাঁচটি সশস্ত্র গ্রুপ

শেখ মনিরুল ইসলাম, দিঘলিয়া(খুলনা): খুলনা’র ভৈরব-আতাই নদের জলপথ জলদস্যুদের দখলে। পাঁচটি সশস্ত্র গ্রুপ গোটা নৌ-পথ জিম্মি করে রেখেছে। চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজী, কালোবাজারি অহর্নিশ ঘটে চলেছে। এছাড়া মাঝে মধ্যে নদীতে অজ্ঞাত লাশের উপস্থিতি ঘটে। ঝুঁকি কম থাকায় অপরাধীরা নৌ-পথকে বেছে নিয়েছে।


অনুসন্ধানে জানা গেছে, খুলনা শহরের কোল ঘেঁষে প্রবাহিত হয়েছে ভৈরব নদী। ভৈরব নামের অর্থ হচ্ছে “ভয়ংকর “। আর এ ভয়ংকর ভৈরব নদীকে জিম্মি করে রেখেছে খুলনা শহর ও পার্শ্ববর্তী দিঘলিয়া উপজেলার অন্তত: পাঁচটি সশস্ত্র বাহিনী। বাহিনীর সদস্যরা নৌপথে চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজী, কালোবাজারিসহ নানা ধরনের অপরাধ সংঘটিত করছে। বাহিনীগুলোর বর্তমান সময়ে আয়ের একমাত্র উৎস হচ্ছে নৌ-পথ। ঝুঁকি কম থাকায় অপরাধীরা নৌ-পথকে বেছে নিয়েছে।


সূত্র জানায়, খুলনা শহর থেকে নওয়াপাড়া পর্যন্ত নদীর তীরে গড়ে উঠেছে সরকারি, বে-সরকারি নানা ধরনের কলকারখানা, খাদ্য গুদাম, সার গুদাম, জ্বালানী তেলের ডিপো, বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, সিমেন্ট ফ্যাক্টরীসহ বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, হাট-বাজার। এসকল প্রতিষ্ঠানের মালামাল সাধারণত নৌপরিবহনের মাধ্যমে লোড-আনলোড হয়ে থাকে।


সূত্র জানায়, খুলনা শহর, দিঘলিয়া উপজেলার চন্দনীমহল কাঁটাবন এলাকার ভৈরব এবং আতাই নদের মোহনা, মজুদখালী-ভৈরব নদের মোহনা পর্যন্ত কখনো কখনো নওয়াপাড়া পর্যন্ত নৌপথ বিভিন্ন এলাকাভেদে জলদস্যুদের কাছে জিম্মী থাকে। চট্টগ্রাম থেকে আসা জ্বালানি তেলের ট্যাংকার, খুলনা বড় বাজার থেকে মালামাল নিয়ে আসা ট্রলার বা নৌকা, মোংলা থেকে মানিকতলা সিএসডিতে আসা এবং মানিকতলা থেকে মালামাল নিয়ে বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদে পরিবহণকালে এবং মোংলা থেকে নওয়াপাড়া আসা ট্রলার বা বাল্কহেড কয়লা, সার, লবন, চিনি প্রভৃতি জিনিসপত্র পরিবহণ করার সময় জলদস্যুদের কবলে পড়ে।


অনুসন্ধানে জানা গেছে, দিঘলিয়া উপজেলার চন্দনীমহল কাঁটাবন ও রূপসা উপজেলার শৌলপুর গ্রামের দুই পাড়ে ২টা গ্রুপ, সেনহাটী এলাকায় ১টা গ্রুপ, দিঘলিয়া ইউনিয়নে ১টা গ্রুপ ও বারাকপুর ইউনিয়নে ১টা গ্রুপ। সশস্ত্র এ গ্রুপ গুলো সাম্প্রতিক কালে খুবই সক্রিয় হয়ে উঠেছে। গত ১৬মে মোংলা থেকে নওয়াপাড়াগামী একটি ট্রলার কয়লা নিয়ে ছেড়ে এসে দিঘলিয়ার কাঁটাবন এলাকায় পৌঁছালে ট্রলারটি জলদস্যুদের কবলে পড়ে। ১০-১২ জন জলদস্যু লাঠি সোঠা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ট্রলারের গতিরোধ করে দখলে নিয়ে নেয়ে। কয়লা বোঝাই ট্রলারের স্টাফদের মারপিট করে তাদের কাছে থাকা নগদ টাকা, মোবাইল ফোনসহ মালামাল ছিনিয়ে নেয়। এখান থেকে পর্যায়ক্রমে জলদস্যুদের হাত বদল হয়ে কয়লা বোঝাই ট্রলারটি নড়াইল জেলার বরদিয়া বাজারের দিকে নিয়ে যায়। ২দিন পর নৌপুলিশ নড়াইল জেলার বড়দিয়া বাজার সংলগ্ন নদীর মধ্যে কয়লা বোঝাই ট্রলারসহ ৫৫ টন লুন্ঠিত কয়লা উদ্ধার করে।

এ ঘটনার কিছুদিন আগে সরকারি সার ছিনতাই কালে পুলিশ ধাওয়া করে। তখন ছিনতাইকারীরা কিছু সার মজুদখালি নদীর পাড়ে ফেলে দিয়ে সার ভর্তি ট্রলার ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। পুলিশ পিছু নিয়েও তাদেরকে আটক করতে পারেনি। গত বছর ক্যাবল ফ্যাক্টরীর ক্যাবল তার চুরি করা কালে বার্মাশীল খেয়াঘাটের আশপাশ হতে নদীর পানির ভেতরে চোরাই ক্যাবল তার উদ্ধার করা হয়। এছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত জুট মিল, নিউজপ্রিন্ট মিল ও হার্ডবোর্ড মিলের যন্ত্রাংশ দেদারসে চুরি হয়েছে এক চক্রটির মাধ্যমে। খুলনা’র ভৈরব ও আতাই নদী থেকে নওয়াপাড়া পর্যন্ত ব্যবসায়ীদের মালামাল পরিবহণসহ পদ্মা, মেঘনা, যমুনা ডিপো’তে জ্বালানী তেল পরিবহন, সরকারি গুদামে আমদানি করা খাদ্য সামগ্রী, নির্মাণ সামগ্রী পরিবহণ, খাদ্যশস্য পরিবহণ, জ্বালানী তেলসহ কোন কিছু আজ নিরাপদ নয়। এমন কি খুলনা শহরের খালিশপুরে অবস্থিত বন্ধ কলকারখানাও নিরাপদ নয়।


এব্যাপারে খুলনা নৌ পুলিশ ইন্সপেক্টর বাবুল আক্তার এর সাথে মুঠোফোনে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।