* বিভাগে মৃত্যু কমলেও শনাক্ত সর্বোচ্চ

স্টাফ রিপোর্টার ঃ খুলনার তিনটি সরকারি হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য মোট শয্যা সংখ্যা ২৭৫টি। আর তিন হাসপাতালে রোগী আছে ২৯৫জন। অর্থাৎ এখনও শয্যার চেয়ে রোগী বেশি। এজন্য সরকারি হাসপাতালগুলোতে শয্যা সংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টা চলছে।
সংশ্লিষ্ট হাসপাতালগুলোর দেয়া তথ্য অনুযায়ী সবচেয়ে বেশি রোগী খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে। প্রথমে একশ’ শয্যা নিয়ে যাত্রা হয়েছিল এ হাসপাতালটির। বর্তমানে এর বেড সংখ্যা ১৫০টি। এর মধ্যে ২০টি আইসিইউ ও ২০টি এইচডিইউ। ১১০টির মধ্যে ৭০টি রেডজোন আর ৪০টি ইয়োলো জোনের। রেডজোনে করোনা শনাক্ত হওয়ার পর ইয়োলো জোনে উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হয়ে চিকিৎসার সুযোগ রয়েছে।
খুলনা জেনারেল হাসপাতালটি ৭০ শয্যা নিয়ে যাত্রা হলেও গতকাল সকালে সেখানে ৮০টি বেডে রোগী ছিলেন ৭০জন। অর্থাৎ সেখানে শয্যা খালি আছে ১০টি।
আর শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে ৩ জুলাই থেকে ৪৫টি শয্যা নিয়ে করোনা ইউনিটের যাত্রা হলেও গতকাল সকালে সবগুলো শয্যাই পূর্ণ হয়ে যায়। সেখানে আরও পাঁচটি আইসিইউ শয্যা বাড়ানো হতে পারে বলে গতকাল হাসপাতালের একটি সূত্র জানিয়েছে। তার পরেও গড়ে তিন হাসপাতালে রোগীর চেয়ে শয্যা সংখ্যা কম আছে।
সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে খুব শীঘ্রই খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটকে ২শ’ শয্যায় উন্নীত করা হতে পারে বলেও মুখপাত্র ডা: সুহাস রঞ্জন হালদার গতরাতে জানিয়েছেন।
এদিকে, খুলনার একমাত্র বেসরকারি হাসপাতাল গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটি এখন অনেকটা করোনা রোগী নির্ভর হতে চলেছে। যেমনটি হতে যাচ্ছে সরকারি হাসপাতাল খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটি। গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা: গাজী মিজানুর রহমান বলেন, গতকাল থেকে সেখানে আরও ৩০টি শয্যা বাড়িয়ে ১৫০টিতে উন্নীত করা হয়েছে। গতকাল সকালে ওই হাসপাতালে রোগী ছিলেন ১৩৪জন। অর্থাৎ সেখানেও প্রায় ছুঁই ছুঁই অবস্থা।
মৃত্যু যেন কমছেই না ঃ বিভাগীয় হিসাবে বিগত ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুর সংখ্যা কিছুটা কমে ৪০জনে দাঁড়ালেও সেই অর্থে যেন কমছে না মৃত্যু। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটের দেয়া তথ্যে গতকাল সকালে উল্লেখ করা হয় বিগত ২৪ ঘন্টায় সেখানে করোনায় চারজন ও উপসর্গে আরও চারজনের মৃত্যু হয়। যে চারজনের মৃত্যুর কথা হাসপাতালের মুখপাত্র ডা: সুহাস রঞ্জন হালদার উল্লেখ করেছেন তারা হলেন, নগরীর চানমারীর মমতাজ(৫৫), খালিশপুরের রহিমা পারভীন(৫৫), বাগেরহাটের ফকিরহাটের সুব্রত পাল(৪৫) এবং সোনাডাঙ্গার মনোয়ারা(৫০)।
এছাড়া সোমবার দিবাগত রাত দেড়টা থেকে শুরু করে গতকাল মঙ্গলবার রাত ১১টা পর্যন্ত আরও ছয় জনের মৃত্যু হয় বলে করোনা ইউনিটে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে। এরা হলেন, নগরীর সোনাডাঙ্গা থানাধীন বানরগাতি এলাকার মনোয়ারা হ্যাপি(৫০), জেলার বটিয়াঘাটার হেতালবুনিয়া এলাকার নারায়ণ চন্দ্র ইজারাদার(৮০), বাগেরহাটের ফকিরহাটের কলকলিয়া এলাকার সুনীল রায়(৭৫) এবং যশোর সদর থানাধীন মোল্লাপাড়ার ঝুমুর বেগম(২৫)।
খুলনা জেনারেল হাসপাতালে বিগত ২৪ ঘন্টায় পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে বলে হাসপাতালের মুখপাত্র ডা: কাজী আবু রাশেদ জানিয়েছেন। গত ২০ জুন হাসপাতালে করোনা ইউনিট চালু হওয়ার পর এটিই সর্বোচ্চ সংখ্যক মৃত্যু। মৃত্যুবরণকারীরা হলেন, নগরীর খালিশপুরের জিল্লু মিয়া(৬৫), রূপসার নন্দনপুরের শরিফুল ইসলাম(৫২), বাগেরহাটের ফকিরহাটের শারমিন বেগম(৪৫), রূপসার রহিম নগরের আমির হোসেন(৬৫), বাগেরহাটের ফকিরহাটের মারিয়া(৩৯), নড়াইলের নড়াগাতির যোগানিয়ার এস এম বোরহান উদ্দিন(৪৮) এবং যশোরের কেশবপুরের সুফলাকাটির সুশান্ত কুন্ড(৫৫)।
খুলনার সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিকেল অফিসার(রোগ নিয়ন্ত্রণ) ডা: শেখ সাদিয়া মনোয়ারা ঊষা গতকাল সকালে জানান, আগের দিন খুলনার রূপসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনায় আক্রান্ত হয়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে।
খুলনা গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিগত ২৪ ঘন্টায় সেখানে আরও চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এরা হলেন, খালিশপুরের বয়রা এলাকার নোভা রানী দাস(৭৫), বাগেরহাট সদরের মাহমুদা বেগম(৫৫), খুলনার ডুমুরিয়ার নজরুল ইসলাম(৬৮) এবং পাইকগাছার কপিলমুনির শোভা রানী সাহা(৭৫)।
তবে শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের করোনা ইউনিটের মুখপাত্র ডা: প্রকাশ চন্দ্র দেবনাথ বলেন, গতকাল ৪৫টি বেডই পরিপূর্ণ থাকলেও বিগত ২৪ ঘন্টায় কারও মৃত্যু হয়নি।
মৃত্যু কমলেও বিভাগে সর্বোচ্চ শনাক্ত ঃ এ যাবতকালের মধ্যে বিগত ২৪ ঘন্টায় খুলনা বিভাগে করোনা শনাক্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি বলে উল্লেখ করেছেন বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা: রাশেদা সুলতানা। গতকাল সকালে তিনি জানান, বিগত ২৪ ঘন্টায় খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় সর্বমোট এক হাজার ৮৬৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়। তবে মৃত্যুর সংখ্যা কিছুটা কমেছে। বিগত ২৪ ঘন্টায় বিভাগে ৪০জনের মৃত্যু হয়েছে এমনটি উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ নিয়ে বিভাগে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়ালো ১৩০৫জনে। আর শনাক্ত হয়েছে মোট ৬৩ হাজার ৮৯৯জন।
খুমেক ল্যাবে একদিনে ১১৫ শনাক্ত ঃ খুলনা মেডিকেল কলেজের আরটি পিসিআর ল্যাবে গতকাল মঙ্গলবার ১৮৮টি নমুনা পরীক্ষার পর ১১৫জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে বলে খুমেক’র উপাধ্যক্ষ ডা: মো: মেহেদী নেওয়াজ জানিয়েছেন। শনাক্ত হওয়া ১১৫জনের মধ্যে খুলনার ১০২জন, বাগেরহাটের পাঁচজন, সাতক্ষীরার দু’জন, গোপালগঞ্জের দু’জন এবং পিরোজপুরের একজন বলেও তিনি জানান।