বেতন বকেয়া ৫
থেকে নয় মাস

স্টাফ রিপোর্টার ঃ বেতন না পেয়ে খুলনার পাঁচ শতাধিক আউটসোর্সিং কর্মচারী এবার ঈদের আনন্দ বঞ্চিত হচ্ছে। এসব কর্মচারী খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, খুলনা জেনারেল হাসপাতাল এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। এসব কর্মচারীদের পাঁচ থেকে নয় মাসের বেতন বকেয়া থাকায় তাদের পরিবারে চলছে অনেকটা হাহাকার অবস্থা। এর বাইরেও বিগত প্রায় দু’বছর ধরে চাকরীহারা আরও ২১১ জন আউটসোর্সিং কর্মচারীর পাওনা রয়েছে পাঁচ মাসের বেতন। তারাও অপেক্ষায় আছেন তাদের পাওনা ও চাকরী ফিরে পাওয়ার।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তিন স্তরে ৩০৭ জন আউটসোর্সিং কর্মচারীর মধ্যে কারও পাঁচমাস, কারও সাত মাস আবার কারও নয়মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে বলে জানা গেছে। তবে অফিস সহকারী থেকে হিসাব কর্মকর্তা হওয়া হাসপাতালের একজন কর্মী বলেন, আউটসোর্সিং কর্মচারী সরবরাহকারী ঠিকাদারের কাছে গত ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত সব বেতন দেয়া হয়েছে। খুমেক হাসপাতালে আউটসোর্সিং কর্মচারী হিসেবে কর্মরত কয়েকজন জানান, তাদেরকে আজ দেব কাল দেবো বলে সময় ক্ষেপন করে গত বৃহস্পতিবার বলা হয় শনিবার(গতকাল) দেয়া হবে। কিন্তু গতকাল থেকে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের প্রতিনিধির মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। এর ফলে ওইসব কর্মচারীদের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে। বিশেষ করে ঈদের নতুন জামাতো দূরের কথা অনেকের ঘরে স্বাভাবিক খাবারও জুটবে না বলে আশংকা করা হচ্ছে।
অবশ্য কয়েকজন আউটসোর্সিং কর্মচারীকে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বেতন আপটুডেট করে রাখা হয়েছে এমন অভিযোগ করে কেউ কেউ বলেন, ওইসব কর্মচারীদের দিয়ে মিডিয়া বা অন্যান্য সংস্থার কাছে বলানো হবে যে, তাদের কোন বেতন বকেয়া নেই। এজন্য নারী-পুরুষ দিয়ে কয়েকজনের তালিকাও করা হয়েছে বলে জনশ্রুতি রয়েছে।
এদিকে, খুলনা জেনারেল হাসপাতালে কর্মরত কয়েকজন আউটসোর্সিং কর্মচারী গত বুধবার দুপুরে খুলনার সিভিল সার্জনের দপ্তরে গিয়ে বেতনের কথা বললে তিনি তাৎক্ষনিক ঠিকাদারের প্রতিনিধির কাছে ফোন দিয়ে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের রেফারেন্স দিয়ে কথা বললে তাদের মধ্যে মাত্র তিনজনকে একমাসের বেতন দেয়া হয়। অর্থাৎ জেনারেল হাসপাতালসহ নয়টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে মোট ২১৪জন আউটসোর্সিং কর্মচারী কর্মরত থাকলেও তাদের মধ্যে মাত্র তিনজনকে বেতন দেয়ায় বাকী ২১১জন রয়েছে বেতন বঞ্চিত। এদের মধ্যে কয়েকজনকে গতকাল টাকা ঋণ করে গ্রামের বাড়িতে যেতে দেখা গেছে। যাবার সময় তাদের কেউ কেউ কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
খুলনা মেডিকেল কলেজ ও খুলনা জেনারেল হাসপাতালসহ অন্যান্য স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে এমন অবস্থা বিরাজ করলেও বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের দপ্তরসহ চারটি প্রতিষ্ঠানের ৩৬জন আউটসোর্সিং কর্মচারীর দীর্ঘদিন পর বেতন হলেও তাদের কাছ থেকেও নগদ সাত হাজার টাকা করে রেখে চেক দেয়া হয় বলে জনশ্রুতি রয়েছে। যদিও এ বিষয়ে কেউ কোন অভিযোগ করতে রাজী হননি। কারণ অভিযোগের বিষয়টি প্রকাশ হলে তাদেরকে আবার চাকরী হারাতে হতে পারে। এমনকি বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক দপ্তরের অফিস সহকারী কাম মুদ্রাক্ষরিক পদ হতে প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত একজন কর্মীর বিরুদ্ধে ওই টাকা রাখার অভিযোগ শোনা গেলেও তিনি এটি সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, এ ধরনের প্রমান কেউ দিতে পারলে তিনি চাকরী ছেড়ে দেবেন।
এ ব্যাপারে খুলনার কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের উপমহাপরিদর্শক মো: মাহফুজুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, এমন অভিযোগ পেলে তাদের দপ্তর থেকেই তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরও বলেন, যেসব ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স নেই তাদেরকে আউটসোর্সিং কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ না দেয়ার জন্য ইতোমধ্যে খুলনার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পত্র দেয়া হয়েছে। কেননা লাইসেন্সবিহীন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কোন অস্তিত্ব না থাকায় তাদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠতে পারে। আর কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের খুলনা কার্যালয়ের সুপারিশের আলোকে ঢাকা থেকে এ পর্যন্ত মাত্র আটটি প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স গ্রহণ করেছে বলেও তিনি জানান। এসব ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান হচ্ছে, নগরীর ফুলবাড়িগেটের এল আর ইন্টারন্যাশনাল, খালিশপুরের মেসার্স সেন এন্ড কোং, সদর থানাধীন ষ্টেশন রোডের হামিদা ট্রান্সপোর্ট এজেন্সী, সোনাডাঙ্গার বয়রা ক্রস রোডের সাউথ পোর্ট লজিস্টিকস্ লিঃ, ফুলতলার দামোদরের মেসার্স তাকবীর এন্টারপ্রাইজ, বাগেরহাটের মংলার এম এ হাসেম এন্ড সন্স, নগরীর হেরাজ মার্কেটের সাইফুল ইসলাম ট্রেড লিংক এবং সোনাডাঙ্গার বয়রা মেইন রোডের মেসার্স আলহাজ¦ এ রহমান এন্ড সন্স।
যদিও খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জেনারেল হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো, বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক দপ্তরসহ অন্যান্য স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে আউটসোর্সিং কর্মচারী সরবরাহের সাথে এসব কোন প্রতিষ্ঠানই জড়িত নেই। অর্থাৎ যেসব প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বর্তমানে আউটসোর্সিং কর্মচারী সরবরাহ করা হচ্ছে তাদের বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।