জেলা প্রশাসনের উদ্যোগ

এ এইচ হিমালয় ঃ খুলনার ৯টি উপজেলায় নির্মাণ হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ শয্যার আইসিইউ ইউনিট। এসব ইউনিটের সঙ্গে অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যাংক এবং হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলাও থাকছে। স্বাস্থ্য বিভাগের পরামর্শে খুলনার জেলা প্রশাসন এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছে। ইতোমধ্যে দাকোপ ও ডুমুরিয়া উপজেলায় ৭০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। বটিয়াঘাটা বাদে অন্যান্য উপজেলায়ও দ্রুত গতিতে নির্মাণ কাজ চলছে। নির্মাণের পর ইউনিটগুলো স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হবে। স্থানীয় উদ্যোগে উপজেলা পর্যায়ে আইসিইউ নির্মাণ দেশে এটাই প্রথম।
জেলা প্রশাসন থেকে জানা গেছে, গত বছরের ১৮ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সে প্রতিটি উপজেলায় আধুনিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার নির্দেশনা দেন। বিষয়টি নিয়ে খুলনা জেলার উন্নয়ন সমন্বয় সভায় বিশদ আলোচনা হয়। সভায় সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিবিদসহ সবাই করোনা ভাইরাস মোকাবেলা এবং করোনা ভাইরাস পরবর্তী সময়ে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সর্বাধুনিক চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে উপজেলা পর্যায়ে আইসিইউ চালুর বিষয়ে একমত পোষণ করেন।
সভায় সর্বসম্মতিক্রমে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো উপজেলা পর্যায়ে অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যাংক, হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা সম্বলিত ২০ শয্যা বিশিষ্ট আইসিইউ ইউনিট নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। খুলনার জেলা প্রশাসন শুরু থেকে এই কাজ তত্ত্বাবধান করছে। উন্নয়ন সংস্থা জাইকা, উপজেলা পরিষদ ও স্থানীয় ব্যক্তিরা এতে অর্থায়ন করছে।
খুলনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন জানান, করোনা সংক্রমণের পর দেখা গেল খুলনার কোনো উপজেলাতেই অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যাংক, হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা নেই। গুরুতর পর্যায়ের সব চিকিৎসা খুলনা শহর কেন্দ্রিক। অধিকাংশ উপজেলা মহানগর থেকে বেশ দূরে হওয়ায় আধুনিক চিকিৎসা সেবা থেকে উপজেলার মানুষ একরকম বঞ্চিত। করোনার সময় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা না থাকায় মানুষকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয়নি।
তিনি বলেন, এমন একটি পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে স্থানীয় উদ্যোগে এই আইসিইউ ইউনিট প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ছোট উপজেলায় ১৫ শয্যার ইউনিট নির্মাণ ব্যয় হচ্ছে প্রায় ৪০ লাখ টাকা। এছাড়া বড় উপজেলায় ২০ শয্যার আইসিইউ ইউনিট নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ৪৫ লাখ টাকা। খুলনার ৮টি উপজেলায় এসব ইউনিটের নির্মাণ কাজ চলছে। খুব দ্রুত এসব ইউনিট চালু হবে। মুজিব শতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে আইসিইউ ইউনিটগুলো প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য জেলা প্রশাসনের উপহার।
উপজেলা পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ৮টি উপজেলায় ইউনিট নির্মাণের কাজ বেশ দ্রুত গতিতে চলছে। বটিয়াঘাটা উপজেলার দরপত্র পুনরায় আহ্বান হওয়ায় আগামী মাসে সেখানে কাজ শুরু হবে।
খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আবদুল ওয়াদুদ পূর্বাঞ্চলকে বলেন, গত জানুয়ারি মাসে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেই আইসিইউ ইউনিট স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে ৭০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। যন্ত্রপাতি সংযোজন করা হলে দ্রুতই এগুলো চালু করা সম্ভব হবে।
দাকোপ উপজেলায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ডিসেম্বর মাসে কাজ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে ৮০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে।
গ্রাম পর্যায়ে এই ইউনিট নির্মাণে খুশি স্থানীয় মানুষ। খুলনার দাকোপ উপজেলার বাসিন্দা আলমগীর হোসেন জানান, আগে গুরুতর অসুস্থ হলে খুলনা শহরে ছুটতে হতো। আইসিইউ চালু হলে সেই কষ্ট আর থাকবে না।
খুলনার সিভিল সার্জন ডা. নিয়াজ মোহাম্মদ পূর্বাঞ্চলকে বলেন, আইসিইউ ভবন, যন্ত্রপাতি হলে খুব দ্রুত ইউনিট চালু করা সম্ভব হবে। এটা একটি দারুণ পদক্ষেপ।