২৪ ঘন্টায় শনাক্ত ১৪০ জনের
মধ্যে ১৩৩ জনই খুলনার

স্টাফ রিপোর্টার ঃ মাত্র একদিনেই সাতজনের মৃত্যু হয়েছে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা সাসপেকটেড আইসোলেশন ওয়ার্ডে। করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে তাদের মৃত্যু হয়। খুমেক হাসপাতালে গত ২৩ মার্চ ওই ওয়ার্ডটি চালুর পর এটিই ছিল একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর ঘটনা। ওই ওয়ার্ড চালুর আগে খুমেক হাসপাতালে করোনা উপসর্গ নিয়ে দু’জন এবং ওয়ার্ড চালুর পর গতকাল পর্যন্ত খুলনায় সর্বমোট ৫১জনের মৃত্যু হয়েছে। যার মধ্যে তিন জনের কোন নমুনা পরীক্ষা হয়নি এবং তিনজনের নমুনা পরীক্ষা করা হয় ঢাকাস্থ আইইডিসিআর(রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান) থেকে। তাদের ফলাফল আসে নেগেটিভ। বাকী ৪০ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয় খুলনা মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাব থেকে। এর মধ্যে ৩৪ জনেরই ফলাফল নেগেটিভ এবং বাকী ছয়জনের ফলাফল আসে পজেটিভ। সর্বশেষ গতকাল যে সাতজনের মৃত্যু হয়েছে তাদেরও নমুনা সংগ্রহ করে খুলনা মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা সাসপেকটেড আইসোলেশন ওয়ার্ডে গতকাল যেমন করোনার উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুর রেকর্ড ছিল তেমনি খুলনা মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবেও গতকাল শনাক্তের সংখ্যাও ছিল আগের যে কোন দিনের চেয়ে সর্বোচ্চ সংখ্যক। অর্থাৎ গতকাল ৩৭৭টি নমুনা পরীক্ষার পর সর্বমোট ১৪০ জনের ফলাফল পজেটিভ হয়। যার মধ্যে শুধুমাত্র খুলনারই ১৩৩জন। বাকী সাতজনের মধ্যে একজন যশোরের, দু’জন নড়াইলের, তিনজন বাগেরহাটের এবং একজন পিরোজপুরের। এ তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন খুমেক হাসপাতালের করোনা প্রতিরোধ ও চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা কমিটির সার্বিক সমন্বয়কারী এবং খুলনা মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ ডা: মো: মেহেদী নেওয়াজ।
খুমেক হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার(আরএমও) এবং করোনা সাসপেকটেড আইসোলেশন ওয়ার্ড ও ফ্লু কর্ণারের মুখপাত্র ডা: মিজানুর রহমান বলেন, গতকাল একই দিনে করোনার উপসর্গ নিয়ে যে সাতজনের মৃত্যু হয়েছে তারা হলেন, নগরীর খলিশপুর কাশিপুরের জরিনা বেগম(৬০), রূপসার খাজাডাঙ্গা এলাকার মোহাম্মদ আলী(৬০), নড়াইলের কালিয়ার কার্ত্তিক(৪০), যশোরের অভয়নগরের রুমা বেগম(৩৫), নগরীর ৫ নম্বর ঘাটের জামসেদ আলম(৬০), সোনাডাঙ্গার নাসিম আহমেদ(৬০) এবং টুটপাড়ার ফিরোজ আহমেদ(৬৯)।
আরএমও বলেন, জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে খালিশপুরের কাশিপুরের জরিনা বেগম (৬০) বৃহস্পতিবার বিকেল সোয়া পাঁচটায় খুমেক হাসপাতালের করোনা সাসপেক্টেড আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি হন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০ টায় তিনি মারা যান। তিনি কাশিপুরের মৃত আব্দুল গনি সরদারের স্ত্রী।
মোহাম্মদ আলী (৬০) নামে অপর একজন বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত পৌনে দুইটায় জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে ওই ওয়ার্ডে ভর্তি হন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল বেলা পৌনে ১১টায় তার মৃত্যু হয়। মৃত মোহাম্মদ আলী রূপসা উপজেলার টিএস বাহিরদিয়া ইউনিয়নের খাঁজাডাঙ্গা গ্রামের মৃত আরশাদ আলীর ছেলে।
নড়াইল জেলার কালিয়া থানার পুরুলিয়া গ্রামের মৃত নিতাই’র ছেলে কার্ত্তিক (৪০) বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ভর্তি হন। তিনি গতকাল সন্ধ্যা সোয়া ছয়টায় মারা যান।
খুলনা মহানগরীর সদর থানার ৫নং ঘাটা এলাকার মোঃ আহমেদের পুত্র জামশেদ আলম(৬০) শুক্রবার দুপুর ২ টা ২৫ মিনিটে ভর্তি হন। তিনি মৃত্যুবরণ করেন সন্ধ্যা ৬টা ১৫ মিনিটে।
যশোরের অভয়নগরের বাবুল ফরাজির স্ত্রী রুমা বেগম (৩৫) বৃহস্পতিবার ভর্তি হন করোনা উপসর্গ নিয়ে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শুক্রবার দুপুরে মারা যান।
খুলনা মহানগরীর সোনাডাঙ্গা এলাকার বাসিন্দা মফিজ উদ্দিন আহমেদের পুত্র নাসিম আহমেদ(৬০) নিউমোনিয়া ও স্ট্রোক জনিত সমস্যা নিয়ে গতকাল দুপুরে মেডিসিন ৭-৮ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি হন। সেখান থেকে তাকে করোনা সন্দেহ ওয়ার্ডে রেফার্ড করা হয়। পরবর্তীতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ৩ টার দিকে মৃত্যুবরণ করেন।
নগরীর টুটপাড়া এলাকার মৃত: মৌলভী আহমেদ হোসেনের পুত্র ফিরোজ আহমেদ(৬৯) গতকাল সন্ধ্যা সাতটায় ভর্তি হন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি রাত সাড়ে আটটায় মৃত্যুবরণ করেন।
খুমেক হাসপাতালের আরএমও বলেন, গতকাল যে সাতজন করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন তাদের সকলেরই নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।
এর আগে গত ১৯ মার্চ খুমেক হাসপাতালে মংলার বাবুল চৌধুরী নামের একজন করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণ করেন। তিনিই খুলনার প্রথম করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণকারী ব্যক্তি। তবে তার নমুনা পরীক্ষা করা হয়নি। ১৯ মার্চ নড়াইলের শেখ রবিউল ইসলাম নামের একজনের মৃত্যু হলে তারও নমুনা পরীক্ষা হয়নি। ২৬ মার্চ মারা যান নগরীর হেলাতলার মোস্তাহিদুর রহমান রুবেল। ঢাকাস্থ আইইডিসিআর থেকে তার নমুনা পরীক্ষা করা হয়। কিন্তু ফলাফল আসে নেগেটিভ। নড়াইলের কালিয়ার পুরুলিয়া এলাকার সুলতান শেখের মৃত্যু হয় ২৯ মার্চ। চিকিৎসকরা বলেন, তার নমুনা পরীক্ষার প্রয়োজন। নেই। কেননা করোনার উপসর্গের বাইরে তার অন্য রোগ ছিল। ২ এপ্রিল মংলার সিগনাল টাওয়ারের হুমায়ুন কবির(৬৭) নামের একজনের মৃত্যু হয়। তার নমুনা পরীক্ষা হয়েছিল কি না জানা যায়নি। রূপসার দেবীপুরের সালেহা বেগমের মৃত্যু হয় ৬ এপ্রিল। তার নমুনাও পরীক্ষা করা হয় আইইডিসিআর থেকে। ফলাফল আসে নেগেটিভ। এরপর ৭ এপ্রিল থেকে খুলনা মেডিকেল কলেজে পিসিআর ল্যাব চালু হলে করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবারণকারীদের নমুনা এখানেই পরীক্ষা হয়।
এমন ব্যক্তিদের তালিকায় রয়েছেন ১০ এপ্রিল খালিশপুর ক্রিসেন্ট গেটের মো: রাকাব(৬মাস), ১৭ এপ্রিল রূপসার কাজদিয়ার মিতু(১০) ও নগরীর লবনচরার মো: আসাদুজ্জামান(২৪), ১৯ এপ্রিল পিরোজপুরের ইন্দুরকানির মাসুমা বেগম ও ডুমুরিয়ার ইকরামুল মোল্লা(নিজ বাড়িতে), ২১ এপ্রিল ফুলতলার মিজানুর রহমান ও লবনচরার ফেরদৌসী আরা, ২৫ এপ্রিল বাগেরহাটের কচুয়ার ফাতেমা(১৬ মাস), আড়ংঘাটার অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি(৬০) ও কেসিসির গাড়ি চালক কাজী শরিফুল ইসলাম মুক্তার(৪৫), ২৮ এপ্রিল পিরোজপুরের লিমা খাতুন(২৪), পয়লা মে বটিয়াঘাটার ফাতেমা(১), ২ মে দিঘলিয়ার ইসউসুফ আলী খান(৬০), ৫ মে মংলার কবির আহমেদ(৭০), ১০ মে টুটপাড়ার খাদিজা(৬৫), ১৩ মে ডুমুরিয়ার রাজিয়া(৬৫), ১৮ মে বটিয়াঘাটার কবিতা মন্ডল(৫৫), ৩০ মে সাতক্ষীরার কালীগঞ্জের আশরাফুর রহমান(৫৫) ও পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার সোহাগ হোসেন(২৫), ২ জুন যশোরের ঝিকরগাছার ফারুক হোসেন(৫২), শেখপাড়া বাগানবাড়ির নজরুল ইসলাম(৩৯) ও যশোরের মনিরামপুরের তহমিনা(৩৬), ৮ জুন দৌলতপুরের মিম(১২) ও সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটার রিপন(২২), ৯ জুন রায়েরমহলের দেলোয়ার হোসেন(৬৫), ১১ জুন খালিশপুর বঙ্গবাসি মোড়ের জান মোহাম্মদ(৮০), ১২ জুন দৌলতপুর কবির বটতলার শারাফাত হোসেন(৫০), খালিশপুর ক্রিসেন্ট বাজারের রাবেয়া(৫৯) ও যশোরের বেনাপোল পোর্ট থানার শাহারান(৬০), ১৩ জুন নগরীর ২৪/২, দেবেন বাবু রোডের এক নারী, ১৪ জুন খালিশপুর হাউজিংয়ের অবসরপ্রাপ্ত এসআই আবুল হোসেন(৭০), ১৬ জুন ফুলবাড়িগেটের রওশন মোল্ল্যা(৮৫) এবং ১৭ জুন খুলনা সদরের মনিকা বেগম(৬৫)। এদের সকলেরই নমুনা পরীক্ষার ফলাফল নেগেটিভ আসে।
তবে মৃত্যুর পর যে ছয়জনের ফলাফল পজেটিভ হয় তারা হলেন, ২১ এপ্রিল রূপসার রাজাপুরের নূর আলম খান ওরফে নূরুজ্জামান, ২০ মে দিঘলিয়ার সেনহাটির নজরুল ইসলাম(৫৫), ৫ জুন খালিশপুর ক্রিসেন্ট কলোনীর মুন্না আক্তার(৪০), ১৩ জুন নগরীর বাগমারার মনোয়ারা বেগম(৪৫), ১৪ জুন শেখপাড়ার নূর ইসলাম ব্যাপারী(৭২) এবং ১৭ জুন রূপসার নৈহাটি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান খান বজলুর রহমান(৬০)।