রোগীর চাপ, ঠাঁই নইে খুলনা
করোনা হাসপাতালে

এইচ এম আলাউদ্দিন ঃ খুলনার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক নারীর নমুনা পরীক্ষায় করোনা ধরা পড়ে। ছিলেন ওই হাসপাতালের আইসিইউতে। করোনার রোগীকে ওই হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয় না বিধায় তাকে নামিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। রোগীর স্বজনরা শরণাপন্ন হন খুলনা করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে। করোনা হাসপাতালে সম্প্রতি শয্যা সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। বেড়েছে আইসিইউ বেডও। সংযোজন হয়েছে ১০টি এইচডিইউ বেডও। মনে করা হয়েছিল এবার হয়তো করোনায় আক্রান্ত মুমূর্ষু রোগীরা অন্তত সেবা পাবেন। কিন্তু ওই রোগীকে যখন করোনা হাসপাতালে স্থানান্তরের চেষ্টা করা হলো তখন জানানো হলো অন্য কোন রোগীর মৃত্যু হলেই তারা বেড পাবেন। এমন করুণ অপেক্ষা আজ করতে হচ্ছে করোনা রোগীদের। একজন রোগীকে ভর্তির জন্য অপর রোগীর মৃত্যু কামনা(?) করতে হচ্ছে। খুলনায় করোনা আক্রান্ত ও মৃত্যুহার বেড়ে যাওয়ার ফলে এমন বাস্তবতা আজ মেনে নিতে হচ্ছে মানুষকে। মৃত্যুহার এমন অবস্থায় পৌঁছে গেছে যে, একটি রোগীর মৃত্যর দাগ শুকাতে না শুকাতে আর একজনের মৃত্যুর খবর আসছে। গতকাল শনিবার খুলনা করোনা হাসপাতালে চারজনের মৃত্যু হয়। এর আগে শুক্রবার সন্ধ্যায় মাত্র ৪০ মিনিটের ব্যবধানে মৃত্যু হয় দু’জনের। আবার রাত সাড়ে ১১টার পর মাত্র ২০ মিনিটের ব্যবধানে মৃত্যু হয় দু’জনের। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি এতোটাই ভয়াবহ যে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রতিনিয়ত মিটিং করছেন পরিস্থিতি সামাল দিতে। করোনা হাসপাতালের দ্বিতীয় ইউনিট কিভাবে করা যায় সেটিও ভাবছেন তারা।
একদিনে চার মৃত্যু ঃ খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আওতাধীন পরিচালিত করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল যে চারজনের মৃত্যু হয় তারা হলেন, নড়াইলের কালিয়ার সিংহাসপুরের আমিনুর রহমান মোল্লা(৮০), বাগেরহাটের শরণখোলার রাজাপুরের নুরুল ইসলাম (৭৫), মোড়েলগঞ্জের বহরবুনিয়ার মিজানুর আকন (৪৫) এবং খুলনা মহানগরীর রায়পাড়া মেইন রোডের রেহেনা বেগম (৬১)। এছাড়া আগের রাত ১১টা ৩৫ মিনিটের সময় মৃত্যু হয় যশোরের ঝিকরগাছার সিংহজুড়ির শহিতন বিবি(৫৭) এবং খুলনার দৌলতপুরের পাবলা বণিকপাড়ার গৌরাঙ্গ সাহা(৬৪)।
করোনা হাসপাতালের মুখপাত্র ডা: সুহাস রঞ্জন হালদার বলেন, কালিয়ার আমিনুর রহমান মোল্লা ৩১ মে ভর্তি হয়ে গতকাল ভোর ছয়টায়, শরণখোলার নূরুল ইসলাম শুক্রবার ভর্তি হয়ে গতকাল সকাল পৌনে ১০টায়, মোড়েলগঞ্জের মিজানুর আকন ২৮ মে ভর্তি হয়ে গতকাল বেলা পৌনে ১২টায় এবং নগরীর রায়পাড়ার রেহেনা বেগম গতকাল ভর্তি হয়েই গতকাল দুপুর ১২টা ৫৫ মিনিটে মৃত্যুবরণ করেন।
এর আগের রাতেও যেদিন ভর্তি হন সেদিন রাত ১১টা ৩৫ মিনিটের সময় মৃত্যুবরণ করেন যশোরের ঝিকরগাছার শহিতন বিবি এবং ২৯ মে ভর্তি হয়ে শুক্রবার দিবাগত রাত ১১টা ৫৫ মিনিটের সমূ মৃত্যুবরণ করেন, নগরীর দৌলতপুরের গৌরাঙ্গ সাহা।
শনাক্তের হার ঊর্ধ্বমুখি ঃ খুলনা মেডিকেল কলেজের আরটি পিসিআর ল্যাবে নমুনা পরীক্ষার পর আগে যে হারে শনাক্ত হচ্ছিল গত ২/৩দিন ধরে সে হার অনেক বেড়ে গেছে। গতকাল কিছুটা কম থাকলেও আগের দিন করোনা শনাক্তের হার ছিল ২৯শতাংশ। যদিও গতকাল হার কিছুটা কমে গিয়ে দাঁড়ায় ১৭.৩৭শতাংশে। খুলনা মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ ডা: মো: মেহেদী নেওয়াজ বলেন, গতকাল খুলনা ল্যাবে ২৮২টি নমুনা পরীক্ষার পর ৪৯ জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এর মধ্যে খুলনারই ছিল ৩৯জন। বাকী ১০জনের মধ্যে বাগেরহাটের নয়জন এবং বরিশালের ছিলেন একজন। এর আগের দিন ৩৭৬টি নমুনা পরীক্ষায় ১১০জনের করোনা শনাক্ত হয়। যার শতকরা হার ছিল ২৯ভাগ।
ঠাঁই নেই করোনা হাসপাতালে ঃ খুলনা করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে ২০টি আইসিইউ, ১০টি এইচডিইউ এবং রেডজোন ও ইয়োলো জোনে সর্বমোট ৭০টি বেড রয়েছে। গত ৩০ মে থেকে পূর্ণাঙ্গরূপে ১০০ বেড নিয়ে যাত্রা শুরু করে হাসপাতালটি। এর আগে আইসিইউ’র মাত্র ১০টি বেড ছিল। কিন্তু যেদিন থেকেই পূর্ণাঙ্গ ১০০ বেড নিয়ে যাত্রা হলো সেদিন থেকেই রোগীর পরিমাণ উর্দ্ধমুখি রয়েছে। করোনা হাসপাতালের প্রতিদিনকার চিত্রে দেখা যায়, গতকাল সকালে ছিল ১১৩জন রোগী, আগের দিন অর্থাৎ শুক্রবার ছিল ১১০জন, ৩ জুন ছিল ১১৫জন, ২জুন ছিল ১০৯জন এবং পয়লা জুন ছিল ৯৯জন। অর্থাৎ ১০০ বেডের এ হাসপাতালে অতিরিক্ত ২০টি বিছানা দিয়েও রোগীদের ঠাঁই দেয়া যাচ্ছে না।
বিভাগের চিত্রও একই ঃ খুলনা মহানগরীসহ আশপাশের এলাকার পাশাপাশি বিভাগের অন্যান্য জেলার চিত্রও প্রায় একই। বিভাগের ১০০ জেলায় গতকাল পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৩৫ হাজার ৭৪২জন, সুস্থ হয়েছেন ৩১ হাজার ৭৫৩জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ৬৬৬জন। এ তথ্য জানিয়েছেন বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা: রাশেদা সুলতানা। বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক দপ্তরের দৈনন্দিন করোনা সংক্রান্ত প্রতিবেদনে দেখা যায়, খুলনা বিভাগে গতকাল ছয়জন, আগের দিন চারজন, ৩ জুন তিনজন, ২ জুন পাঁচজন এবং পয়লা জুন তিনজনের মৃত্যু হয়।