এ এইচ হিমালয় ঃ খুলনায় ইন্টারনেট সেবাদাতা অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানই সরকার ঘোষিত ‘এক দেশ, এক রেট’ ঘোষণা বাস্তবায়ন করেনি। অল্প কিছু প্রতিষ্ঠান সরকারি বেঁধে দেওয়া দামে সেবা দিলেও ধীরগতির কারণে গ্রাহক তা’ ব্যবহার করতে পারছেন না। অধিকাংশ গ্রাহকই প্রতিষ্ঠানগুলোর বেঁধে দেওয়া বেশি দামেই ইন্টারনেট সেবা নিচ্ছেন।
এদিকে ইন্টারনেট সেবা দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো তদারকির কোনো ব্যবস্থা নেই খুলনায়। খুলনায় ইন্টারনেট সেবা দাতা প্রতিষ্ঠান কতোগুলো তারও কোনো পরিসংখ্যান নেই কোনো দপ্তরে। যে কারণে এখনও চড়া দামে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহার করতে হচ্ছে খুলনার মানুষকে।
গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে সারাদেশে ‘এক দেশ, এক রেট’ ইন্টারনেট সেবামূল্য বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক কমিশন (বিটিআরসি)। নতুন এই দামে ৫ এমবিপিএস ৫০০ টাকা, ১০ এমবিপিএস ৮০০ এবং ২০ এমবিপিএস এক হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি করতে হবে প্রতিষ্ঠানগুলোকে।
নগরীর বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, কোথাও সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে ইন্টারনেট সেবা পাওয়া যাচ্ছে না। খুলনার নৌ পরিবহন ব্যবসায়ী চৌধুরী মিনহাজ উজ জামান সজল বলেন, অফিসে ১০ এমবিপিএস ১ হাজার টাকা বিল দেই। সরকারি এক রেটের কথা বললে তারা জানিয়েছে, দাম কমালে ভালো গতির সেবা পাবেন না।
নগরীর শেখপাড়া পুরাতন মসজিদ এলাকার বাসিন্দা হোসাইন আহমেদ সোহাগ বলেন, ৫ এমবিপিএস ৭০০ টাকা রেট ছিলো। এখন ১০০ কমিয়ে ৬০০ টাকা করেছে। আসলে কতো এমবিপিএস দেয় ওরাই ভালো জানে।
খুলনার ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কতো সেই পরিসংখ্যান নেই কারও কাছে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খুলনায় বিটিআরসি থেকে নিবন্ধন নেওয়া ইন্টারনেট সেবাদাতার সংখ্যা (আইএসপি) ৩০ থেকে ৩৫ জন। আর নিবন্ধন ছাড়া ব্যবসা করছে প্রায় শতাধিক প্রতিষ্ঠান। তাদের মোট গ্রাহক সংখ্যা কতো তাও জানা যায়নি। ব্যবসায়ীদের ধারণা খুলনায় ব্রডব্রান্ড ইন্টারনেট গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ২৫ হাজার।
খুলনায় ইন্টারনেট ব্যবসায়ী সমিতি নামের একটি সংগঠন রয়েছে। বিটিআরসির নিবন্ধিত ২১টি প্রতিষ্ঠান নিয়ে এই সমিতি গড়ে তোলা হয়েছে।
সংগঠনের সহ-সভাপতি ও স্পিডনেট ইন্টারনেটের প্রধান ফেরদৌস তুষার বলেন, গত মাস থেকেই আমরা সরকারি রেট কার্যকর করেছি। কিন্তু ৫ এমবিপিএসের মধ্যে কী কী সেবা থাকবে বিটিআরসির প্রজ্ঞাপনে তা’ উল্লেখ করা নেই। যার কারণে ৫০০ টাকায় ৫ এমবিপিএস সেবা নিয়ে অনেকে ফেসবুক-ইউটিউব ব্যবহার করতে পারছেন না। যে কারণে তারা আগের প্যাকেজে ফিরে গেছেন।
তিনি বলেন, সারা দেশে এক রেট করলেও ব্যান্ডউইথের দাম সারা দেশে এক নয়। ঢাকায় যে দামে ব্যান্ডউইথ বিক্রি হয় খুলনায় তার থেকে বেশি দামে ব্যান্ডউইথ কিনতে হয়। এখন বেশি দামে কিনে আমরা কম দামে সেবা দেব কিভাবে?
সংগঠনের সভাপতি মোঃ জুবায়ের হোসেন পূর্বাঞ্চলকে বলেন, এক রেটের কারণে গ্রামের গ্রাহকরা বেশি সুবিধা পাবেন। কারণ গ্রাম পর্যায়ে ১ হাজার টাকার নিচে সংযোগ পাওয়া যায় না। এবার তারা কম মূল্যে সেবা পাবেন। কিন্তু খুলনা শহরের গ্রাহকদের খুব বেশি কাজে আসবে না। তিনি বলেন, খুলনা নগরীতে যারা সেবা দেন তারা অধিক গতির ইন্টারনেট সেবা পান কম টাকায়। সেই প্যাকেজ ৫০০ টাকার মধ্যে আনতে গেলে অনেকেই আগের মতো সেবা পাবেন না।
সার্বিক বিষয় নিয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তর খুলনার প্রোগ্রামার মোঃ আবুজর রহমান বলেন, ইন্টারনেট সেবা প্রতিষ্ঠানগুলো সরাসরি বিটিআরসি নিয়ন্ত্রণ করে। খুলনায় তাদের কোনো তথ্য দিতে হয় না। এজন্য তাদের কোনো তথ্য সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছে নেই। তিনি বলেন, এক দেশ, এক রেট বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো চিঠি আসেনি। বিটিআরসির নির্দেশনা পেলে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।