# কেন্দ্রে ভিড় ঠাসাঠাসিতে উধাও স্বাস্থ্যবিধি

এ এইচ হিমালয় ঃ ভবনের বাইরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রোদে দাঁড়িয়ে ক্লান্ত শিক্ষার্থীরা। দ্বিতীয়ধাপে ছোট্ট বারান্দা ও সিঁড়িতে গাদাগাদি করে দাঁড়াতে হচ্ছে। জায়গা না থাকায় একজনের সঙ্গে লেপ্টে আছে আরেক জন। তৃতীয় ধাপে টিকা কক্ষের ভেতরেও ভিড়-বিশৃংখলা। টিকা কেন্দ্রের বাইরে শিশুদের সঙ্গে জটলা বেঁধে দাঁড়িয়ে আছেন অভিভাবকরা। এমন ভিড়-ঠাসাঠাসি ও অব্যবস্থাপনার মধ্যে চলছে স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের টিকা কার্যক্রম।
এদিকে ১৫ জানুয়ারির মধ্যে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের টিকা কার্যক্রম সম্পন্ন করা নির্দেশনা দিয়েছিলো মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের। কিন্তু ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত খুলনার প্রায় ৫৭ হাজার শিক্ষার্থী এখনও টিকা পায়নি। এর মধ্যে মাধ্যমিক স্কুল ও কলেজের ৪৪ হাজার ৫৯৮ জন এবং মাদ্রাসা ও কারিগরী শিক্ষা বোর্ডের ১২ হাজার ৪২৯ শিক্ষার্থী টিকার বাইরে রয়ে গেছেন।
খুলনার মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস থেকে জানা গেছে, খুলনায় ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সী শিক্ষার্থী রয়েছে ২ লাখ ৩০ হাজার ৩৫৯ জন। ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত টিকা পেয়েছেন ১ লাখ ৭৩ হাজার ৩৫৬ জন। মূলত স্কুল ও মাদ্রাসার ৭ম শ্রেণি থেকে উচ্চ মাধ্যমিকের এইচএসসি পরীক্ষার্থী পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের টিকার আওতায় আনা হয়েছে।
গত ৩০ নভেম্বর থেকে খুলনা নগরী ও ১০ জানুয়ারি থেকে উপজেলা পর্যায়ে টিকা প্রদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে। নগরীর দুটি টিকা কেন্দ্রে এবং প্রত্যেক উপজেলায় একটি কেন্দ্রে শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়া হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের ফাইজারের টিকা দেওয়া হচ্ছে। টিকার মজুদ পর্যাপ্ত বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন।
গতকাল সোমবার সকালে নগর স্বাস্থ্য ভবন টিকা কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ লাইন। সকাল সাড়ে ৮টা থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন শিক্ষার্থীরা। অপ্রশস্ত জায়গায় ঘেঁষাঘেষি করে দাঁড়াতে হচ্ছে। তীব্র রোদে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। নগর স্বাস্থ্য ভবনের দ্বিতীয় ও দ্বিতীয় তলার সিড়িতেও শিক্ষার্থীদের দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। সেখানেও একজনের শরীরে আরেকজন লেপ্টে রয়েছে।
দুপুর সাড়ে ১২টায় নগরীর নিউজপ্রিন্ট মিল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র ফয়সাল বিশ্বাস বলেন, সকাল ১০টা থেকে রোদে দাঁড়িয়েছিলাম, এখন সিঁড়িতে দাঁড় করিয়েছে। কখন শেষ হয় জানি না।
ইউসেপ টেকনিক্যাল স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র পার্থ কুমার শীল বলেন, সকাল সাড়ে ৮টা থেকে লাইনে দাঁড়ানো। দাঁড়িয়ে থাকতে ক্ষুধা লেগে গেছে। টিকার জন্য অপেক্ষারত শিক্ষার্থীরা জানান, কমবেশি সবাই দুই থেকে সাড়ে ৩ ঘণ্টা পর্যন্ত লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন।
নগর স্বাস্থ্য ভবনের দ্বিতীয় তলায় টিকা কক্ষে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানেও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে জটলা বেঁধে আছেন বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষকরা। টিকা কক্ষে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য এসি ছাড়া হয়েছে। কিন্তু একসঙ্গে অনেক শিক্ষার্থী, দরজা উন্মুক্ত থাকায় সেটি তেমন কাজ করছে না।
টিকা কক্ষে ছাত্র ও ছাত্রীদের একই সঙ্গে পাশাপাশি বসিয়ে টিকা দেওয়া হচ্ছে। টিকার প্রদানের জন্য ছাত্রদের সামনে পোশাক খুলতে বিব্রত হচ্ছে নবম, দশম শ্রেণি ও কলেজ পর্যায়ের ছাত্রীরা। কিন্তু কক্ষে পৃথক কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি।
টিকা কক্ষে উপস্থিত খানজাহান আলী থানা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আল আমিন বলেন, আগে যে সব শিক্ষার্থীরা টিকা নিতে বাদ পড়েছেন তাদের এখন টিকা দেওয়া হচ্ছে। আজ থানার ২৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ২ হাজার ৭০ জনের টিকা নেওয়ার কথা রয়েছে। টিকা গ্রহণের জন্য স্কুল ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সব শিক্ষার্থী একই সময় চলে এসেছে। এজন্য ভিড় বেশি।
গত ১৬ জানুয়ারি নগরীর আরেক টিকা কেন্দ্র তালতলা হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানও শিক্ষার্থীদের জটলা। অল্প জায়গায় প্রায় ৫ শতাধিক শিক্ষার্থী লাইনে দাঁড়িয়েছিলো।
নগর ইকবালনগর বালিকা বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক জিয়াউস সাদাত বলেন, সকাল সাড়ে ৮টা থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে আড়াইটায় টিকা দিয়েছে। রোদের মধ্যে ভিড় ঠেলাঠেলিতে শিশুদের সীমাহীন দুর্ভোগে পোহাতে হচ্ছে। প্রতিদিনই এমন অব্যবস্থপনা চলছে।
কেসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. স্বপন কুমার হালদার বলেন, আমরা শুধু টিকা দিচ্ছি। শিক্ষার্থী আনা এবং সময় নির্ধারণ করার দায়িত্ব শিক্ষা বিভাগের। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের নিয়ে আসার কথা শিক্ষকদের। কিন্তু প্রতিটি শিক্ষার্থীর সঙ্গে অভিভাবক এসেছেন। ৫০০ শিক্ষার্থীর সঙ্গে ৫০০ অভিভাবক আসলে জটলা তো হবেই। এছাড়া শিক্ষার্থীরা অল্প বয়সী হওয়ায় স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টি শুনছে না। তারা নিজেরাই গায়ে গায়ে মিশে দাঁড়ানো, হইচই করছে। তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে স্বেচ্ছাসেবকরাও ক্লান্ত।
খুলনার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা খো. রুহুল আমিন বলেন, নানা কারণে প্রথম দিকে টিকা প্রদানের হার কম ছিলো, পরে বেড়েছে। ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত ৭৫ শতাংশ শিক্ষার্থী টিকা পেয়েছেন। প্রতিদিনই টিকা কার্যক্রম চলছে। চলতি মাসের মধ্যেই সব শিক্ষার্থীকে প্রথম ডোজ দেওয়া শেষ হবে।