# উপসর্গ হলেই পরীক্ষা বাধ্যতামূলক
# খুমেক হাসপাতালে এক রোগী ভর্তি
# বিভাগে ৭ মাসে মোট শনাক্ত ৩১জন
# খুমেক হাসপাতালে মোট শনাক্ত ১২

এইচ এম আলাউদ্দিন ঃ ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’-এর ন্যায় এবার ‘করোনার ওপর ডেঙ্গু’ এসে দেখা দিয়েছে। তবে এটি ঢাকায় ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়লেও খুলনায় আতংক হওয়ার মতো কিছু এখনও হয়নি। কিন্তু স্বাস্থ্য বিভাগের মাথার ওপর পড়েছে বাড়তি চাপ। করোনার পাশাপাশি ডেঙ্গু প্রতিরোধেও নিতে হচ্ছে প্রস্তুতি। এজন্য ইতোমধ্যে খুলনা মেডিকেল কলেজ ও খুলনা জেনারেল হাসপাতালসহ প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জ¦র-কাশির রোগীদের করোনা পরীক্ষার সাথে সাথে ডেঙ্গুর জন্যও আইজিএম ও আইজিজি এবং এনএস-১ কমপক্ষে এ পরীক্ষাগুলো বাধ্যতামূলক করতে বলা হয়েছে। তাছাড়া কোন কোন ক্ষেত্রে রক্তের প্লাটিলেট পরীক্ষাও করা যেতে পারে। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য পৃথক ওয়ার্ড করা হচ্ছে। আগামী বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে সভা আহবান করা হয়েছে। এছাড়া খুলনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গতকাল বিকেলে অনুষ্ঠিত জেলা করোনা বিষয়ক সভায়ও করোনার পাশাপাশি ডেঙ্গু প্রতিরোধের ওপর জোর দেয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে ডেঙ্গু নিয়ে আতংক না থাকলেও খুলনায় প্রস্তুতিতে কোন ঘাটতি রাখা হচ্ছে না বলে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে।
খুমেক হাসপাতাল ঃ খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা: মো: রবিউল হাসান বলেন, করোনার পাশাপাশি ডেঙ্গু বিষয়েও তাদের প্রস্তুতি চলছে। হাসপাতালের মেডিসিনি ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা এক রোগীর নমুনা পরীক্ষায় রোববার ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। তাকে আপাতত ৫/৬ নম্বর ওয়ার্ডে রেখে চিকিৎসা দেয়া হলেও গতকালই তারা ডেঙ্গুর জন্য পৃথক ওয়ার্ডের জন্য জায়গা দেখেছেন। হাসপাতালে ৪র্থ তলার কয়েকটি কক্ষ দেখা হয়েছে। তবে এ নিয়ে আগামী বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় মিটিং ডাকা হয়েছে। ওই মিটিংয়ে পৃথক ওয়ার্ড করা, ডেঙ্গু বিষয়ক চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য কর্মচারীদের সমন্বয়ে কমিটি করা, মুখপাত্র নিয়োগ দেয়াসহ বিস্তারিত বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। তাছাড়া এখন থেকে সম্ভাব্য রোগীদের ক্ষেত্রে করোনার পাশাপাশি ডেঙ্গু পরীক্ষাও বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু কীটের কোন সংকট নেই বলেও জানান তিনি।
হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার(বিটিসি) ডা: মো: জিল্লুর রহমান (তরুণ) বলেন, ডেঙ্গু রোগীদের জন্য মূলত প্রয়োজন রক্ত। রক্তের মজুদ না থাকলেও রক্তদাতাদের তালিকা তাদের কাছে রয়েছে। ফেসবুকে এ সংক্রান্ত একাধিক গ্রুপও আছে। সুতরাং রক্তের প্রয়োজন হলে দ্রুত তাদেরকে রক্তের যোগান দেয়া যাবে। অনলাইন প্রচারণার সুবাদে রক্ত মজুদ রাখার প্রয়োজন নেই বলেও তিনি জানান। প্রয়োজন শুধু তালিকা, সেটি তাদের আছে।
হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিগত আট মাস ধরে সেখানে রোগতত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট(আইইডিসিআর) থেকে নিয়োগপ্রাপ্ত একজন মেডিকেল টেকলোজিষ্ট কাজ করছেন। আ: রহিম মিয়া নামের ওই মেডিকেল টেকনোলজিষ্টের কাজই হচ্ছে ডেঙ্গু বিষয়ক কোন রোগীর পরীক্ষা হলে সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ ও ফলাফলসহ আইইডিসিআর এ পাঠানো। তার সাথে এ কাজে সহযোগিতা করছেন প্যাথলজী বিভাগের দু’জন মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট যথাক্রমে প্রদীপ কুমার পাল ও মো: শফিকুল ইসলাম এবং নাসিমা খানম নামের একজন নার্স।
খুমেক হাসপাতাল থেকে আইইডিসিআর-এ পাঠানো প্রতিবেদনে গত বছর ডিসেম্বর মাসে ৪৪টি নমুনা পরীক্ষায় দু’জন, এ বছরের জানুয়ারিতে ৩৪টি নমুনা পরীক্ষায় দু’জন, জুন মাসে আটটি নমুনা পরীক্ষায় তিনজন, জুলাইতে ১৯টি নমুনা পরীক্ষায় চারজন এবং গত পয়লা আগষ্ট একটি নমুনা পরীক্ষায় একজনের অর্থাৎ মোট ১২জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়। এছাড়া ফেব্রুয়ারিতে ৩১টি, মার্চে ৩০টি এবং এপ্রিলে ১১টি নমুনা পরীক্ষা হলেও কারও ডেঙ্গু শনাক্ত হয়নি। তবে মে মাসে কোন পরীক্ষা হয়নি।
অর্থাৎ সব মিলিয়ে বিগত আট মাসে খুমেক হাসপাতালে ১৭০টি নমুনা পরীক্ষার পর ১২জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়। এর মধ্যে একজন বর্তমানে চিকিৎসাধীন আছেন। তারা খুলনাসহ বিভিন্ন জেলার বলেও সূত্রটি জানায়।
আগের শনাক্ত হওয়া সকলেই ইতোমধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেও শুধুমাত্র ১ আগষ্ট শনাক্ত হওয়া বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জের কচুবুনিয়ার সজিব(৩২) নামের রোগীটি হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। গতকাল সেখানে গিয়ে খোঁজ-খবর নেন হাসপাতালের পরিচালক ডা: মো: রবিউল হাসান ও আরএমও ডা: সুহাস রঞ্জন হালাদার। সজিব নামের ওই রোগী জানান, তিনি ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরী করেন এবং তার স্ত্রী সিনিয়র স্টাফ নার্স। সম্প্রতি তিনি ঢাকায়ই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন। পরে তিনি খুলনায় এসে এ হাসপাতালে ভর্তি হন।
এদিকে, গতকাল বিকেলে বাগেরহাটের রামপাল থানার বাশতলি এলাকা থেকে অতিস নামের চার বছরের এক শিশুকে ডেঙ্গু সন্দেহে ভর্তি করা হয়। রাতে ভর্তি করা হয় লিংকন ঘোষ(১০) নামের আরও একজনকে। তার বাড়ি নড়াইলের লোহাগড়া থানার লুটিয়া এলাকায়। তাদের দু’জনকে অবশ্য শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার তাদের পরীক্ষার পর ডেঙ্গু কি না সেটি নিশ্চিত হওয়া যাবে।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তর ঃ খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক দপ্তরের সহকারী স্বাস্থ্য পরিচালক(রোগ নিয়ন্ত্রণ) ডা: ফেরদৌসী আক্তার বলেন, ডেঙ্গু নিয়ে খুলনার অবস্থা এখন পর্যন্ত ভালো। বিভাগের ১০ জেলার মধ্যে চলতি বছরের শুরু থেকে গতকাল পর্যন্ত ৩১জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এর মধ্যে যশোরের ২৩জন, নড়াইলের তিনজন এবং কুষ্টিয়ায় একজন রয়েছেন। এছাড়া খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চারজনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয় বলে তিনি জানান। তবে তারা কে কোন জেলার সে তথ্য তার কাছে নেই।
জেনারেল হাসপাতাল ঃ খুলনা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ও খুলনার সিভিল সার্জন ডা: নিয়াজ মোহাম্মদ বলেন, খুলনা জেলার মধ্যে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুর রিপোর্ট শূন্য। তবে জেনারেল হাসপাতালের প্যাথলজী বিভাগে পর্যাপ্ত কীট মজুদ আছে। এখন থেকে করোনার পাশাপাশি জ¦র-সর্দি-কাশির রোগীদের ডেঙ্গু পরীক্ষাও বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। জেলার প্রতিটি উপজেলা থেকেও তথ্য সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠানো হয়। যেখানে গতকাল পর্যন্ত কোন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়নি বলে দেখানো হয়। তবে খুলনা জেনারেল হাসপাতালে এ পর্যন্ত ১১টি নমুনা পরীক্ষা হলেও কারো ডেঙ্গু শনাক্ত হয়নি বলেও তিনি জানান।
কেসিসি ঃ খুলনা সিটি কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা: স্বপন কুমার হালদার বলেন, ডেঙ্গু বিষয় নিয়ে কেসিসির মূলত দু’টি বিভাগ কাজ করে। একটি কঞ্জারভেন্সি বিভাগ অপরটি স্বাস্থ্য বিভাগ। কঞ্জারভেন্সি বিভাগ আগে থেকেই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করছে। আর স্বাস্থ্য বিভাগের ব্যবস্থাপনায় প্রচারণা প্রতিনিয়ত চলছে। বিশেষ করে মাইকিং ও লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে। এছাড়া নগরীর বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাও প্রচারণার কাজ চালাচ্ছে। সার্বিক বিষয় নিয়ে প্রতিনিয়তই তদারকি করছেন সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক। স্বাস্থ্যকর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে বলছেন, কারো জ¦র হলেই যেন ডাক্তারের কাছে নেয়া হয়। এছাড়া সকাল-সন্ধ্যায় শিশুদের ঝোপঝাড়ের মধ্যে যেতে না দেয়া, দিনে বা রাতে যে কোন সময় মশারি টানিয়ে ঘুমানো ইত্যাদি বিষয়ে সচেতন করা হচ্ছে।
ডেঙ্গুর জন্য চাহিদা ঃ ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য এই মুহূর্তে খুমেক হাসপাতালের জন্য সেল্ফ সেপারেটর মেশিন প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন(বিএমএ) ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ(স্বাপিচ) এর সাধারণ সম্পাদক এবং খুলনা মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ ডা: মো: মেহেদী নেওয়াজ। তিনি বলেন, ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় প্লেটেলেট প্রদান কার্যক্রম নিশ্চিতে সেল্ফ সেপারেটর মেশিন প্রয়োজন। যার মাধ্যমে সুস্থ মানুষের রক্ত হতে প্লেটেলেট আলাদা করে প্রয়োজনে ডেঙ্গু আক্রান্তদের শরীরে দেওয়া যাবে।