বিশ্ব ক্যান্সার দিবস আজ

খুমেকের ক্যান্সার ইউনিট শুধু নামেই
১০০ শয্যার হাসপাতাল নির্মাণে গতি নেই

এ এইচ হিমালয় : দূরারোগ্য ব্যাধি ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ক্যান্সার ইউনিট চালু হয় ২০১৪ সালের ১৮ অক্টোবর। সেখানে শয্যা মাত্র ৮টি। নেই প্রয়োজনীয় জনবল, চিকিৎসা সরঞ্জাম। বিশাল একতলা ভবনের বেশিরভাগ কক্ষই ফাঁকা পড়ে আছে। ওষুধ পুরোটাই বাইরে থেকে কিনতে হয় রোগীদের। বাইরে থেকে কিনে আনা কেমো হাসপাতালের শয্যায় রেখে রোগীর শরীরে দেওয়া হয়। তাও দিনের বেলায়।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্যান্সার বিভাগের কার্যক্রম বলতে এটুকুই। প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীরা আসেন খুলনায়। কিন্তু রেডিওথেরাপিসহ ক্যান্সারের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না নিয়ে ফিরতে হয় তাদের অনেককে। এমন অবস্থায় ২০১৮ সালে খুলনায় একটি ১০০ শয্যার ক্যান্সার হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিলো স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। কিন্তু সিদ্ধান্তেই থমকে আছে সেই কার্যক্রম। ফলে ক্যান্সার চিকিৎসা এখনও অধরাই থেকে গেছে খুলনার নিম্নবিত্ত মানুষের কাছে।
এমন পরিস্থিতিতে আজ খুলনাসহ সারাদেশে পালিত হচ্ছে বিশ্ব ক্যান্সার দিবস। এ বছর দিবসের প্রতিপাদ্য ‘সূচনায় পড়লে ধরা, ক্যান্সার রোগ যায় যে সারা’। এ উপলক্ষে র‌্যালি ও আলোচনা সভার আয়োজন করেছে খুলনা মেডিকেল কলেজের অনকোলজি বিভাগ।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে জানা গেছে, ক্যান্সার ইউনিট চালুর পর ২০১৫ সালের ৩ মার্চ অনকোলজি বিভাগের জন্য নতুন একতলা ভবন উদ্বোধন করা হয়। ২০১৬ সালে রেডিওথেরাপি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন ডা. মুকিতুল হুদা। গতবছর আরও দুই চিকিৎসককে এই বিভাগে আনা হয়। তারাই এখন বর্হিবিভাগে ক্যান্সারের রোগী দেখছেন।
সূত্রটি জানায়, ২০১৮ সালে ক্যান্সার ইউনিটের বর্হিবিভাগে ৩ হাজার ৬ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। কেমোথেরাপি দিয়েছেন ২ হাজার ২৫৯ জন। ২০১৯ সালে রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাড়িয়েছে ৫ হাজার ৪০৪ জনে। কেমো দিয়েছেন ২ হাজার ৯৯৪ জনে। ২০২০ সালে করোনার মধ্যেও অক্টোবর মাস পর্যন্ত চিকিৎসা নিয়েছেন ২ হাজার ৯৮৯ জন রোগী। কেমো দিয়েছেন ২ হাজার ১০২ জন।
গতকাল বুধবার সকালে ক্যান্সার ইউনিটের সামনে গিয়ে দেখা গেছে, বিভিন্ন জেলা থেকে আসা রোগীর স্বজনরা মূল ফটকের সামনে বসে আছেন। ফটকের সামনেই বাক্সবন্দি অবস্থায় পড়ে আছে লিনিয়ার অ্যাকসেলারেটর মেশিন। অসময়ে অপ্রয়োজনীয় যন্ত্র কিনে সরকারের প্রায় ১০ কোটি টাকা লুটপাটের স্বাক্ষী হয়ে আছে যন্ত্রটি। একতলা ভবনের ভেতরে বামপাশে চিকিৎসকের কক্ষে সমানে রোগীদের জটলা। ডান পাশে একটি কক্ষে ৮টি শয্যা। সেখানে রোগীদের কেমোথেরাপি দেওয়া হচ্ছে।
সাতক্ষীরার সদর উপজেলা থেকে মা মনোয়ারা বেগমকে নিয়ে কেমো দিতে এসেছেন সাদ্দাস হোসেন। সমকালকে বলেন, ২১ দিন পর পর কেমো দিতে হচ্ছে। ওষুধ বাইরে থেকে কিনে আনি। হাসপাতালে শুধু পুশ করে দেয়। ওষুধ কিনতে অনেক টাকা লাগে। হাসপাতালে কোনো টাকা লাগে না।
হাসপাতালের ক্যান্সার ইউনিটের সিনিয়র স্টাফ নার্স লতিফা খাতুন বলেন, ইউনিটে ৮ জন নার্স প্রয়োজন। কিন্তু বর্তমানে কাজ করছে মাত্র ৪ জন। কোনো ওয়ার্ড বয়, আয়া, সুইপার নেই। এখানে ওষুধেরও কোনো ব্যবস্থা নেই।
তিনি বলেন, অপ্রতুল বরাদ্দ নিয়েই আমরা সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। আগে সপ্তাহে তিন দিন ৮ জন করে রোগীকে কেমোথেরাপি দেওয়া হতো। রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় এখন সপ্তাহে ৫ দিন, কোনো কোনো সপ্তাহ ৬ দিনও কেমোথেরাপি দেওয়া হয়। আগে এক শিফটে কেমো দেওয়া হতো এখন দিনে তিন শিফটে প্রায় ২৪ জন রোগীকে কেমো দেওয়া হচ্ছে। জরুরী হলে চেয়ারে অথবা শয্যা ভাগাভাগি করে কেমো দেওয়া হয়।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্যান্সার ইউনিটের দায়িত্বে রয়েছেন রেডিওথেরাপি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মুকিতুল হুদা। তিনি বলেন, প্রতিদিন গড়ে ৪ জন করে ক্যান্সারে আক্রান্ত নতুন রোগী আসেন। এছাড়া ফলোআপ রোগী আসেন প্রতিদিন গড়ে ২৫-৩০ জন। সীমিত সামর্থের মধ্যে আমরা সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করি।
তিনি জানান, হাসপাতালে রেডিওথেরাপি দেওয়ার জন্য নতুন একটি ভবন নির্মাণ কাজ প্রায় শেষের পথে। এরপর রেডিওথেরাপি মেশিন এবং দক্ষ জনবলের জন্য চিঠি দেওয়া হবে। পাশাপাশি ওষুধের জন্য বরাদ্দ চেয়ে চিঠি দেওয়া হবে।