স্টাফ রিপোর্টার ঃ বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১১টা থেকে গতকাল শুক্রবার বেলা পৌনে ১২টা পর্যন্ত অর্থাৎ ১৩ ঘন্টায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুবরণকারী চারজনই খুলনার বাসিন্দা। এ হাসপাতালে আগের দিনও দু’জনের মৃত্যু হয়। এভাবেই হঠাৎ করে খুলনায় করোনায় মৃত্যু বেড়ে গেছে। আবার বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, ঈদের দিন থেকে শুরু করে গত পরশু অর্থাৎ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বিগত সাত দিনে বিভাগের ১০ জেলায় মৃত্যু হয়েছে ১৭ জনের।
এদিকে, খুলনা মহানগরীর খালিশপুরের নির্মাণাধীন খুলনা ৩৩০ মেগাওয়াট ডুয়েল ফুয়েল কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্রে গত ১৮ এপ্রিল থেকে গতকাল পর্যন্ত সর্বমোট ৮৫ জন চিনা নাগরিকের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এর মধ্যে ইতোমধ্যে ২২ জনের পুন:পরীক্ষায় ফলাফল নেগেটিভ আসে। অর্থাৎ এখনও ৬৩জন আইসোলেশনে রয়েছেন। যদিও তাদের অবস্থা এখন ভালো বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রের উপ-প্রকল্প পরিচালক।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার(আরএমও) এবং করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের মুখপাত্র ডা: সুহাস রঞ্জন হালদার বলেন, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত পৌনে ১১টায় আ: আজিজ(৫৭) নামের একজনের মৃত্যু হয়। তিনি নগরীর দৌলতপুর থানাধীন রেলীগেটের বাসিন্দা। করোনায় আক্রান্ত হয়ে তিনি গত ১০ মে এ হাসপাতালে ভর্তি হয়ে বৃহস্পতিবার রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরন করেন। গতকাল ভোররাত চারটা ১০ মিনিটে মৃত্যুবরণ করেন ইদ্রিস আলী(৬৫) নামের একজন। তিনি নগরীর সোনাডাঙ্গা মডেল থানাধীন খানজাহান আলী রোডের বাসিন্দা। করোনায় আক্রান্ত হয়ে তিনি গত ১৭ মে এ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। গতকাল শুক্রবার সকাল পৌনে ১০টায় মৃত্যুবরণ করেন পারুল বালা(৮০) নামের একজন। তিনি খুলনা জেলার বটিয়াঘাটা উপজেলার কল্যাণশ্রী এলাকার বাসিন্দা। ১৯ মে তিনি এ হাসপাতালে ভর্তি হন। এছাড়া গতকাল বেলা পৌনে ১২টার দিকে মৃত্যু হয় ঠাকুর চন্দ্র পাল(৭৫) নামের একজনের। তিনি খুলনা জেলার রূপসা উপজেলার আলাইপুর পিঠাভোগের বাসিন্দা। তিনি এ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ১৬ মে।
খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের দপ্তর থেকে সরবরাহকৃত নিয়মিত করোনা সংক্রান্ত প্রতিবেদনে ঈদ-উল-ফিতরের আগের দিন অর্থাৎ গত ১৩ মে পর্যন্ত বিভাগের ১০ জেলায় মৃত্যুর সংখ্যা ছিল। আর গতকালকের প্রতিবেদনে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৬১০জন। অর্থাৎ বিগত এক সপ্তাহে বিভাগের ১০ জেলায় মৃত্যু হয় ১৭ জনের। আবার বিগত এক সপ্তাহে শনাক্ত হয় ৬৮৮জনের। বিগত ২৪ ঘন্টায় খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় মৃত্যু দেখানো হয় নয়জনকে।
এ ব্যাপারে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা: রাশেদা সুলতানা বলেন, এক সপ্তাহের মধ্যে গতকালই সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ছিল বিভাগে। হঠাৎ করে মৃত্যুর কারণ কি সেটি এই মুহূর্তেই বলা যাচ্ছে না। আরও এক সপ্তাহ দেখার পর হয়তো বলা যাবে এর কারণ কি।
অপরদিকে, খুলনা মেডিকেল কলেজের আরটি পিসিআর ল্যাবে গতকাল ১৮৮টি নমুনা পরীক্ষার পর ৪৪ জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে খুলনার ৪০জন, বাগেরহাটের একজন, সাতক্ষীরার দু’জন এবং যশোরের একজন রয়েছেন। খুলনা মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ ডা: মো: মেহেদী নেওয়াজ এ তথ্য জানিয়েছেন।
চীনা নাগরিক ৮৫জন আক্রান্ত ঃ খুলনার খালিশপুরের ৩৩০ মেগাওয়াট ডুয়েল ফুয়েল কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কর্মরত ১৮৫ জনের মধ্যে এ পর্যন্ত ৮৫ জন চীনা নাগরিকের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। কেন্দ্রের উপ-প্রকল্প পরিচালক মো: জাহিদ হোসেন বলেন, শনাক্ত হওয়া চীনা নাগরিকদের মধ্যে গতকাল পর্যন্ত ২২জনের পুন:পরীক্ষায় নেগেটিভ ফল এসেছে। বাকী ৬৩জন নিজ নিজ কক্ষেই আইসোলেশনে আছেন। তবে চীনা নাগরিকদের মধ্যে কোন উপসর্গ না থাকলেও তারা নিয়মিত পরীক্ষার পরই এটি ধরা পরে বলে তিনি উল্লেখ করেন। এজন্য পজেটিভ হওয়াদের নিয়ে আতংকের কিছু নেই।