/ খুলনা ওয়াসায় ব্যাপক রদবদল চলছে, স্বস্তি ফিরেছে কার্যালয়ে

খুলনা ওয়াসায় ব্যাপক রদবদল চলছে, স্বস্তি ফিরেছে কার্যালয়ে

২০ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বদলী, তালিকায় আরও ডজন

মিটার চুরির দায়ে কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা

দীর্ঘদিন ধরে কাজ না করেই বেতন তোলেন ইউনিয়ন নেতারা, তাদের বিষয়েও কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার দাবি

এ এইচ হিমালয়: দীর্ঘ বছর পরে খুলনা ওয়াসায় আঞ্চলিক কার্যালয়গুলোতে ব্যাপক রদবদল শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে দুই জন কর্মকর্তা এবং ১৮ জন কর্মচারীকে ৪টি আঞ্চলিক কার্যালয় ও বিভিন্ন দপ্তরে বদলী করা হয়েছে। বদলীর তালিকায় রয়েছেন আরও প্রায় দেড় ডজন কর্মচারী। দীর্ঘদিন পর এই রদবদলে আঞ্চলিক কার্যালয়গুলোতে স্বস্তি ফিরে এসেছে।

এদিকে মিটার চুরির ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে উপ-সহকারী প্রকৌশলী আফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে। একই প্রতিবেদনে অভিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত সহকারী প্রকৌশলী রফিকুল আলম সরদারকে শোকজ করা হয়েছে। আর দুটি কার্যালয়ের মিটার চুরির তদন্ত প্রতিবেদন জমা পড়েছে। প্রতিবেদনটি সভায় উত্থাপনের পর আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।

ওয়াসা থেকে জানা গেছে, খুলনায় ওয়াসায় কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় আড়াই শতাধিক। এর মধ্যে দুইশ’ বেশি কর্মচারী। প্রতিষ্ঠান ছোট হলেও ওয়াসা কর্মচারীদের বেশ কয়েকটি সংগঠন রয়েছে। পাম্প অপারেটর, অঙ্গণবিদসহ কর্মচারীদের বড় একটি অংশের দৃশ্যমান কাজ কম। তারা সারাদিন কর্মচারী ইউনিয়ন, কর্মচারী সমিতি কার্যালয়ে আড্ডা এবং কাজ না থাকায় বিভিন্ন ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কুৎসা, কর্মকর্তাদের হুমকি, টেন্ডার, পাইপ লাইন সংযোগের মাধ্যমে বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়েন।

সূত্রটি জানায়, গতবছর ৫ আগস্ট অভ্যুত্থানের পর কর্মচারী ইউনিয়নের নেতারা বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। আর্থিক সুবিধা নিয়ে নানা অভিযোগে অভিযুক্ত সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবদুল্লাহর মেয়াদ বাড়াতে রাজনৈতিক নেতাদের কাছে তদবির, মন্ত্রণালয়ে ছোটাছুটিসহ বিভিন্ন কাজ করেন তারা। এতে ব্যর্থ হয়ে তারা আরও বেপরোয় হয়ে ওঠেন। পছন্দ মতো বদলী, ঠিকাদারি কাজের কমিশনসহ বিভিন্ন কাজ আদায়ে জেষ্ঠ্য প্রকৌশলী হুমকি ও লাঞ্চিত করেন কয়েকজন। অফিস সূচির তোয়াক্কা না করে ইচ্ছে মতো কার্যালয়ে আসা-যাওয়া শুরু করেন। দীর্ঘদিন ধরে একই পদে দায়িত্ব পালন করায় অনেকেই কর্মকর্তাদের সঙ্গে উগ্র আচরণ করেন। আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে নতুন ও পুরাতন মিটার চুরি করে বিক্রি করে দেওয়ারও ঘটনা ঘটে। সবমিলিয়ে ওয়াসা কার্যালয়ের কাজের পরিবেশ ভেঙে পড়ে।

এ অবস্থায় ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব পান খুলনার অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার আবু সায়েদ মো. মনজুর আলম। তিনি কার্যালয়ে স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে নানামুখী পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করেন। তার অংশ হিসেবে গত ৩ আগস্ট একসঙ্গে ১৬ কর্মচারীকে বিভিন্ন আঞ্চলিক কার্যালয় ও দপ্তরে বদলী করা হয়। এই বদলী বন্ধ করতে কর্মচারী নেতারা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের চাপ প্রয়োগ করে। কিন্তু জেষ্ঠ্য কর্মকর্তারা অনড় থাকায় তারা সুবিধা করতে পারেননি। গত ১১ আগস্ট ইউনিয়নের সাবেক দুই নেতাকে বদলী করা হয়। ১২ আগস্ট বদলী করা হয় দুই সহকারী প্রকৌশলীকে।

সূত্রটি জানায়, সবচেয়ে বেশি অভিযোগ যাকে নিয়ে কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জি এম আবদুল গফফারকে এখনও বদলী করা হয়নি। অংকনবিদ হিসেবে কাজ না থাকায় তিনিই সবচেয়ে বেপরোয় আচরণ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। একই সঙ্গে সভাপতি কবির হোসেনসহ ইউনিয়নের অন্য নেতাদের মধ্যে যাদের বিরুদ্ধে কাজে ফাঁকিসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে-তাদের এবং এছাড়া ১০/১২ বছর ধরে একই পদে থাকা ব্যক্তিদের দ্রুত সময়ের মধ্যে বদলি করার দাবি রয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, পাম্প অপারেটর হিসেবে দায়িত্বরতদের নিয়মিত কাজ না করার অভিযোগ সবচেয়ে বেশি। দেখা যায়, নির্ধারিত সময় পাম্প চালু করে তারা ব্যক্তিগত কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তাদের পক্ষে পরিবারের সদস্যরাই পাম্প চালান ও বন্ধ করেন। আধুনিক প্রযুক্তির যুগে পানির পাম্প চালু ও বন্ধ করতে পৃথক জনবল কাজে লাগানোর বিষয়টি অনেককে অবাক করে।

খুলনা ওয়াসার সচিব প্রশান্ত কুমার বিশ্বাস বলেন, দীর্ঘদিন ধরে একই স্থানে দায়িত্ব পালন করায় অনেকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে। পদ অনুযায়ী কর্মচারী, কর্মকর্তাদের পর্যায়ক্রমে বদলী করা হচ্ছে। আগামীতে আরও কয়েকজনকে বদলী করা হবে।
তিনি বলেন, মিটার চুরির প্রতিবেদন পাওয়ায় একজনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে। অন্যজনকে শোকজ করা হয়েছে। অন্য প্রতিবেদন খুব শিগগিরই উপস্থাপন করা হবে। তখন সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।

খুলনা ওয়াসার ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু সায়েদ মো. মঞ্জুরুল আলম বলেন, প্রতিষ্ঠানটিকে শৃংখলা ফেরানোর চেষ্টা চলছে। বদলী কার্যক্রম চলবে। ঢাকা থেকে আইসিটি এক্সপার্ট আনা হচ্ছে। তাদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে কর্মচারীদের হাজিরা, বেতন ভাতা সব সফটওয়্যারের ভিত্তিতে হবে।

তিনি জানান, মিটার চুরির বিষয়ে থানায় মামলা হয়েছে। একজনের বিষয়ে বিভাগীয় মামলা হয়েছে। পুলিশকে বলা হয়েছে দ্রুত তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে। খুব দ্রুতই খুলনা ওয়াসায় শৃংখলা ফিরে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।