সারাদেশে অতিবৃষ্টির প্রভাবে জনজীবন বিপর্যস্ত #ভেসে গেছে কয়েক হাজার ঘের
সারাদেশজুড়ে কয়েকদিন ধরে টানা বৃষ্টিপাতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দেখা দিয়েছে ব্যাপক বিপর্যয়। খুলনা, চট্টগ্রাম, বরিশাল ও ঢাকা বিভাগে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণের ফলে ফসলের ক্ষতি, শহরজুড়ে জলাবদ্ধতা ও পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ফেনীতে ভারী বৃষ্টিপাত ও ভারতের উজানের পানিতে মুহুরী ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের অন্তত দশটি স্থান ভেঙে ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হচ্ছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন হাজারো মানুষ।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকায় আগামী ৪৮ ঘণ্টা বৃষ্টির প্রবণতা আরও বাড়বে।
খুলনায় ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে ৫৮ মিমি, আর মংলায় ১১৩ মিমি। ডুমুরিয়া উপজেলার শৈলমারী ১০-ভেন্ট রেগুলেটর পলি জমে অচল হয়ে পড়েছে, ফলে পাঁচটি ইউনিয়নে প্লাবনের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ধান ও শাকসবজির ব্যাপক হয়েছে। জেলার অনেক ঘের ভেসে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ফুলতলায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে এক যুবকের মৃত্যুর ঘটনা জনমনে উদ্বেগ তৈরি করেছে।
বাংলাদেশ কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের খুলনা ও বরিশাল অঞ্চলের তথ্য অনুযায়ী,প্রায় ৩,০০০ হেক্টরের বেশি জমি আংশিক বা পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ধান, আলু, পেঁয়াজ, কাঁচামরিচ, বেগুন। খুলনা বিভাগে ধান, শাকসবজি চারা ডুবে গেছে। বাগেরহাট,খুলনা ও সাতক্ষিরায় ভেসে গেছে শত শত ঘের।
বরিশাল বিভাগের পটুয়াখালীতে বৃষ্টিপাত হয়েছে ২৪৮ মিমি, খেপুপাড়ায় ১১৫ মিমি। বরিশালে মাঠে পানি জমে থাকা পানিতে লাউ, কাঁচামরিচ, টমেটো, বেগুনসহ নষ্ট হয়েছে বিভিন্ন সবজি।
এদিকে প্রবল বর্ষণে বিপর্যস্ত চট্টগ্রাম বিভাগ। চট্টগ্রাম শহর ও আশপাশের পাহাড়ি অঞ্চলে পাহাড় ধসের সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ফেনীতে সর্বোচ্চ ৪৪০ মিমি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যা ২০০৫ সালের রেকর্ডকেও ছাড়িয়ে গেছে। সীতাকুÐে গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত হয়েছে ১১২ মিলিমিটার। পাহাড়ি জেলাগুলোতে মানুষজনকে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে জেলা প্রশাসন।
মৌসুমি বায়ু সক্রিয় রয়েছে দক্ষিণাঞ্চলে এবং মোটামুটি সক্রিয় সারাদেশে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল ও ঢাকা বিভাগে ৫০ থেকে ২৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা বন্দরে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত জারি করা হয়েছে।
ঢাকা বিভাগের ঢাকা মিরপুর,ধানমন্ডি ও পুরান ঢাকার একাধিক এলাকায় রাস্তাঘাট জলমগ্ন। নর্দমা উপচে পড়ায় বাসাবাড়িতে পানি ঢোকার অভিযোগ পাওয়া গেছে। নারায়ণগঞ্জে রেকর্ড বৃষ্টিপাত হয়েছে ৪১ মিমি। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে না থাকায় মশাবাহিত রোগের আশঙ্কা প্রবল। চট্টগ্রামে নষ্ট হয়েছে বিভিন্ন সবজি, পাহাড়ি ফল। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে ,গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে।
বিশেষ সতর্কতা: চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের ঝুঁকি রয়েছে। ঢাকাসহ বড় শহরগুলোতে জলাবদ্ধতা ও ডেঙ্গু পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।
বন্যা পরিস্থিতি: শঙ্কা কতটুকু?বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র জানায় বন্যার আশঙ্কা আপাতত নেই। দেশের প্রধান নদ-নদীসমূহ যেমন ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, পদ্মা, সুরমা, কুশিয়ারা সব কটির পানিই বিপদসীমার নিচে রয়েছে। ফেনীর মুহুরি নদী ও বান্দরবানের সাঙ্গু নদীতে পানির স্তর সতর্ক পর্যায়ে পৌঁছেছে।