স্টাফ রিপোর্টার ঃ খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে শুধু লাশ আর লাশ। গতকাল রোববার একদিনেই করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন ১১জন। এটি এ হাসপাতালের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেকর্ড। প্রতিদিনই ভাঙছে মৃত্যুর রেকর্ড। বাড়ছে রোগীর সংখ্যাও। কোন বেডই সামান্য সময়ের জন্য খালি হচ্ছে না। একজনের মৃত্যু হচ্ছেতো ওই বেডেই আর একজনকে ওঠানো হচ্ছে। আবার বেড না পেয়ে অনেককেই মেঝেতেও চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। দিন যতই যাচ্ছে ততোই করোনা রোগী বাড়ছে। গতকাল সকালেও এ হাসপাতালে রোগী ছিল ১৬০জন। অথচ বেড মাত্র ১৩০টি।
১৩০ শয্যার এ করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের সূত্রটি বলছে, শনিবার দিবাগত রাত একটা ১০ মিনিট থেকে গতকাল রোববার বিকেল চারটা ২০ মিনিট পর্যন্ত সর্বমোট ১১জনের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে রাত একটা ১০ মিনিট থেকে ছয়টা ২০ মিনিট পর্যন্ত পাঁচ ঘন্টায়ই মৃত্যু হয় ছয়জনের। অর্থাৎ ঘন্টায় একজনেরও বেশি মৃত্যু। ইদানিংকালে এ হাসপাতালে মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত সময়ের মধ্যেই বেশি রোগীর মৃত্যু হয় বলে দেখা যাচ্ছে। এর কারণ সম্পর্কে মুখ খুলতে নারাজ অনেকেই। মৃত্যুর পর লাশ নিয়ে স্বজনদের আহাজারিতেও সেখানকার বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। যে কারণে কেউ আর মৃত্যুর আসল কারণ খুঁজতে যায় না। তবে হাসপাতালে অবস্থানরত রোগীর স্বজনরা বলছেন, শেষ রাতে স্বাস্থ্য কর্মীদের খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছেন, রোগীর তুলনায় জনবল কম থাকায় এমনটি হতে পারে। তার পরেও করোনা ইউনিটে যারা ডিউটি করছেন তারা অনেক শ্রম দিচ্ছেন বলেও হাসপাতালের পরিচালক ডা: মো: রবিউল হাসান জানিয়েছেন।
খুমেক হাসপাতালে করোনা ইউনিটে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শনিবার দিবাগত রাত একটা ১০ মিনিটে মৃত্যু হয় চুয়াডাঙ্গার বাঁকা জীবন নগর এলাকার মো: লুৎফর রহমান মন্ডলের(৮০)। তাকে এ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় ২৫ জুন।
রাত দেড়টায় মৃত্যু হয় সাতক্ষীরার আশাশুনি থানার পুই জলা এলাকার আবু মুছা(৬৫) নামে একজনের। তাকে ভর্তি করা হয় ৩ জুন।
রাত তিনটার দিকে মৃত্যু হয় খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার মির্জাপুর এলাকার পূণ চন্দ্র মন্ডল(৫২) নামে একজনের। তাকে ভর্তি করা হয়েছিল ২৫ জুন।
এর মাত্র আধাঘন্টা পর অর্থাৎ রাত সাড়ে তিনটায় মৃত্যু হয় বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার গোনা বেলাই এলাকার মৃনাল কান্তি সরকার(৭৫) নামে একজনের। তাকেও ২৫ জুন ভর্তি করা হয়েছিল।
সাতক্ষীরার তালা উপজেলার মেহেন্দি এলাকার বাসিন্দা মো: সিফাতুল্লাহ শেখ(৮৫) নামের এক রোগীর মৃত্যু হয় রাত চারটা ৫০ মিনিটে। তাকে এ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় ১৭ জুন।
সকাল ছয়টা ২০ মিনিটে মৃত্যু হয় নগরীর খানজাহান আলী থানাধীন ফুলবাড়িগেট এলাকার বাসিন্দা তারা মিয়ার(৫০)। তাকে ভর্তি করা হয়েছিল ২২ জুন।
গতকাল বেলা ১১টায় মৃত্যু হয় নগরীর মৌলভীপাড়া এলাকার ফেরদৌসী ইসলাম(৫৮) নামে এক রোগীর। তাকে আগের দিন অর্থাৎ শনিবার এ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
গতকাল ভর্তি হয়ে গতকালই বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মৃত্যু হয় আকলিমা বেগম(৬৫) নামে এক রোগীর। তিনি নগরীর খানজাহান আলী থানাধীন শিরোমনি এলাকার বাসিন্দা।
গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মৃত্যু হয় ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের লাইলী বেগম(৬৭) নামে এক রোগীর। তাকে ভর্তি করা হয়েছিল ২৩জুন।
গতকাল বেলা আড়াইটায় মৃত্যু হয় খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার কোমরপুরের বাসিন্দা আম্বিয়া(৩৫) নামে এক রোগীর। তাকে গত ১৮ জুন ভর্তি করা হয়।
বিকেল চারটা ২০ মিনিটে মৃত্যু হয় বাগেরহাটের মোংলার শেলাবুনিয়া এলাকার বাসিন্দা প্রদীপ সরদারের(৬৩)। তাকে গত ১১ জুন এ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এদিকে, বিগত ২৪ ঘন্টার হিসাব উল্লেখ করে গতকাল সকালে এ হাসপাতালের মুখপাত্র ডা: সুহাস রঞ্জন হালদার বলেন, ওই সময় করোনা আক্রান্ত হয়ে এ হাসপাতালে নয়জনের মৃত্যু হয়। আবার জেনারেল হাসপাতালের মুখপাত্র ডা: কাজী আবু রাশেদ বলেন, আগের ২৪ ঘন্টায় সেখানে দু’জনের মৃত্যু হয়। এরা হলেন, বাগেরহাটের কাশিমপুর এলাকার আতিয়ার রহমান মল্লিক(৬৫) এবং সাতক্ষীরার কালীগঞ্জের অলি উল্লাহ(৬৭)।
এছাড়া বিগত ২৪ ঘন্টায় খুলনার গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনজনের মৃত্যু হয়। এরা হলেন, খালিশপুরস্থ শামসুল আলম(৬৩), সাতক্ষীরার পলাশপুরের আব্দুস সামাদ(৭৫) এবং ঝর্ণা বেগম(৪৬)।
খুমেক ল্যাবে ১৮৪ শনাক্ত ঃ খুলনা মেডিকেল কলেজের আরটি পিসিআর ল্যাবে গতকাল ৪৬৪টি নমুনা পরীক্ষার পর ১৮৪জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে বলে খুমেক’র উপাধ্যক্ষ ডা: মো: মেহেদী নেওয়াজ জানিয়েছেন। এদের মধ্যে খুলনার ১৩২জন, বাগেরহাটের ৪০ জন, সাতক্ষীরার তিনজন, যশোরের তিনজন, নড়াইলের একজন, পিরোজপুরের একজন, গোপালগঞ্জের একজন এবং ঢাকার একজন।
খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক দপ্তরের প্রতিবেদনে বলা হয়, বিগত ২৪ ঘন্টায় বিভাগের ১০ জেলায় ১২০২জনের করোনা শনাক্ত হয়। এ নিয়ে বিভাগে এ পর্যন্ত করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৫২ হাজার ১৬৭জন। এর মধ্যে এ পর্যন্ত সুস্থ্য হয়েছেন ৩৬ হাজার ৬১৫জন।