থাকছে ২০টি আইসিইউ এবং
১০টি এইচডিইউসহ ১শ’ বেড

এইচ এম আলাউদ্দিন ঃ পরিপূর্ণ করোনা হাসপাতালের যাত্রা শুরু হচ্ছে আজ থেকে। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউ ভবনে স্থাপিত করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় আজ থেকে ২০টি আইসিইউ(নিবিড় পরিচর্চাকেন্দ্র) ও ১০টি এইচডিইউ(উচ্চমাত্রিক নির্ভরকেন্দ্র) বেড চালু হচ্ছে। আর নিচ তলায় থাকছে করোনা শনাক্ত হওয়া রোগীদের জন্য রেডজোনে ৪০ বেড এবং করোনা সন্দেহে ভর্তি হওয়া ইয়োলো জোনে ৩০টি বেড। সব মিলিয়ে একশ’ বেডের পরিপূর্ণ করোনা হাসপাতালে আজ রোববার থেকে রোগী রাখা হবে বলে জানিয়েছেন খুমেক হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার(আরএমও) এবং করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের মুখপাত্র ডা: সুহাস রঞ্জন হালদার।
এদিকে, বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টার অস্থায়ী গ্রীড হাসপাতাল থেকে পাঠানো স্পেক্ট্রা কোম্পানীর অক্সিজেন প্লান্ট স্থাপনের জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন মিলেছে। ২/১দিনের মধ্যেই প্লান্টটি বসানোর কার্যক্রম শুরু হতে পারে বলে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর(এইচইডি) খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী আশুতোষ কর্মকার বলেছেন। স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর প্লান্টটি স্থাপনের জন্য ৯৭ লাখ টাকার চাহিদাপত্র দিয়েছিল। সেটি মন্ত্রণালয় অনুমোদন দেয়ায় এখন দ্রুতই প্লান্টটির স্থাপন কাজ শুরু হবে বলেও তিনি আশা করছেন।
সব মিলিয়ে খুমেক হাসপাতালের আইসিইউ ভবনই এখন পর্যন্ত চূড়ান্তভাবে করোনা হাসপাতালে পরিণত হলো। করোনার প্রভাব না কমা পর্যন্ত এটিই খুলনার করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল হিসেবে বহাল থাকবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। আর খুমেক হাসপাতালের আইসিইউ রোগীদের রাখা হবে পূর্বের পোষ্ট অপারেটিভ সেন্টারের চারটি বেডে।
খুমেক হাসপাতালের করোনা প্রতিরোধ ও চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা কমিটির সমন্বয়কারী ও খুলনা মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ ডা: মো: মেহেদী নেওয়াজ বলেন, খুলনা ১০০ শয্যা বিশিষ্ট করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালটি পরিপূর্ণতা পাওয়ায় মূমূর্ষ রোগীদের সাপোর্ট দেয়া সম্ভব হবে। গত মার্চ মাসে যখন করোনার প্রভাব প্রকট আকার ধারণ করে তখন মাত্র ১০টি আইসিইউ বেড থাকায় চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছিল না। বাধ্য হয়ে রোগীদেরকে প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে যেতে হতো। কিন্তু এখন আর তার প্রয়োজন হবে না বলে আশা করা হচ্ছে। এর ফলে আইসিইউ’র উপযোগী রোগীদেরও রেডজোনে রেখে শুধুমাত্র হাইফ্লো ন্যাজেল ক্যানোলা দিয়ে সেবা দেয়া হয়। এখন আর সেই সংকট থাকবে না বলেও তিনি উল্লেখ করেন। এছাড়া বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টার অস্থায়ী গ্রীড হাসপাতাল থেকে সরবরাহকৃত লিকুইড অক্সিজেন প্লান্ট স্থাপনের জন্য স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর যে আর্থিক প্রস্তাবনা দিয়েছিল সেটিও অনুমোদন হয়েছে। সুতরাং এখন আর অক্সিজেনের কোন সংকট থাকবেনা করোনা হাসপাতালে।
হাসপাতালের সাথে সংশ্লিষ্ট অপর একটি সূত্র জানায়, লিকুইড অক্সিজেন প্লান্ট না থাকায় বিকল্পভাবে হাসপাতালের ও.টি ও পোষ্ট অপারেটিভ সেন্টারের জন্য স্থাপিত লিন্ডে কোম্পানীর অক্সিজেন প্লান্ট দিয়ে পাইপ লাইনের মাধ্যমে করোনা হাসপাতালে অক্সিজেন সরবরাহ করা হচ্ছে। এরপর স্পেক্ট্রা কোম্পানীর লিকুইড অক্সিজেন প্লান্ট স্থাপন হলেই করোনা হাসপাতালটি অক্সিজেনের ক্ষেত্রে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে।
উল্লেখ্য, করোনার প্রভাব শুরু হলে গত বছর(২০২০) মার্চ মাসের শেষের দিকে তড়িঘড়ি করেই খুলনা ডায়াবেটিক হাসপাতালকে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল ঘোষণা দিয়ে এপ্রিল মাস থেকে এর যাত্রা শুরু হয়। চলে ওই বছরের নভেম্বর পর্যন্ত। এরপর করোনার প্রভাব কিছুটা কমে আসলে ডায়াবেটিক হাসপাতাল ছেড়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউ ভবনকে করোনা হাসপাতাল করা হয়। কিন্তু সেখানে ১০০ শয্যার হাসপাতাল বলা হলেও এতোদিন ১০টি আইসিইউসহ ৭০ থেকে ৮০টি বেড ছিল। সর্বশেষ ওই ভবনের দ্বিতীয় তলাকে পুরোপুরি আইসিইউ এবং এইচডিইউ’র জন্য কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়। বিগত প্রায় এক মাস যাবত সেখানে অক্সিজেন পাইপ লাইনসহ অন্যান্য কার্যক্রম সম্পন্ন করে পরিপূর্ণ আইসিইউ ও এইচডিইউ’র জন্য উপযুক্ত করা হয়। আজ থেকে যার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হচ্ছে।