৮ লাখ টাকা রাজস্ব
হারানোর আশংকা

এইচ এম আলাউদ্দিন ঃ খুলনা জেনারেল হাসপাতালের মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমের টেন্ডারে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এজন্য ৫৫ লাখ টাকা বরাদ্দ হলেও টেন্ডারে রয়েছে শুভংকের ফাঁকি। এর ফলে সরকার প্রায় আট লাখ টাকা রাজস্ব হারাতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, খুলনা জেনারেল হাসপাতালের মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম বাস্তবায়নের লক্ষ্যে চলতি অর্থ বছরের(২০২০-২১) জন্য বরাদ্দ করা হয়েছিল ৫৫ লাখ টাকা। এজন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে অর্থ ছাড় দেয়া হয় গত ২৮ মে। অর্থাৎ মাত্র এক মাসের মধ্যে প্রশাসনিক অনুমোদন আনা, টেন্ডার আহবান করা, টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা, কার্যাদেশ দেয়া এবং মালামাল সংগ্রহ করতে হবে। তড়িঘড়ি করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এজন্য একটি টেন্ডারও আহবান করেন। ঢাকার মাত্র চারটি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়ার মধ্যদিয়ে টেন্ডার প্রক্রিয়া বর্তমানে চলমান রয়েছে। কিন্তু দরপত্র দাখিলেই প্রায় আট লাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকির চিত্র ফুটে উঠেছে। চারটির মধ্যে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান দরপত্রের শর্ত মোতাবেক মোট মূল্যের ২% জামানাত স্বরূপ এক লাখ ৯৪ হাজার টাকা এবং বাজার দরের চেয়ে ৫ থেকে ৬% কমমূল্যে মালামাল সরবরাহ করার কথা বললেও অপর তিনটি প্রতিষ্ঠানই জামানাত দিয়েছে মাত্র এক হাজার ২৫৮টাকা এবং বাজার দর অনুযায়ীই মালামাল সরবরাহের কথা উল্লেখ করেছে। হিসাব করলে দেখা যায় চাহিদা অনুযায়ী মালামালের মোট মূল্য দাঁড়ায় ৯৪ লাখ ১৯ হাজার ২৫০ টাকা। যার ২% জামানাত হয় এক লাখ ৮৮ হাজার ৩৮৫ টাকা। অর্থাৎ কমপক্ষে ওই এক লাখ ৮৮ হাজার ৩৮৫ টাকাই জামানত দিতে হবে। কিন্তু একটিমাত্র প্রতিষ্ঠান ঢাকার ওয়ার্সি সার্কিক্যাল দরপত্রের শর্ত অনুযাযী ২%এর চেয়েও বেশি অর্থাৎ এক লাখ ৯৪ হাজার টাকা জামানত দেয়। আর বাকী তিনটি প্রতিষ্ঠান যথাক্রমে ঢাকার তোপখানা রোডের জুরাইরা ইন্টারন্যাশনাল, এইচ এন্ড এইচ ট্রেডার্স এবং জোবায়ের সার্কিক্যাল দেয় মাত্র ১২৫৮ টাকা করে। অর্থাৎ শুধুমাত্র জামানতেই রাজস্ব ফাঁকি দেয়া হয়েছে এক লাখ ৮৭ হাজার ১২৭ টাকা। এছাড়া ওয়ার্সি সার্কিক্যাল দরপত্রে উল্লেখিত মালামালের বাজারদরের চেয়েও গড়ে প্রায় ৬% মূল্য কম দিয়ে দরপত্র দাখিল করে বলে জেনারেল হাসপাতালের হিসাব বিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়। এখানেও অন্তত সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা কম মূল্যে মালামাল সরবরাহের কথা বলেছে ওয়ার্সি সার্জিক্যাল। কিন্তু অপর তিনটি প্রতিষ্ঠান বাজার দর অনুযায়ী মালামাল সরবরাহের কথা উল্লেখ করেছে।
এভাবে দরপত্র দাখিল হলেও যে প্রতিষ্ঠান বাজার দরের চেয়ে প্রায় ৬% কম মূল্যে মালামাল সরবরাহের কথা বলেছে এবং জামানাতও দিয়েছে প্রায় দু’লাখ টাকা সেখানে কয়েকটি মালামালের নমুনা সরবরাহ না করার অজুহাতে ওই প্রতিষ্ঠানের দরপত্র বাতিল করা হচ্ছে বলে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।
এ বিষয়ে খুলনা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ও খুলনার সিভিল সার্জন ডা: নিয়াজ মোহাম্মদ বলেন, তিনি ক্রয় কমিটির আহবায়ক হলেও পুরো বিষয়টি দেখভাল করছেন হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা: এস, এম মুরাদ হোসেন। তিনি এ ব্যাপারে আরএমও’র সাথে কথা বলার অনুরোধ জানান।
আরএমও ডা: এস, এম মুরাদ হোসেন বলেন, দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী যে প্রতিষ্ঠান ১২৫৮ টাকা জামানাত দাখিল করেছে তারা একক মূল্য ধরে জামানত নির্ধারণ করেছে। অর্থাৎ প্রতিটি পণ্যের একটির মূল্য এখানে ধরা হয়েছে। কিন্তু দরপত্রের শর্তে মোট মূল্যের ২% উল্লেখ করা হলেও একটি করে পণ্যের মূল্য ধরে জামানত ধরাটা কতটা যৌক্তিক জানতে চাইলে তিনি কোন যক্তি ছাড়াই বলেন, এটিই সঠিক। আবার যে প্রতিষ্ঠান এক লাখ ৯৪ হাজার টাকা জামানত দিয়েছে এবং বাজার দরের চেয়েও কম মূল্যে পণ্য সরবরাহের কথা উল্লেখ করেছে সে প্রতিষ্ঠানও দরপত্রের শর্তও ভঙ্গ করেছে বলেও আরএমও উল্লেখ করেন। অর্থাৎ সব মালামালের নমুনা দেয়নি বলেও তিনি জানান।
এ প্রসঙ্গে অবশ্য ওয়ার্সি সার্জিক্যালের স্বত্ত্বাধিকারি রফিকুল ইসলাম বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে বেশ কয়েকটি পণ্যের নমুনা দেয়া হলেও সামান্য কয়েকটির নমুনা যথা সময়ে খুলনায় পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। তবে মালামাল সরবরাহের আগে অবশ্যই নমুনা দেখিয়ে অনুমোদন সাপেক্ষে নির্দিষ্ট পণ্য সরবরাহ করা হবে।
অন্য তিনটি প্রতিষ্ঠানের জামানত সম্পর্কে তিনি বলেন, এটি কোন দরপত্রের নিয়মের মধ্যে পড়ে না। যেখানে ৫৫ লাখ টাকা বরাদ্দই হয়েছে এবং চাহিদা মোতাবেক মালামাল কেনার কথা বলা হয়েছে ৯৪ লাখ টাকারও বেশি, সেখানে ১২৫৮ টাকা জামানত দেয়ার অর্থই হচ্ছে সরকারের বিপুল পরিমান রাজস্ব ফাঁকি দেয়া। এটি নিয়ম বহির্ভুত। এভাবে টেন্ডার সম্পন্ন হলে এবং ওই প্রতিষ্ঠান তিনটির যে কোন একটিকে কার্যাদেশ দেয়া হলে তিনি আইনের আশ্রয় নেবেন বলেও উল্লেখ করেন।
অপরদিকে, জুরাইরা ইন্টারন্যাশনালের স্বত্ত্বাধিকারী হারুন অর রশীদের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, জামানত কত টাকা দেয়া হয়েছে সেটি তার মনে নেই, তার স্টাফরা জানেন। এছাড়া খুলনা জেনারেল হাসপাতালের টেন্ডার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি মিটিংয়ে আছেন জানিয়ে পরে কথা বলার কথা বলে লাইনটি কেটে দেন।
উল্লেখ্য, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হসপিটাল সার্ভিসেস ম্যানেজমেন্ট এর লাইন ডাইরেক্টর ডা: মো: খুরশীদ আলম স্বাক্ষরিত গত ২৮ মে’র এক অফিস আদেশে খুলনা জেনারেল হাসপাতালের জন্য বর্জ্য সংরক্ষণ বিন, পচনশীল বর্জ্য সংরক্ষণ ব্যাগ, নিডল কাটার, ডেসট্রয়ার, বর্জ্য পরিবহন ট্রলী ও নিরাপত্তামূলক সামগ্রী বাবদ ৫৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। এজন্য খুলনা জেনারেল হাসপাতালের পক্ষ থেকে গত ২ জুন টেন্ডার আহবান করা হয়। নির্ধারিত দিনে গত ১৬ জুন চারটি প্রতিষ্ঠান দরপত্র দাখিল করে বলে হাসপাতালের আরএমও জানান।