প্রকাশের বাইরেও জড়িত
থাকতে পারেন অনেকে

স্টাফ রিপোর্টার ঃ খুলনা ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট(ল্যাব:) প্রকাশ কুমার দাসের বিরুদ্ধে বিদেশগামীদের করোনা টেষ্টের প্রায় দুই কোটি ৫৮ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়েছে। বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক দপ্তরের তিন সদস্য বিশিষ্ট এ কমিটির সদস্যরা গতকাল সরেজমিনে হাসপাতালে গিয়ে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেন।
এদিকে, এ তদন্তের মধ্যদিয়েই বেরিয়ে আসতে পারে থলের বিড়াল। বিশেষ করে সরকারি টাকা আত্মসাতের সাথে শুধু মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট(ল্যাব:) প্রকাশ কুমার দাসই নন, এর সাথে জড়িত থাকতে পারেন আরও অনেকে। সেটিও খতিয়ে দেখছে কমিটি। বিশেষ করে হিসাব বিভাগের সাথে যারা আগে থেকেই জড়িত ছিলেন বা আছেন, ঠিকাদারের মাধ্যমে আউটসোর্সিং কর্মচারী হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত করোনাকালীন সময়ে যারা নিয়োজিত ছিলেন এমনকি আদায়কৃত ইউজার ফি সঠিকভাবে সরকারি কোষাগারে জমা হচ্ছে কি না সেটি দেখার দায়িত্ব যাদের ওপর তাদেরও কেউ কেউ জড়িত থাকতে পারেন এমনটিও মনে করছেন তদন্ত কমিটির সদস্যরা। তবে আপাতত: এ বিষয়ে মুখ খুলতে নারাজ তারা। তদন্ত কমিটির একটি সূত্র বলছে, তদন্ত কেবল শুরু হলো, যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়ার আগে কিছুই বলা যাচ্ছে না। তবে সে ক্ষেত্রে যে ১৫ দিনের সময় দেয়া হয়েছে সেটি আরও একদফা বাড়ানোর প্রয়োজন হতে পারে বলেও মনে করছেন কেউ কেউ। সব মিলিয়ে গতকাল সোমবার তদন্ত কমিটির সদস্যদের হাসপাতাল পরিদর্শন ও বেশ কয়েকজনের জবানবন্দি রেকর্ড করার পর অনেকের মধ্যে আতংকের ছাপ দেখা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তদন্ত কমিটির একজন সদস্য বলেন, গতকাল জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে মোট আটজনের বক্তব্য গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার(আরএমও) ডা: এসএম মুরাদ হোসেনসহ প্যাথলজি ও হিসাব বিভাগের সাথে সংশ্লিষ্ট অনেকে রয়েছেন। এর বাইরেও কেএমএসএস নামের একটি বেসরকারি সংস্থার সরবরাহ করা বেশকিছু আউটসোর্সিং কর্মচারীও করোনার প্রথম দিকে নমুনা সংগ্রহের সাথে জড়িত ছিলেন। তাদেরও বক্তব্য গ্রহণ করা হবে বলেও ওই সদস্য জানান। আরও যারা এ ঘটনার সাথে জড়িত থাকতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে তাদেরকেও জিজ্ঞাসাবাদ করে বক্তব্য রেকর্ড করা হবে। গতকাল সকাল ১০টা থেকে দুপুর পর্যন্ত তদন্ত চলে। যাদের বক্তব্য রেকর্ড করা হয়েছে তাদের কাছে যেসব রেকর্ড চাওয়া হয়েছে তার মধ্যে যারা ওই সময় দিতে পারেননি তারা আজ মঙ্গলবার স্বাস্থ্য পরিচালকের দপ্তরে গিয়ে কাগজপত্র জমা দেবেন বলেও তিনি জানান।
অপরদিকে, গতকালকের তদন্তের পর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ও খুলনার সিভিল সার্জন এবং হাসপাতালের আরএমওকে অনেকটা বিমর্ষ দেখা গেছে। তদন্ত কমিটির সদস্যরা আরএমওসহ অন্যান্যদের কাছে যে ধরনের লিখিত প্রশ্ন করেছেন তাতে প্রকাশের বাইরেও অনেকের জড়িত থাকার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। যে কারণে যেটি আগে মনে করা হয়েছিল যে, প্রকাশ একাই ওই টাকা আত্মসাতের সাথে জড়িত সেটি হয়তো নাও হতে পারে বলেও অনেকে মনে করছেন। তবে আর যাই হোক প্রকৃত দোষীরা চিহ্নিত হোক এবং তাদের সঠিক বিচার হোক এমনটিও মনে করছেন সচেতন মহল।
উল্লেখ্য, সরকারি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ প্রাথমিক তদন্তে প্রমানিত হওয়ায় গত ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে জেনারেল হাসপাতালের এমটি(ল্যাব:) প্রকাশ কুমার দাস লাপাত্তা হন। এরপর প্রকাশের বিরুদ্ধে সিভিল সার্জন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত দেন। লিখিত অভিযোগ দেয়া হয় দুর্নীতি দমন কমিশনেও। এছাড়া কেএমপি কমিশনার বরাবর লিখিত দিয়ে প্রকাশ যাতে দেশ ত্যাগ করতে না পারেন সেজন্য সহযোগিতা কামনা করা হয়। কিন্তু সেই থেকে গতকাল পর্যন্ত প্রকাশের কোন সন্ধান মেলেনি। এ ব্যাপারে সিভিল সার্জন ডা: নিয়াজ মোহাম্মদ কেএমপির খুলনা থানায় সাধারণ ডায়রীও করেছেন। সর্বশেষ বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক দপ্তর থেকে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হলে গতকাল থেকে কমিটির সদস্যরা আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেন। কমিটির সভাপতি করা হয় বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক দপ্তরের উপ-পরিচালক ডা: মো: মনজুরুল মুরশিদকে এবং দু’জন সদস্য হলেন, একই দপ্তরের সহকারী পরিচালক(প্রশাসন) ডা: সৈয়দ রেজাউল ইসলাম এবং খুলনা মেডিকেল সাব ডিপো’র সহকারী পরিচালক ডা: মো: রফিকুল ইসলাম গাজী।