* এক মাসেও খোঁজ মেলেনি এমটি(ল্যাব:) প্রকাশের
* মামলার অনুমতি পায়নি দুর্নীতি দমন কমিশন

স্টাফ রিপোর্টার ঃ দ্বিতীয় দফায় সময় বাড়িয়ে এখনও অগ্রগতি হয়নি তদন্তের। খুলনা ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট(ল্যাব:) প্রকাশ কুমার দাসের বিরুদ্ধে দুই কোটি ৫৮ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগের বিষয়টি এখনও তদন্ত পর্যায়ে রয়েছে। তবে দুর্নীতি দমন কমিশন বা দুদকের পক্ষ থেকে এখনও এ ব্যাপারে কোন মামলা দায়ের করা হয়নি। দুদকের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ অনুমোদন না পাওয়ায় তারা এটি নিয়ে সামনে এগুতে পারছেন না। অবশ্য কেএমপির খুলনা থানার অফিসার ইনচার্জ বলেছেন, দুদক মামলা করলেই সেটি রেকর্ড করা হবে। আর স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, খুলনার সিভিল সার্জন সংশ্লিষ্ট সব জায়গায় এমটি(ল্যাব:) প্রকাশ কুমার দাসের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এখন সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
এদিকে, খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের দপ্তর গঠিত তদন্ত কমিটির কার্যক্রমের ২১ কার্যদিবস গতকাল অতিবাহিত হলেও এখনও তেমন কোন অগ্রগতি হয়নি। ১৫ কর্মদিবসের সময় দিয়ে তদন্ত কমিটি গঠণ করা হলেও কমিটি আরও ১৫ দিনের সময় চাওয়ায় দ্বিতীয় দফায় সময় বর্ধিত করা হয়। এজন্য আরও নয় কর্মদিবস সময় এখনও হাতে রয়েছে। কিন্তু ওই সময়ের মধ্যেও তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দাখিল করতে পারবে কি না সেটি নিয়েও সংশয় রয়েছে। সব মিলিয়ে এক মাসেরও বেশি সময় অতিবাহিত হলেও যেমন জেনারেল হাসপাতালের মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট(ল্যাব:) প্রকাশ কুমার দাসের সন্ধান পাওয়া যায়নি, তেমনি শুধুমাত্র তদন্তের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে এর অগ্রগতি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, গত ২৩ সেপ্টেম্বর দুপুর থেকে প্রকাশ কুমার দাস নিখোঁজ হন। খুলনা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক কাম সিভিল সার্জন ডা: নিয়াজ মোহাম্মদের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্টে প্রকাশের বিরুদ্ধে বিদেশগামীদের করোনা টেষ্টের দুই কোটি ৫৮ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। ওই টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেয়ার জন্য তাকে চাপ দেয়া হলে তিনি গত ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে তিনি গা ঢাকা দেন। পরে ২৭ সেপ্টেম্বর সিভিল সার্জন ডা: নিয়াজ মোহাম্মদ কেএমপির খুলনা থানায় প্রকাশের বিরুদ্ধে ওই টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে জিডি করেন। এর আগের দিন তিনি কেএমপি কমিশনারের কাছে লিখিত দিয়ে প্রকাশ যাতে দেশ ত্যাগ করতে না পারেন সেজন্য পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ জানান। এছাড়া তিনি খুলনা দুদকের কাছেও লিখিত দিয়ে প্রকাশের বিরুদ্ধে উক্ত পরিমান টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করেন। দুদক তাৎক্ষনিক কেন্দ্রীয় দপ্তরে অনুমোদনের জন্য পাঠালেও গতকাল সোমবার পর্যন্ত এ ব্যাপারে মামলা করার কোন অনুমোদন আসেনি। বিষয়টি গতরাতে নিশ্চিত করেছেন খুলনা দুদকের উপপরিচালক মোঃ নাজমুল হাসান।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা: জসিম উদ্দিন হাওলাদার বলেন, খুলনা জেনারেল হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগের টাকা আত্মসাতের অভিযোগটি দুদকসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে খুলনার সিভিল সার্জন জানিয়েছেন। এখন যে পদক্ষেপ নেয়ার তারাই নেবে। এছাড়া বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক দপ্তরের পক্ষ থেকে যে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে তারাও তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন বলেও তিনি জানান।
কেএমপির খুলনা থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) মো: হাসান আল মামুন বলেন, বিষয়টি নিয়ে যেহেতু দুদকের কাছে অভিযোগ দেয়া হয়েছে এবং এটি দুদকেরই এখতিয়ারভুক্ত, সেহেতু দুদক মামলা দায়ের করলেই সেটি রেকর্ড করা হবে। অন্য কারও এ ব্যাপারে মামলা দায়েরের সুযোগ নেই।
অপরদিকে, বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক দপ্তরের গঠিত কমিটির একটি সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে প্রথম দফার মেয়াদ শেষ হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের আগেই আরও ১৫ কর্মদিবসের সময় চাওয়ায় পরিচালক(স্বাস্থ্য) সময় মঞ্জুর করেছেন। ইতোমধ্যে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক কাম সিভিল সার্জন, আবাসিক মেডিকেল অফিসার(আরএমও), প্যাথলজি বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী, হিসাব বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিভাগের সাথে জড়িতদেরও বক্তব্য গ্রহণ করা হয়েছে। সেই সাথে এ সংক্রান্ত বেশকিছু কাগজপত্রও চাওয়া হয়েছে। যেগুলো সংগ্রহ করে সার্বিক বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে প্রাথমিক পর্যায়ে এটুকু প্রতীয়মান হচ্ছে যে, ওই টাকা আত্মসাতের সাথে শুধু প্রকাশ একাই জড়িত নন, বরং তার উর্দ্ধতন অনেকের নামও বেরিয়ে আসছে। আর এ কারণেই তদন্ত কমিটির ওপর প্রভাব বিস্তার করে তদন্তের মোড় ঘুরিয়ে নেয়ার চেষ্টা চলছে বলেও জনশ্রুতি রয়েছে। যার অংশ হিসেবে এখন থেকে ৮/১০ বছর আগের কাগজপত্র নিয়েও তদন্ত কমিটি কাজ করছে। যার আন্ত:অডিট ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছে। অর্থাৎ শুধুমাত্র বিদেশগামীদের করোনা টেষ্টের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করা হলেও তদন্ত হচ্ছে কয়েক বছর আগে থেকে। আর এটি হলেই প্রকাশের পৃষ্ঠপোষকদের তালিকায় আরও কয়েকজনকে জড়ানো সম্ভব। যা বর্তমান বিষয়টিকে আরও হালকা করে দিতে পারে বলেও অনেকে মন্তব্য করেন।