# সংক্রমণের শীর্ষে বরিশাল
# সর্বোচ্চ মৃত্যু খুলনা

স্টাফ রিপোর্টার ঃ দেশে একদিনে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ১৪৩ জন, যা এর আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। তিন দিন আগেই গত ২৭ জুন একদিনে সর্বোচ্চ ১১৯ জন মারা গিয়েছিলেন। গতকাল বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত বিজ্ঞপ্তিতে সংক্রমণের এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এছাড়া সারাদেশের ন্যায় গতকাল খুলনা বিভাগের মৃত্যুর সংখ্যাও ছিল রেকর্ড সংখ্যক। অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে বিগত ২৪ ঘন্টার বিভাগের সর্বমোট ৩৯ জনের মৃত্যু হয় বলে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক দপ্তরের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
আমাদের ঢাকা অফিস জানায়, কেবল মৃত্যু নয়, করোনা সংক্রমণর পরিমাণও গত ২৪ ঘণ্টায় খুব একটা কমেনি। আগের দিন একদিনে সর্বোচ্চ ৮ হাজার ৮৮২ জনের শরীরে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার পর গত ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে ৮ হাজার ৩০১ জনের মধ্যে। একদিনে সংক্রমণ শনাক্তের ক্ষেত্রে এই সংখ্যা তৃতীয় সর্বোচ্চ। স্বাস্থ্য অধিদফতরের বিজ্ঞপ্তির তথ্য বলছে, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৫৬৬টি ল্যাবে করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এসব ল্যাবে ৩২ হাজার ৯২৪টি নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়েছে ৩২ হাজার ৫৫টি নমুনা। এই সংখ্যা আগের দিনের তুলনায় প্রায় তিন হাজার কম। গত ২৪ ঘণ্টার নমুনা পরীক্ষা মিলিয়ে দেশে ৬৬ লাখ ৪০ হাজার ৯৮২টি নমুনা পরীক্ষা হলো।
গত ২৪ ঘণ্টায় পরীক্ষা করা নমুনার ৮ হাজার ৩০১টিতে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে দেশে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হলো ৯ লাখ ২১ হাজার ৫৫৯ জনের শরীরে। গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ২৫ দশমিক ৯০ শতাংশ। আর এখন পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৮৮ শতাংশ।
বিজ্ঞপ্তির তথ্য অনুযায়ী, দেশে যে ১৪৩ জন করোনা সংক্রমণ নিয়ে মারা গেছেন, এ নিয়ে দেশে এই সংক্রমণে প্রাণহানি দাঁড়ালো ১৪ হাজার ৬৪৬ জনে। সংক্রমণ বিবেচনায় মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৫৯ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় যারা করোনা সংক্রমণ নিয়ে মারা গেছেন, তাদের মধ্যে পুরুষ ৯০ জন, নারী ৫৩ জন। তাদের ১১ জন বাসায় এবং বাকি ১৩২ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। মৃতদের বয়সভিত্তিক তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ১৪৩ জনের প্রায় অর্ধেক ৭০ জনের বয়স ৬০ বছরের বেশি। এছাড়া ৫১ থেকে ৬০ বছর বয়সী ৪২ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সী ১৮ জন ও ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সী ১১ জন মারা গেছেন। এর বাইরে ১১ থেকে ২০ বছর বয়সী একজন এবং ১০ বছরের কম বয়সী এক শিশুও গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছে।
বিভাগভিত্তিক তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত কয়েকদিনের মতো গত ২৪ ঘণ্টাতেও সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছে খুলনা বিভাগে। এ বিভাগে মারা গেছেন ৪৬ জন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৫ জন মারা গেছেন ঢাকা বিভাগে, তৃতীয় সর্বোচ্চ ১৯ জন রাজশাহী বিভাগে। এছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগে ১৫ জন, রংপুর বিভাগে ১০ জন, বরিশাল বিভাগে আট জন, সিলেট বিভাগে সাত জন ও ময়মনসিংহ বিভাগে তিন জন করোনা সংক্রমণ নিয়ে মারা গেছেন গত ২৪ ঘণ্টায়।
এদিকে, করোনা সংক্রমণে দেশে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এর মধ্যে শনাক্ত ও মৃতের হার বিবেচনায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাপ্তাহিক প্রতিবেদনে চতুর্থ স্থান থেকে এক লাফে সংক্রমণের শীর্ষে চলে এসেছে বরিশাল বিভাগ। গত এক সপ্তাহে এই বিভাগে সংক্রমণের হার বেড়েছে ১১৮.৩ শতাংশ। এদিকে গত সপ্তাহের প্রতিবেদনে শীর্ষে থাকা ঢাকা বিভাগ দ্বিতীয় স্থানে নেমে এসেছে। ঢাকায় গত এক সপ্তাহে সংক্রমণের হার বেড়েছে ৭৬.৯ শতাংশ। যা এর আগের সপ্তাহে ছিল ১১৪.৪ শতাংশ। দেশের সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ে বৃহস্পতিবার নিয়মিত সাপ্তাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। গত ২১ থেকে ২৮ জুন এই এক সপ্তাহের নমুনা পরীক্ষা ও রোগী শনাক্তের হার বিবেচনায় এসব তথ্য জানিয়েছে তারা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে সংক্রমণের ২৫তম সপ্তাহে সব বিভাগে নতুন শনাক্তের হার বেড়েছে। এর মধ্যে সর্বাধিক ১১৮.৩ শতাংশ বেড়েছে বরিশাল বিভাগে। আলোচিত সপ্তাহে বিভাগটিতে নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছে ৭৩৮ জনের। যা গত সপ্তাহে ছিল ৩৩৮ জন। এরপরেই দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ঢাকা বিভাগ। এ বিভাগে নতুন করে শনাক্তের হার বেড়েছে ৭৬.৯ শতাংশ। এই সপ্তাহে বিভাগটিতে ১৪ হাজার ৫৩৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। যা আগের সপ্তাহে ছিল আট হাজার ২১৫ জন।
খুলনায় ২৪ ঘন্টায় ৩৯সহ মোট মৃত্যু ১১শ’ ছাড়ালো ঃ খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক দপ্তরের দৈনিক প্রতিবেদনে গতকাল সকালে বলা হয়, বিগত ২৪ ঘন্টায় বিভাগে সর্বমোট ৩৯জনের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে খুলনায় আটজন, বাগেরহাটে একজন, সাতক্ষীরায় চারজন, যশোরে সাতজন, নড়াইলে তিনজন, ঝিনাইদহে চারজন, কুষ্টিয়ায় সাতজন, চুয়াডাঙ্গায় দু’জন ও মেহেরপুরে তিনজনের মৃত্যু হয়। অর্থাৎ বিগত ২৪ ঘন্টায় একমাত্র মাগুরায় কোন মৃত্যু হয়নি। এ নিয়ে বিভাগে এ পর্যন্ত এক হাজার ১০৯ জনের মৃত্যু হয় বলেও বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা: রাশেদা সুলতানা জানিয়েছেন।
খুলনা বিভাগের ১০ জেলার মধ্যে এ পর্যন্ত খুলনায় ২৬৫জন, বাগেরহাটে ৮৭জন, সাতক্ষীরায় ৭৪জন, যশোরে ১৫২জন, নড়াইলে ৪৭জন, মাগুরায় ২৭জন, ঝিনাইদহে ৯৪জন, কুষ্টিয়ায় ২১৮জন, চুয়াডাঙ্গায় ৯১জন ও মেহেরপুরে ৫৪জনের মৃত্যু হয় বলেও স্বাস্থ্য পরিচালকের দপ্তর জানায়।
খুলনা মেডিকেলে একই সময় তিনজনসহ ৮ ঘন্টায় ৫ মৃত্যু ঃ খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে গতকাল দুপুরে একই সময়ে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে বলে হাসপাতালের রেকর্ডে দেখা গেছে। এছাড়া গতকাল ভোর পাঁচটা ১০ মিনিট থেকে শুরু করে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত পাঁচ জনের মৃত্যু হয়।
গতকাল ভোর পাঁচটা ১০ মিনিটে মৃত্যু হয় নগরীর গল্লামারী অগ্রণী ব্যাংক কলোনী এলাকার মর্জিনা বেগম(৬৫) নামের এক রোগীর। তাকে গত ২৫ জুন এ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।
দুপুর একটায় মৃত্যু হয় খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার প্রণব কুমার মিস্ত্রি(৬০) নামের আরও এক রোগীর। তাকে গত ২৯ জুন এ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এছাড়া গতকাল দুপুর দেড়টায় একই সময় মৃত্যু হয় তিনজনের। এরা হলেন, খুলনার পাইকগাছার কপিলমুনির আতিয়ার রহমান(৬০), খুলনা মহানগরীর ধর্মসভা এলাকার কালিপদ সাহা(৬৫) এবং দিঘলিয়ার সেনহাটির মিলি বেগম(৪০) এর। এর মধ্যে পাইকগাছার আতিয়ার রহমান ও দিঘলিয়ার মিলি বেগমকে গত ২৬ জুন ভর্তি করা হলেও নগরীর ধর্মসভার কালিপদ সাহাকে ভর্তি করা হয়েছিল ১৮ জুন।