৬০ কেন্দ্রের ৩৬টিতেই
নেই ২য় ডোজের টিকা

এইচ এম আলাউদ্দিন ঃ খুলনা বিভাগের ১০ জেলার ৬০ কেন্দ্রের ৩৬টি কেন্দ্রেই করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ডোজের টিকা দেয়া বন্ধ হয়ে গেছে। টিকা মজুদ না থাকায় এ অবস্থা বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এজন্য বিভাগের ১০ জেলায় অন্তত: দু’লাখ লোক দ্বিতীয় ডোজের টিকা থেকে বঞ্চিত হতে পারে এমন আশংকা করা হচ্ছে। তবে চলতি সপ্তাহের মধ্যে চাহিদা অনুযায়ী টিকা আসলেই হয়তো সে আশংকা কেটে যাবে বলেও সংশ্লিষ্টদের আশা।
খুলনার বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা: রাশেদা সুলতানা বলেন, বাগেরহাটের নয়টি কেন্দ্রের মধ্যে আটটিতে, যশোরের আটটির মধ্যে একটিতে, খুলনার ১০টির মধ্যে আটটিতে, কুষ্টিয়ার ছয়টির মধ্যে তিনটিতে, মাগুরার চারটির মধ্যে দু’টিতে, নড়াইলের তিনটির মধ্যে সবগুলোতে, সাতক্ষীরার সাতটির মধ্যে তিনটিতে, ঝিনাইদহের চারটির মধ্যে সব ক’টিতে, চুয়াডাঙ্গার একটি কেন্দ্রের একটিতেই দ্বিতীয় ডোজের টিকা দেয়া ইতোমধ্যেই বন্ধ হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, বিভাগের ১০ জেলার প্রথম ডোজের টিকা নিয়েছেন ছয় লাখ ৪৩ হাজার ৮১৯জন আর এ পর্যন্ত দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন চার লাখ ৩২ হাজারের মতো। অর্থাৎ বিভাগের প্রায় দু’লাখ লোক দ্বিতীয় ডোজের টিকা থেকে বঞ্চিত হতে পারে এমন আশংকা রয়েছে।
এদিকে, খুলনা মহানগরীর পাঁচটি কেন্দ্র ও পাইকগাছা ছাড়া জেলার অন্য কোন কেন্দ্রেই করোনার টিকা নেই। নগরীর পাঁচটি কেন্দ্রে যে টিকা রয়েছে তা’ দিয়ে সর্বোচ্চ আড়াই হাজার লোককে করোনাভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ দেয়া যাবে। স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে, এ পর্যন্ত জেলায় এক লাখ ৭৫ হাজার ৯৬৭জন প্রথম ডোজের টিকা নিয়েছেন। পক্ষান্তরে নগরীসহ জেলায় দ্বিতীয় ডোজের টিকা নিয়েছেন এক লাখ ২৫ হাজার ৪৬৯জন। এর সাথে বাকী আড়াই হাজার যোগ হলে হয়তো এক লাখ ২৭ হাজার ৯৭৯ জনকে দ্বিতীয় ডোজের টিকা দেয়া সম্ভব হবে। অর্থাৎ খুলনা মহানগরীসহ জেলার নয়টি উপজেলায় ৪৭ হাজার ৯৭৮জন বাদ পড়তে যাচ্ছেন দ্বিতীয় ডোজের টিকা থেকে।
খুলনার সিভিল সার্জনের দপ্তর বলছে, নগরীর ৭৪ হাজার ২৪জনসহ জেলার নয়টি উপজেলায় দু’লাখ ১৪ হাজার নয়জন নিবন্ধন করেও সকলে টিকা দিতে পারেননি। অর্থাৎ প্রথম ডোজের টিকা নিয়েছেন এক লাখ ৭৫ হাজার ৯৫৭জন। আবার নিবন্ধনের পরও বিভিন্ন কারণে প্রথম ডোজ থেকেই বাদ পড়েছেন ৩৮ হাজার ৫২জন। খুলনায় গত ২৬ এপ্রিল থেকে প্রথম ডোজের টিকা দেয়া বন্ধ রয়েছে। আর দ্বিতীয় ডোজ বন্ধ রয়েছে কয়রা উপজেলায় ১২ মে থেকে, রূপসা ও ফুলতলা উপজেলায় ১৩ মে থেকে, বটিয়াঘাটা উপজেলায় ১৮ মে থেকে, কয়রা উপজেলায় ১৯ মে থেকে, দিঘলিয়া উপজেলায় ২০ মে থেকে, তেরখাদা উপজেলায় ২১ মে থেকে এবং ডুমুরিয়া উপজেলায় ২৩ মে থেকে।
সূত্রটি বলছে, একটি এ্যাম্পুল দিয়ে ১০ জনকে টিকা দেয়া যায়। সে ক্ষেত্রে পাইকগাছায় পাঁচটি এ্যাম্পুল রয়েছে। সেখানে আর মাত্র ৫০ জনকে টিকা দেয়া যাবে। অর্থাৎ আজকের পর থেকে খুলনা মহানগরী ছাড়া জেলার আর কোন উপজেলায়ই টিকার মজুদ থাকছে না। আবার খুলনা মহানগরীর পাঁচটি কেন্দ্রের জন্য রয়েছে ২৪৬টি এ্যাম্পুল। অর্থাৎ ওই এ্যাম্পুলগুলো দিয়ে দু’হাজার ৪৬০ জনকে টিকা দেয়া সম্ভব হবে। সে ক্ষেত্রে এ সপ্তাহে যেহেতু আর মাত্র দু’দিন অফিস রয়েছে, সেহেতু আগামী সপ্তাহে খুলনার কোথাও আর টিকা থাকছে না। সব মিলিয়ে খুলনা মহানগরীসহ জেলায় প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজের টিকা থেকে বাদ পড়ছেন ৮৬ হাজার ৩০জন মানুষ।
খুলনার সিভিল সার্জন ডা: নিয়াজ মোহাম্মদ বলেন, নতুন করে টিকা আসলেই সংশ্লিষ্টদের মোবাইলে এসএমএস দিয়ে দ্বিতীয় ডোজ দেয়া শুরু হবে। যেহেতু প্রথম ডোজ দেয়ার আট সপ্তাহ অর্থাৎ দু’মাস পর থেকে দ্বিতীয় ডোজ দেয়া শুরু হয়ে তিন মাস পর্যন্ত সময় নেয়া যাবে, সেহেতু আশা করা যাচ্ছে আগামী সপ্তাহেই আরও টিকা খুলনায় আসবে।
সিভিল সার্জনের দপ্তরের সূত্রটি বলছে, খুলনায় প্রথম ডোজের চেয়ে দ্বিতীয় ডোজের অর্জনও অনেক কম। অর্থাৎ মহানগরীসহ জেলায় করোনা টিকার প্রথম ডোজের অর্জন ৮২.২২% হলেও গতকাল পর্যন্ত দ্বিতীয় ডোজের অর্জন ৫৮.৬৩%।
সূত্র মতে, খুলনার দিঘলিয়া উপজেলায় প্রথম ডোজের অর্জন ৬৫%, পাইকগাছা, রূপসা ও তেরোখাদা উপজেলায় ৭০%এর উপরে এবং নগরীসহ অন্য উপজেলাগুলোর অর্জন ৮০%এর উপরে। পক্ষান্তরে দিঘলিয়া উপজেলায় দ্বিতীয় ডোজের অর্জন ৪৫%, তেরোখাদায় ৩৫% এবং সর্বোচ্চ রয়েছে বটিয়াঘাটায় অর্থাৎ ৫৬%। অন্যান্য উপজেলায় আরও কম অর্জন। শুধুমাত্র খুলনা মহানগরীর অর্জন হচ্ছে ৭৪%। এ অবস্থায় চাহিদা অনুযায়ী দ্রুত টিকা না আসলে অনেকেই করোনা টিকা থেকে বঞ্চিত থাকবেন এমন আশংকাও সংশ্লিষ্টদের।