নিবন্ধন করেও বাদ পড়লেন
১ লাখ ৬৬ হাজার ৮১৬জন

এইচ এম আলাউদ্দিন ঃ খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের জন্য অনলাইন নিবন্ধন করেছিলেন আট লাখ ৯৮ হাজার ৪৭৮জন। এর মধ্যে গত ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত প্রথম ডোজের টিকা গ্রহণ করেন সাত লাখ ৩১ হাজার ৬৬২জন। এরপরই ওইদিন(২৬এপ্রিল) থেকে টিকা শেষ হওয়ার কারণে প্রথম ডোজের কার্যক্রম বন্ধ করা হয়। আবার প্রথম ডোজ নেয়া ওই সাত লাখ ৩১ হাজার ৬৬২জন নরনারীর মধ্যে গতকাল পর্যন্ত দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণ করেছেন চার লাখ ৯০ হাজার ২০৩জন। বর্তমানে দ্বিতীয় ডোজের জন্য টিকা মজুদ রয়েছে এক হাজার ৬১০টি। যা আরও ১৬১০ জনকে দেয়ার পর দ্বিতীয় ডোজের টিকা গ্রহণকারীর সংখ্যা দাঁড়াবে চার লাখ ৯১ হাজার ৮১৩জনে। অর্থাৎ প্রথম ডোজ নেয়ার পরও দ্বিতীয় ডোজ থেকে বাদ পড়তে যাচ্ছেন দুই লাখ ৩৯হাজার ৮৪৯জন। খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক দপ্তরের দৈনন্দিন করোনা ভ্যাকসিন সংক্রান্ত প্রতিবেদন থেকে এমন চিত্র পাওয়া যায়।
এ অবস্থায় পরবর্তী কার্যক্রম কি হবে সে সম্পর্কে স্থানীয় পর্যায়ে নেই কোন সুস্পষ্ট পদক্ষেপের কথা। বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক এবং খুলনার সিভিল সার্জনের বক্তব্য ‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বা মন্ত্রণালয় থেকে পরবর্তী সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত কিছুই করার নেই’। আবার প্রথম ডোজ নিয়ে দ্বিতীয় ডোজের জন্য অপেক্ষমানদের মধ্যেও দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন। তাদেরকে কি আবারো নতুন করে নতুন কোন দেশের বা নতুন কোন ফর্মুলার টিকা নিতে হবে এটি যেমন সামনে আসছে তেমনি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজের টিকা দেয়া সম্ভব না হলে এতে কি আবার পাশর্^প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে কি না সেটিও ভাবনার বিষয়। আবার টিকা কার্যক্রম শুরুর সময়(৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১) স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআর(রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট) থেকে বলা হয়েছিল চার সপ্তাহ পর দ্বিতীয় ডোজ নিতে হবে। শুরুতে এজন্য এক মাসের মাথায় দ্বিতীয় ডোজের জন্য তারিখও দেয়া হয়। কিন্তু গত ১৫ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবিএম খুরশীদ আলম গনমাধ্যমকে জানান, চার সপ্তাহ(এক মাস) নয়, বরং আট সপ্তাহ(দুই মাস) পরই দেয়া হবে দ্বিতীয় ডোজ। এজন্য ওইদিনের পর থেকে দ্বিতীয় ডোজের জন্য এসএমএসও দেয়া হয় দুই মাস পরের দিন ধার্য করে। আবার যাদেরকে আগেই এক মাসের সময় দিয়ে দিন ধার্য করে দেয়া হয়েছিল তাদের মধ্যে অনেকেই এসএমএস না পেয়েই নির্দিষ্ট দিনে টিকা কেন্দ্রে গিয়ে ফেরত যেতে বাধ্য হন। পরে অবশ্য তাদেরকে দুই মাস পরই এসএমএস দেয়ার পর তারা টিকার দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণ করেন। প্রথম ডোজ শুরুর দুই মাস পর অর্থাৎ ৮ এপ্রিল থেকে দ্বিতীয় ডোজ শুরু হয়। যা এখনও চলমান রয়েছে। কিন্তু টিকা শেষ হওয়ার কারণে গত ২৬ এপ্রিল থেকে প্রথম ডোজের টিকা দেয়া বন্ধ হয়ে যায়। যদিও ওই পর্যন্ত টিকার জন্য নিবন্ধন করা মানুষের মধ্যে বাদ পড়েন দেড় লাখেরও বেশি অর্থাৎ এক লাখ ৬৬ হাজার। আবার প্রথম ডোজ নেয়ার পরও দ্বিতীয় ডোজ থেকে বাদ পড়তে যাচ্ছেন আরও প্রায় দুই লাখ ৪০ হাজার লোক।
এ অবস্থায় ভারত থেকে পরবর্তী ধাপে টিকা না আসা পর্যন্ত সরকারের কিছুই করার নেই বলে জানিয়েছেন খুলনার স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা। বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা: রাশেদা সুলতানা বলেন, ভারতীয় টিকা আনার চেষ্টা চলছে। যা আসলেই সারাদেশের ন্যায় খুলনার জন্যও বরাদ্দ করা হবে। সুতরাং যখনই আসবে তখন থেকেই দ্বিতীয় ডোজ দেয়া শুরু হবে। এখন যে ১৬১০টি ডোজ রয়েছে তা হয়তো আরও কয়েকদিন চালিয়ে নেয়া হবে। এর মধ্যে অবশ্য খুলনা মহানগরীর পাঁচটি কেন্দ্রের জন্য এক হাজার ১০টি, সাতক্ষীরার জন্য ৫৫০টি, যশোরের জন্য ৩০টি এবং ঝিনাইদহের জন্য ২০টি টিকা রয়েছে বলেও তিনি জানান।
খুলনার সিভিল সার্জন ডা: নিয়াজ মোহাম্মদ বলেন, মহানগরীসহ জেলার ১৪টি কেন্দ্রে এ পর্যন্ত প্রথম ডোজের টিকা নিয়েছেন এক লাখ ৭৫ হাজার ৯৫৭জন আর গতকাল পর্যন্ত দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন এক লাখ ২৭ হাজার ১৮জন। খুলনায় যেহেতু নগরীর পাঁচটি কেন্দ্রে আরও এক হাজার ১০টি টিকা রয়েছে সেহেতু দ্বিতীয় ডোজ পাবেন এক লাখ ২৮ হাজার ২৮জন। অর্থাৎ খুলনায় দ্বিতীয় ডোজ থেকে বাদ পড়তে পারেন ৪৭ হাজার ৯২৯জন।
এদিকে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও এটুআই’র উদ্যোগে কোভিড-১৯ টেলিহেলথ সার্ভিসে(০৯৬৬৬৭৭৭২২২নম্বরে) গতরাতে ফোন দিয়ে কথা হয় সংশ্লিষ্ট এক ডাক্তারের সাথে। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, প্রথম ডোজ নেয়ার পর দ্বিতীয় ডোজের জন্য কোন সময় বেধে দেয়া নেই। যখনই টিকা আসবে তখনই দ্বিতীয় ডোজ দেয়া যাবে। তবে প্রথমে তিনি বলেন, তিন মাসের মধ্যেই দ্বিতীয় ডোজ দেয়া যাবে। কিন্তু তিন মাসের মধ্যে পরবর্তী ধাপে টিকা আসছে এমন নিশ্চয়তা আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, যখনই আসবে তখনই দ্বিতীয় ডোজ দেয়া যাবে। এতে কোন ক্ষতি নেই।
উল্লেখ্য, বেসরকারি সংস্থা বেক্সিমকোর মাধ্যমে ভারতের সেরাম ইন্সটিটিউটে তৈরি করা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রজেনেকার কোভিশিল্ড তিন কোটি ডোজ টিকা সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছিল বাংলাদেশ সরকার। কিন্তু এ পর্যন্ত মাত্র ৭০ লাখ ডোজ টিকা পাওয়া গেছে। আরও ৩২ লাখ টিকা সরকার পেয়েছে উপহার হিসেবে। অর্থাৎ দেশে মোট এক কোটি দুই লাখ ডোজ টিকা পেয়ে ইতোমধ্যেই প্রায় সব দেয়া হয়ে গেছে। এখন পরবর্তী ধাপে আরও টিকা আনার চেষ্টা করা হলেও ভারতে যেহেতু করোনা পরিস্থিতি প্রকট আকার ধারণ করেছে সে কারণে কবে নাগাদ টিকা আসবে তার কোন সুস্পষ্ট দিন তারিখ এখনও জানা যাচ্ছে না।
খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক দপ্তরের সূত্র মতে, বিভাগের ১০ জেলায় সর্বমোট ৬০টি কেন্দ্রে করোনাভ্যাকসিন দেয়া হয়। সংশ্লিষ্ট হাসপাতালগুলোর নার্স, কর্মচারীদের সহায়তার জন্য টিকাদানের সাথে সম্পৃক্ত রয়েছেন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির স্বেচ্ছাসেবকরা। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জেনারেল হাসপাতাল, শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতাল, পুলিশ হাসপাতাল ও নেভি হাসপাতাল এ পাঁচটি ছাড়াও জেলার নয়টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নয়টি কেন্দ্রে টিকাদান কার্যক্রম চলে। তবে নগরীর পাঁচটি ছাড়া খুলনার আর কোন কেন্দ্রে যেমন টিকা নেই তেমনি বিভাগের ১০ জেলার মধ্যে যশোর, সাতক্ষীরা ও ঝিনাইদহ ছাড়া অন্য কোন কেন্দ্রেও টিকা নেই।