স্টাফ রিপোর্টার ঃ খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় গতকাল সকাল পর্যন্ত বিগত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময় শনাক্ত হয়েছে এক হাজার ৪৩৫ জনের। এর আগে সোমবার সকাল পর্যন্তও বিভাগে ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছিল। গতকাল মঙ্গলবার বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
স্বাস্থ্য পরিচালকের দফতর সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় বিভাগের মধ্যে সর্বোচ্চ ১৮ জনের মৃত্যু হয় কুষ্টিয়া জেলায়। বাকিদের মধ্যে খুলনায় ৯ জন, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরে ৪ জন করে, বাগেরহাট, যশোর, নড়াইল, মাগুরা ও ঝিনাইদহে দু’জন করে এবং সাতক্ষীরায় একজন মারা গেছেন।
গত বছর(২০২০) করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত বিভাগের ১০টি জেলায় মোট শনাক্ত হয়েছে ৮৯ হাজার ৬৮৩ জন। আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন দু’হাজার ২৬৩ জন। এসময় সুস্থ হয়েছেন ৬৩ হাজার ৯৬৩ জন।
বভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের জেলাভিত্তিক করোনা-সংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২৪ ঘণ্টায় খুলনা জেলায় করোনা শনাক্ত হয়েছে ৪৬৯ জনের। এ পর্যন্ত জেলায় করোনা শনাক্ত হয়েছে ২৩ হাজার ১০৯ জনের। মারা গেছেন ৫৮৮ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ১৬ হাজার ৩০৭ জন।
বাগেরহাটে নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছে ১০১ জনের। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা শনাক্ত হয়েছে ৫ হাজার ৭৯২ জনের। আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১২০ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ৪ হাজার ৮২৬ জন।
সাতক্ষীরায় ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছে ৭৯ জনের। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা শনাক্ত হয়েছেন ৫ হাজার ৪৪৮ জন এবং মারা গেছেন ৮৪ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৪ হাজার ১৫৪ জন।
২৪ ঘণ্টায় যশোরে নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ২২৬ জন। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা শনাক্ত হয়েছেন ১৮ হাজার ১৪৫ জন। মোট মারা গেছেন ৩২৪ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ১৩ হাজার ২৭৩ জন।
২৪ ঘণ্টায় নড়াইলে নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ৫৪ জন। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা শনাক্ত হয়েছে ৩ হাজার ৯৭৯ জনের। মোট মারা গেছেন ৮৯ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ৩ হাজার ১০৩ জন।
মাগুরায় ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৪১ জনের শনাক্ত হয়েছে। এ জেলায় মোট করোনা শনাক্ত হয়েছে ২ হাজার ৮৬২ জনের। মোট মারা গেছেন ৬২ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৬২৩ জন।
ঝিনাইদহে ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৭৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা শনাক্ত হয়েছে ৭ হাজার ২৬৭ জন। মোট মারা গেছেন ১৮৫ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ৪ হাজার ৩৪৭ জন।
২৪ ঘণ্টায় কুষ্টিয়ায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ২৫৩ জন। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা শনাক্ত হয়েছে ১৩ হাজার ৬৭৪ জনের। মোট মারা গেছেন ৫২৬ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ৯ হাজার ৮২২ জন।
চুয়াডাঙ্গায় ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছে শনাক্ত ৮৫ জনের। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা শনাক্ত হয়েছে ৫ হাজার ৮৫৫ জন। মোট মারা গেছেন ১৫৪ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ৩ হাজার ৭১২ জন।
মেহেরপুরে নতুন করে শনাক্ত হয়েছে ৫৪ জন। এ নিয়ে জেলায় মোট শনাক্ত হয়েছে ৩ হাজার ৫৫২ জন। আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১৩১ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ২ হাজার ৭৯৬ জন।
চার হাসপাতালে ৯ জনের মৃত্যু ঃ খুলনার চারটি হাসপাতালে বিগত ২৪ ঘন্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে নয়জনের মৃত্যু হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে। এর মধ্যে খুমেক হাসপাতালের করোনা ইউনিটে তিনজন, জেনারেল হাসপাতালে তিনজন, শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে একজন এবং গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দু’জনের মৃত্যু হয়। তবে বিগত ২৪ ঘন্টায় সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কারও মৃত্যু হয়নি বলে হাসপাতালের ম্যানেজার এডমিন ও এইচআর মো: হামিদুল ইসলাম খান জানান।
খুমেক হাসপাতালের করোনা ইউনিটের মুখপাত্র ডা: সুহাস রঞ্জন হালদার বলেন, গতকাল সকাল পর্যন্ত বিগত ২৪ ঘন্টায় সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় যে তিনজনের মৃত্যু হয় তারা হলেন, খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার পশুপতি দে(৬৪), নগরীর মিয়াপাড়ার এমডি শরীফ কাজী(৭০) ও হরিণটানা থানাধীন মরিয়ম আকতার(২১)।
খুলনা জেনারেল হাসপাতালের মুখপাত্র ডা: কাজী আবু রাশেদ বলেন, গতকাল সকাল পর্যন্ত সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় যে তিনজনের মৃত্যু হয় তারা হলেন, বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ উপজেলার আব্দুর রশিদ হাওলাদার(৮৫), নগরীর লবণচরা এলাকার কাকলী(৪০) ও ডুমুরিয়ার মরিয়ম(৭০)।
শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের করোনা ইউনিটের মুখপাত্র ডা: প্রকাশ চন্দ্র দেবনাথ বলেন, সেখানে গতকাল সকাল পর্যন্ত যে একজনের মৃত্যু হয় তার নাম রওশন আরা বেগম(৭৮)। তিনি নগরীর নূর নগর এলাকার বাসিন্দা।
গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা: গাজী মিজানুর রহমান বলেন, গতকাল সকাল পর্যন্ত সেখানের করোনা ইউনিটে যে দু’জনের মৃত্যু হয় তারা হলেন, নগরীর খালিশপুর থানাধীন ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আয়েশা হোসেন(৭১) এবং যশোরের অভয়নগর থানাধীন সুন্দলী এলাকার তন্বী সরকার(১৮)।
শয্যা বাড়লেও আইসিইউ সংকট ঃ খুলনার সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে সর্বমোট পাঁচটি হাসপাতালে এ পর্যন্ত শয্যা সংখ্যা ছিল ৫৬২টি। কিন্তু গতকাল মঙ্গলবার থেকে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৮৭টির স্থলে আরও তিনটি বাড়িয়ে ৯০ শয্যার করোনা ইউনিট করা হয়েছে। হাসপাতালের ম্যানেজার এডমিন ও এইচআর মো: হামিদুল ইসলাম খান এটি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, গতকাল সকাল পর্যন্ত সেখানের ৯০ বেডের মধ্যে রোগী ভর্তি ছিলেন ৬৭জন।
এছাড়া খুমেক হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ২শ’ বেডের বিপরীতে গতকাল সকাল পর্যন্ত রোগী ছিলেন ১০৯জন, জেনারেল হাসপাতালে ৮০ বেডের বিপরীতে রোগী ছিলেন, ৩৫জন, শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে ৪৫ বেডের বিপরীতে রোগী ছিলেন ৩৯জন, গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৫০ বেডের বিপরীতে রোগী ছিলেন ৭৩জন। অর্থাৎ ৫৬৫ বেডের বিপরীতে গতকাল পর্যন্ত রোগী ভর্তি ছিল ৩২৩জন। তবে খুলনার চারটি হাসপাতালে ৪৯টি আইসিইউ বেড থাকায় সবগুলোই প্রায় পরিপূর্ণ রয়েছে। খুমেক হাসপাতালের ২০টি, আবু নাসেরের ১০টি, সিটি মেডিকেলের ১০টি আইসিইউ বেড গতকাল সকাল পর্যন্ত পূর্ণ ছিল। একমাত্র গাজী মেডিকেলের নয়টি আইসিইউ বেডের মধ্যে রোগী ছিলেন আটটিতে। আবু নাসের ও খুমেক হাসপাতালে সিরিয়াল দিয়ে অপেক্ষা করতে হচ্ছে দিনের পর দিন। কিন্তু আইসিইউ মিলছে অনেক দেরিতে। স্বাস্থ্যসেবার সাথে জড়িতরা বলছেন, বর্তমানে করোনা রোগীদের জন্য প্রধান সংকট হচ্ছে আইসিইউ বেড।
খুমেক পিসিআর ল্যাবে ৯১ জনের করোনা শনাক্ত ঃ খুলনা মেডিকেল কলেজের আরটি পিসিআর ল্যাবে গতকাল মঙ্গলবার ৩৭৬টি নমুনা পরীক্ষার পর ৯১জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে বলে কলেজের উপাধ্যক্ষ ডা: মো: মেহেদী নেওয়াজ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, শনাক্ত হওয়া ৯১ জনের মধ্যে খুলনার ৮৫জন, বাগেরহাটের দু’জন, যশোরের দু’জন, পিরোজপুরের একজন এবং দিনাজপুরের একজন রয়েছেন।