এইচ এম আলাউদ্দিন ঃ একেবারে না কমলেও অনেকটাই স্বস্তি ফিরে এসেছিল খুলনায়। বিভাগের ১০ জেলায় অনেকদিন পর মৃত্যুর সংখ্যা নেমে এসেছিল ১৯ জনে। শনিবার সকাল পর্যন্ত বিগত ২৪ ঘন্টার ওই হিসাবটি স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে সরবরাহ করা হয়েছিল। কিন্তু সেই স্বস্তির মধ্যে আবারও একটু বেড়ে গেলো মৃত্যু। গতকাল রোববার সকাল পর্যন্ত বিভাগে মৃত্যুর তালিকা আবারো বেড়ে গিয়ে দাঁড়ালো ৪০ জনে। মৃত্যুর পাশাপাশি একদিনের ব্যবধানে শনাক্তও বেড়েছে ৮৭জন। যদিও এটি আগের মাসের তুলনায় খুব বেশি নয় বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিভাগের সাথে সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে, করোনার প্রকোপ কমলেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহবান জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, করোনা কমছে বলে এখনই হাল ছেড়ে দেয়ার কিছু নেই। বরং করোনা ভ্যাকসিনের আওতায় এসেই ক্রমান্বয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার চেষ্টা করতে হবে।
খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের দপ্তর থেকে দেয়া দৈনন্দিন করোনা বিষয়ক প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, জুলাই মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি করোনায় মৃত্যু হয় ৯ জুলাই সকাল আটটা পর্যন্ত বিগত ২৪ ঘন্টায় অর্থাৎ ৭১ জন। ওইদিন বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্য হয় খুলনায় অর্থাৎ ২৩জন। ওইদিন মৃত্যুর তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল কুষ্টিয়ায় অর্থাৎ ১৪জন। এ পর্যন্ত অবশ্য বিভাগের মধ্যে খুলনায়ই সবচেয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বেশি। গতকাল সকাল পর্যন্ত বিভাগের মধ্যে খুলনায় মৃত্যু হয় ৬২৩জনের। আর বিভাগে মোট মৃত্যু হয় ২৪২৮ জনের। মৃত্যুতে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে কুষ্টিয়া অর্থাৎ ৫৬৯জন। বিভাগের মধ্যে এ পর্যন্ত খুলনায় শনাক্তের সংখ্যাও বেশি অর্থাৎ ২৩ হাজার ৯৬৫জন আর দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে যশোর অর্থাৎ ১৮ হাজার ৮২৬জন। তবে মৃত্যুতে দ্বিতীয় অবস্থানে কুষ্টিয়া থাকলেও শনাক্তে রয়েছে যশোর।
তথ বিশ্লেষণে দেখা যায়, জুলাইতে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয় গত ৯ তারিখ অর্থাৎ ৭১ জন। এছাড়া ৭ ও ১১ জুলাই ৬০ জন, ৫, ৮, ১৮ ও ১৯ জুলাই ৫১ জন করে, ১২ ও ১৩ জুলাই ৪৮জন, ১৫ জুলাই ৪৭জন, ৪, ১০, ২৬ ও ২৭ জুলাই ৪৬জন করে, ২৫ জুলাই ৪৫জন, ২০ ও ২৬ জুলাই ৪৩জন করে, ৬, ১৭ ও ২২ জুলাই ৪০জন করে মৃত্যু হয়।
এছাড়া ২৯ জুলাই ৪১জন, ১৭ জুলাই ৪০জন, ১৪ জুলাই ৩৬ জন, ৩০ জুলাই ৩৪জন, ২১ ও ২৪ জুলাই ৩৩ জন করে, ৩ ও ১৬ জুলাই ৩২জন করে, ২৮ জুলাই ৩১জন, ও ৩১ জুলাই ১৯ জনের মৃত্যু হয়।
গত মাসের শেষ দিন অর্থাৎ ৩১ জুলাই সকাল পর্যন্ত বিভাগের ১০ জেলায় সর্বনি¤œ মৃত্যু হয় ১৯ জন। যেটি গতমাসের মধ্যে ছিল সর্বনি¤œ। আর গতমাসে খুলনা বিভাগের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৭১জন। যে তালিকাটি ছিল গত মাসের ২৩ তারিখের।
তবে কিছুটা কমলেও এখনই স্বস্তির কিছু নয় এমনটি জানিয়ে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা: জসিম উদ্দিন হাওলাদার বলেন, আগামী ৫ থেকে ১২ আগষ্ট পর্যন্ত প্রতিটি ইউনিয়নে যে ভ্যাকসিন ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সেখানে এসে সকলকে টিকার আওতায় আসতে হবে। বিশেষ করে নারী ও বয়স্কদের অবশ্যই টিকার আওতায় এনেই করোনা থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব বলেও তিনি মনে করেন।
তিনি বলেন, করোনা শনাক্তের হার কমপক্ষে ৫শতাংশের নিচে নেমে আসা পর্যন্ত স্বস্তির নিশ^াস ফেলা যাচ্ছে না। তিনি মনে করেন, এটি সম্ভব হয়েছে চলমান লকডাউনের কারণে। তাই সকলকে এখনও আরও সতর্কতার সাথে চলাফেরা করতে হবে। সচেতনতার সাথে চলাফেরা করার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, ভিড় এড়িয়ে চলা, বাইরে বের হলেই সার্বক্ষনিক মাস্ক পরার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। বিশেষ করে আগামী ৫ থেকে ১২ তারিখ পর্যন্ত প্রতিটি ইউনিয়ন পর্যায়ে যে ভ্যাকসিন ক্যাম্প হতে যাচ্ছে সেখানে সকলকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনার জন্য চেষ্টা করতে হবে। তাহলেই করোনা মহামারী থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। বিশেষ করে নারী ও বয়স্কদের তিনি টিকাদান কেন্দ্রে এনে ভ্যাকসিনের আওতায় আনার আহবান জানান। কেননা এ পর্যন্ত দেখা গেছে ৬০ থেকে ৯০ বছর বয়সীদেরই মৃত্যু বেশি হয়েছে।