* চ্যালেঞ্জের মধ্যেই কাল পালিত হচ্ছে বিশ^ যক্ষ্মা দিবস

এইচ এম আলাউদ্দিন ঃ কিছুটা কমে আবারো বেড়েছে যক্ষ্মা রোগী। খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় ২০২০ সালে ৩৩ হাজার ৭৯০জন যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত হলেও গত বছর(২০২১) সালে তা’ বেড়ে দাঁড়ায় ৩৯ হাজার ৭৯৬জনে। অর্থাৎ এক বছরে খুলনা বিভাগে যক্ষ্মা রোগী বেড়েছে ছয় হাজার। অবশ্য ২০১৯ সালে বিভাগে যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা ছিল ৩৮ হাজার ৫২৭জন। সে তুলনায় ২০১৯ সালের চেয়ে গত বছর বেড়েছে এক হাজার।
যক্ষ্মা রোগী বৃদ্ধির এ চিত্র শুধু খুলনা বিভাগেই নয়। বরং সারাদেশের চিত্রই এমন। আর এমন এক চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়েই আগামীকাল বৃহস্পতিবার খুলনাসহ সারাদেশে পালিত হচ্ছে বিশ^ যক্ষ্মা দিবস। এবারের দিবসটির প্রতিপাদ্য হচ্ছে, ‘বিনিয়োগ করি যক্ষ্মা নির্মূলে, জীবন বাঁচাই সবাই মিলে’।
অবশ্য ২০২০ সালের চেয়ে গত বছর অর্থাৎ ২০২১ সালে বাংলাদেশে যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুও বেড়েছে ছয় হাজার। ২০২০ সালে দেশে যক্ষ্মায় মৃত্যু হয় ৩৮ হাজার রোগীর আর গত বছর মৃত্যু হয় ৪৪ হাজার। এমনটি জানিয়েছেন জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির খুলনা বিভাগীয় টিবি এক্সপার্ট ডা: শাহ মেহেদী বিন জহুর। তিনি বলেন, গত বছর সারাদেশে তিন লাখ যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত হয় এবং মৃত্যু হয় ৪৪ হাজার। তবে বিভাগওয়ারী মৃত্যুর সংখ্যা তিনি দিতে পারেননি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মৃত্যুর হিসাবটি জাতীয় পর্যায়ে রাখা হয়।
জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৯ সালের চেয়ে ২০২০ সালে দেশে ৬১ হাজার ৪২৭ জন যক্ষ্মা রোগী কম শনাক্ত হয়। কিন্তু গত বছর অর্থাৎ ২০২১ সালে ২০২০ সালের তুলনায় ৭৭ হাজার ১৩৩জন বেড়ে যায়। পরিসংখ্যান বলছে, দেশের আটটি বিভাগে ২০১৯ সালে মোট যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত হয় দু’লাখ ৯১ হাজার ৬৭৬জন, ২০২০সালে শনাক্ত হয় দু’লাখ ৩০ হাজার ২৪৯জন আর ২০২১ সালে শনাক্ত হয় তিন লাখ সাত হাজার ৩৮২জন। এর মধ্যে খুলনা বিভাগে ২০১৯ সালে যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত হয়েছিল ৩৮ হাজার ৫২৭জন, ২০২০ সালে শনাক্ত হয় ৩৩ হাজার ৭৯০জন আর গত বছর শনাক্ত হয় ৩৯ হাজার ৭৯৬জন। অর্থাৎ ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে খুলনা বিভাগে ছয় হাজার রোগী বেশি শনাক্ত হয়।
যক্ষ্মা রোগীদের তিন ধরনের চিকিৎসা দেয়া হয় উল্লেখ করে বিভাগীয় টিবি এক্সপার্ট ডা: শাহ মেহেদী বিন জহুর বলেন, নতুন রোগীদের জন্য ক্যাটাগরী-১, দ্বিতীয়বারের মতো শনাক্ত রোগীদের ক্ষেত্রে রি ট্রিটমেন্ট ক্যাটাগরী-১ এবং ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা রোগীদের জন্য পৃথকভাবে চিকিৎসা দেয়া হয়। অর্থাৎ যে বাড়িতে যক্ষ্মা রোগী রয়েছেন সে বাড়ির অন্যান্য লোকদেরকেও চিকিৎসার আওতায় এনে যক্ষ্মা প্রতিরোধের চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে যক্ষ্মার পরীক্ষা থেকে শুরু করে চিকিৎসা পর্যন্ত সবকিছুই বিনামূল্যে দেয়া হয় বলেও তিনি জানান। তিনি বলেন, মূলত: তিনটি লক্ষ্য নিয়েই সরকার এগিয়ে যাচ্ছে। প্রথমত: ২০৩৫ সাল নাগাদ যক্ষ্মা রোগী শতকরা ৯৫ ভাগ কমানো, প্রতি লাখে মৃত্যু ২২৫ জন থেকে কমিয়ে ২২ জনে আনা এবং বিনামূল্যে যক্ষ্মা রোগীদের চিকিৎসা নিশ্চিত করা। এ তিনটি লক্ষ্য নিয়ে ২০১৫ সাল থেকে সরকার এগিয়ে যাচ্ছে। যার অংশ হিসেবে খুলনা বিভাগে যক্ষ্মা রোগী শনাক্তের জন্য পরীক্ষাগারও বাড়ানো হয়েছে। ২০৩৫ সাল নাগাদ প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জিন এক্সপার্ট মেশিন স্থাপন এবং যাদের শরীরে টিবির জীবানু আছে তাদেরকে প্রিভেন্টিভ থেরাপী দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করার লক্ষ্য রয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। যার অংশ হিসেবে ২০১৫ সালে খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় যেখানে জিন এক্সপার্ট মেশিনের সংখ্যা ছিল মাত্র ২০টি সেখানে এখন হয়েছে ৫৭টি। আবার বিভাগের ১০৭টি স্থানে মাইক্রোস্কপিক মেশিনের মাধ্যমেও যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত করা হচ্ছে বলেও তিনি জানান। তিনি বলেন, প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, জেলা সদরের জেনারেল ও সদর হাসপাতাল, বক্ষব্যাধি ক্লিনিক ও বক্ষব্যাধি হাসপাতালের পৃথক কেন্দ্রে যক্ষ্মা রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হয়।
চিকিৎসায় অন্তত: ৯৬ শতাংশ যক্ষ্মা রোগী ভালো হয় বলে ইতোপূর্বের গবেষণায় দেখা গেছে। বিগত সাত বছরের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, ২০১৫ সালে যেখানে চিকিৎসায় সুস্থতার হার ছিল ৯৩ শতাংশ সেখানে ধীরে ধীরে বেড়ে বর্তমানে ৯৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
যক্ষ্মা থেকে বাঁচার জন্য তিনি করোনার ন্যায় আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশি থেকে মুক্ত থাকতে আক্রান্ত ব্যক্তিকে মাস্ক পরিধান করা এবং তার নিকটবর্তী না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। জীবানুশক্তি কম থাকা মানুষ, এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তি, ডায়াবেটিস আক্রান্ত, ধূমপায়ী এবং কিডনি রোগীদেরও যক্ষ্মা হওয়ার আশংকা রয়েছে বলেও তিনি জানান।
খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা: মো: মঞ্জুরুল মুরশিদ বলেন, যেহেতু আগের তুলনায় যক্ষ্মা রোগী শনাক্তের মেশিনপত্র বেড়েছে, সেহেতু শনাক্তও বেড়েছে বলে মনে হচ্ছে। তবে শনাক্তের পাশাপাশি যক্ষ্মার চিকিৎসায় কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে বলেও তিনি জানান। তিনি বলেন, আগের চেয়ে এখন যক্ষ্মার চিকিৎসা পদ্ধতিও অনেকটা বদলে গেছে। ইনজেকটেবল ওষুধের পরিবর্তে খাওয়ার ওষুধ দেয়া হচ্ছে। যক্ষ্মার সব ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চিকিৎসা হচ্ছে বিনামূল্যে। রোগীর পাশাপাশি আশ-পাশের লোকদেরও চিকিৎসার আওতায় আনা হচ্ছে। এতে ২০৩৫ সাল নাগাদ ৯৫ শতাংশ কমিয়ে আনার সরকারের যে লক্ষ্য সেটি বাস্তবায়ন হবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।