/ খুলনা বিসিডিএস’র কমিটি নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে: সংবাদ সম্মেলনে আহবায়ক কমিটির অভিযোগ

খুলনা বিসিডিএস’র কমিটি নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে: সংবাদ সম্মেলনে আহবায়ক কমিটির অভিযোগ

বাংলাদেশ কেমিস্টস্ এন্ড ড্রাগিস্টস্ সমিতি খুলনা জেলা শাখা নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে বলে উল্লেখ করেছেন সমিতির নবগঠিত আহবায়ক কমিটির নেতৃবৃন্দ। ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই গত ১৬ আগষ্ট খুলনা প্রেসক্লাবে গুটি কয়েক কেমিস্টের সংবাদ সম্মেলন হয় বলেও উল্লেখ করা হয় পাল্টা সংবাদ সম্মেলন থেকে।

মঙ্গলবার(২৬ আগষ্ট) খুলনা প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে সমিতির আহবায়ক খান খান মাহাতাব আহমেদ এমন অভিযোগ করে বলেন, মূলত: হেরাজ মার্কেটের ব্যবসায়ী এসএম আজিজুর রহমান নিজে নির্বাচনবিহীন সভাপতি না হতে পেরেই শাক দিয়ে মাছ ঢাকতেই গত ১৬ আগষ্ট সংবাদ সম্মেলনে কথিত অভিযোগ আনেন। এমনকি তিনি ওই সংবাদ সম্মেলনের মধ্যদিয়ে শৃংখলা পরিপন্থী কর্মকান্ড করার পাশাপাশি কেন্দ্রীয় কমিটির বিরুদ্ধেও বিষদগার করেছেন। এর প্রতিবাদে খুলনার সিংহভাগ কেমিস্ট ফুসে উঠেছে।

সংবাদ সম্মেলন থেকে ছয় দফা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, সর্বক্ষেত্রে এমআরপি বাস্তবায়নের দাবিতে নগরী ও জেলাব্যাপী প্রচারণা চালানো, মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ কোম্পানীকে ফেরত নেওয়ার দাবিতে কোম্পানীর প্রতিনিধি তথা ম্যানেজার ফোরাম, এক্সিকিউটিভ ক্লাব, ফারিয়া নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময়, মোবাইল কোর্টের নামে অহেতুক হয়রানী যাতে না করা হয় সেজন্য ঔষধ প্রশাসন ও জেলা প্রশাসনের সাথে পৃথক মতবিনিময়, অতিদ্রুত যাতে খুলনায় ফার্মেসী কাউন্সিলের কোর্স চালু করা যায় সেজন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা, বিসিডিএস’র ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা এবং কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী যথাসময়ে নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু করা।

বাংলাদেশ কেমিস্টস্ এন্ড ড্রাগিস্টস্ সমিতি খুলনা জেলা শাখার নবগঠিত কমিটি নিয়ে মিথ্যা, মনগড়া সংবাদ সম্মেলনের প্রতিবাদ ও কেন্দ্রীয় কমিটির বিরুদ্ধে অপপ্রচারের বিরুদ্ধে অনুষ্ঠিত এ সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে নবগঠিত আহবায়ক খান মাহাতাব আহমেদ আরও বলেন, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমল থেকেই বিসিডিএস খুলনা শাখাটি স্থবির করে রাখা হয়েছে। দেশের ৬৩টি জেলায় ফার্মেসী কাউন্সিলের কোর্স চালু থাকলেও শুধুমাত্র খুলনায় প্রায় দেড় বছর ধরে কোর্সটি চালু নেই। এমতাবস্থায় প্রকৃত ওষুধ ব্যবসায়ীদেরও অনেক প্রতিকুল অবস্থায় যেমন পড়তে হচ্ছে তেমনি নতুন নতুন ফার্মেসী লাইসেন্সও কেউ করতে পারছেন না। যেটি স্বচ্ছভাবে ওষুধ ব্যবসার অন্তরায়। তাছাড়া গত ৫ আগষ্টের পর থেকে তৎকালীন কমিটির সদস্যরা সমিতির কার্যালয়টি স্থবির করে রেখে চলে যাওয়ায় ওষুধ ব্যবসায়ীদের ঠিকানাও অস্তিত্ব সংকটে পড়ে। এজন্য খুলনার ওষুধ ব্যবসায়ী তথা কেমিস্টদের আবেদনের প্রেক্ষিতে বিসিডিএস’র কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে গত ৯ আগষ্ট সমিতির আর্টিক্যালস অফ এ্যাসোসিয়েশন অনুযায়ী ১৫ সদস্য বিশিষ্ট নতুন একটি আহবায়ক কমিটি নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ সমিতির বৃহত্তর স্বার্থে সরকার নির্ধারিত মূল্যে ঔষধ বিক্রয় (এমআরপি) বাস্তবায়ন, খুলনা জেলা শাখার সাধারণ কেমিস্টদের স্বার্থ রংরক্ষণ ইত্যাদি বিষয়ে প্রয়োজনীয় কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করার লক্ষ্যে অনুমোদন দেয়া হয়। সে লক্ষ্য নিয়েই যখন কমিটি আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব পালন শুরু করেছে ঠিক সেই মুহূর্তেই সংবাদ সম্মেলন করে অপপ্রচার চালানোর চেষ্টা করা হয়। আর এমন একদিন সংবাদ সম্মেলন করা হয়, যেদিন বিকেলে নবগঠিত কমিটি আনুষ্ঠানিকভাবে জেলা কার্যালয়ে দোয়া মাহফিলের মাধ্যমে কর্মকান্ড শুরুর প্রস্তুতি নেয়।

১৬ আগষ্টের সংবাদ সম্মেলনে যিনি লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন তিনি অর্থাৎ এসএম আজিজুর রহমান নিজেই দীর্ঘদিন বর্তমান আহবায়কের সাথে একই কমিটিতে দায়িত্ব পালন করেন। গত ২০১২-২০১৩ সেশনে খান মাহাতাব আহমেদ সভাপতি ও আজিজুর রহমান ছিলেন অবৈতনিক সম্পাদক। অথচ সেই আজিজুর রহমানই খান মাহাতাব আহমেদকে অব্যবসায়ী বলে উল্লেখ করেছেন। অর্থাৎ অবস্থা এমন যে, কমিটিতে থাকলে সব ঠিক, না থাকলে বেঠিক।যদিও খান মাহাতাব আহমেদ শুধু একজন ব্যবসায়ীই নন, বরং হেরাজ মার্কেটের সম্পত্তিরও মালিক। পক্ষান্তরে আজিজুর রহমান একজন পজেশনধারী।

কমিটি গঠনের বৈধতা সম্পর্কে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, দীর্ঘদিন খুলনা শাখার কমিটি না থাকায় খুলনা থেকে একাধিক কমিটির প্রস্তাব কেন্দ্রে যায়। তখন কেন্দ্রীয় কমিটি সমিতির আর্টিকেলস অব এসোসিয়েশন অনুযায়ী কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের ৯ আগস্ট অনুষ্ঠিত পঞ্চম মাসিক সভার সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত মোতাবেক যাচাই-বাছাই করে প্রতিটি কমিটির গ্রহণযোগ্য সদস্যদের সমন্বয়ে একটি নির্ভরযোগ্য কমিটি গঠন করে দেয়। উক্ত কমিটিতেও আজিজুর রহমানের প্রস্তাবিত কমিটি থেকেও কিছু সদস্য রাখা হয়। অর্থাৎ আজিজুর রহমান শুধুমাত্র কমিটিতে পদ না পাওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির নামে বিষদগার করেন।

সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন তুলে বলা হয়, আজিজুর রহমান নিজেকে সভাপতি হিসেবে উল্লেখ করে কেন্দ্রে যে কমিটি পাঠিয়েছিলেন সেই কমিটির কয়েকজনকে যখন নতুন কমিটিতে স্থান দেওয়া হয় তার পরেও তিনি যেহেতু ক্ষুব্ধ হয়েছেন তখন এটি প্রমাণ করে যে, তিনি নিজের পদের জন্যই গোটা ওষুধ ব্যবসাকে কলুষিত করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, নবগঠিত কমিটির যুগ্ম আহবায়ক মোঃ নুরুল হক বাহার, মোঃ আব্দুল লতিফ শেখ, আনিসুর রহমান লিটু, মোঃ ফরিদ উদ্দিন হাওলাদার, হেদায়েতুল ইসলাম পলাশ, মোঃ হাফিজুর রহমান, মোঃ হাফিজুর রহমান, মোঃ নুরুজ্জামান, আব্দুল মালেক মোড়ল, আবিদ উজ্জামান, মোঃ আনোয়ার হোসেন, মোঃ তৌফিক হোসেন প্রমুখ।

উল্লেখ্য, সংবাদ সম্মেলনকে ঘিরে খুলনা মহানগরীসহ জেলার প্রতিটি উপজেলা হতে বিপুল সংখ্যক ওষুধ ব্যবসায়ী খুলনা প্রেসক্লাবে জড়ো হন। সংবাদ সম্মেলন চলাকালে প্রেসক্লাবের সামনে একাধিক ব্যানার সহকারে ওষুধ ব্যবসায়ীরা দাবি তোলেন বিসিডিএস নিয়ে কোন ষড়যন্ত্র হলে দায়ীদের বিরুদ্ধে যে কোন পদক্ষেপ নিতে তারা প্রস্তুত।