এইচ এম আলাউদ্দিন ঃ নগরীর সেন্ট জোসেফ্স স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র তানিম তার বন্ধুর সাথে এসেছিল খুলনা বৃক্ষমেলায়। নগরীর সার্কিট হাউজ মাঠে এ মেলার চতুর্থ দিনে গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় দু’টি গাছ কিনে ফিরে যাচ্ছিল পুলিশ লাইনের বাসার দিকে। অনেকটা উৎফুল্লই মনে হচ্ছিল তানিম ও তার বন্ধুকে। ১০ টাকা করে ২০ টাকায় দু’টি গাছের চারা কিনে তানিম জানালো তার বাসায় আরও অনেক গাছ আছে।
এভাবেই বড়দের পাশাপাশি কোমলমতি শিশুদেরও দেখা যায় খুলনা বৃক্ষমেলায়। গত শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া পক্ষকালব্যাপী এ মেলা ধীরে ধীরে জমতে শুরু করেছে। প্রতিদিনই বাড়ছে বিক্রি। তবে তিন দিনের হিসাবে দেখা যায়, বনজ গাছের চেয়ে ফলজ, শোভাবর্ধন ও ফুল গাছের বিক্রি হচ্ছে বেশি। খুলনা জেলা প্রশাসন ও সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগ যৌথভাবে এ মেলার আয়োজন করেছে। মেলায় ৬১টি স্টলের মধ্যে নার্সারী মালিকদের স্টলের সংখ্যা ৪৯টি। বাকীগুলো মেলার নিয়ন্ত্রণকক্ষ ও সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের স্টল। শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া মেলার তৃতীয় দিন অর্থাৎ রোববার পর্যন্ত মোট তিন হাজার ৩১৯টি বিভিন্ন প্রজাতির গাছের চারা বিক্রি হয়েছে বলে মেলার নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সূত্রটি জানায়। অর্থাৎ বিগত তিনদিনে মোট চার লাখ ৩৭ হাজার ১১০ টাকার গাছের চারা বিক্রি হয়। তবে প্রথম দিন ৯৬৯টি চারা এক লাখ ২১ হাজার ৮শ’ টাকা, দ্বিতীয় দিন এক হাজার ১৩৯টি চারা এক লাখ ৬১ হাজার টাকা এবং তৃতীয় দিন এক হাজার ২১১টি চারা এক লাখ ৫৪ হাজার ৩১০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতিদিন সকাল আটটা থেকে শুরু হয়ে মেলা চলছে রাত আটটা পর্যন্ত। আয়োজকদের পক্ষে খুলনা নার্সারী মালিক সমিতি নগরীতে মাইকিং করে জনসাধারণকে স্বপরিবারে মেলায় যাওয়ার আমন্ত্রণ জানাচ্ছে।
মেলামাঠে গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় গিয়ে দেখা যায়, স্বপরিবারে আসছেন অনেকেই। আবার বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরাও আসছেন খুলনা বিভাগীয় বৃক্ষমেলায়। স্ত্রী ও দু’বছরের পুত্র সন্তানসহ মেলায় আসা আসাফুর রহমান কাজল বললেন, এবারের মেলায় ফলজ গাছের চারা বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশেষ করে একটি স্টলেই আনা হয়েছে ৫০ প্রজাতির আমের চারা। এতে প্রমাণিত হয় মানুষের মধ্যে ফলজ গাছের আগ্রহ বেশি।
বিগত দু’বছরের করোনা মহামারীর কারণে খুলনায় বৃক্ষমেলা না হওয়ায় অনেক নার্সারী মালিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন উল্লেখ করে খুলনা নার্সারী মালিক সমিতির সভাপতি এসএম বদরুল আলম রয়েল বলেন, ইতোমধ্যেই অনেকে পেশা পরিবর্তন করে ভিন্ন পেশায় গিয়ে আয়ের পথ বেছে নিয়েছেন। সোনাডাঙ্গার অনেক পুরাতন হামিদ নার্সারী এবার মেলায় স্টল দিতে পারেনি। অন্যান্য যেসব নার্সারী টিকে আছে অদূর ভবিষ্যতে তাদের জন্য পৃথক জায়গা না দেয়া হলে তাদেরকেও হারাতে হতে পারে এমন আশংকাও তার। বৃক্ষমেলার মাধ্যমেই সারাবছরের ক্রেতাদের আকৃষ্ট করা হয় এমনটি উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিগত দু’বছর বৃক্ষমেলা না হওয়ায় ক্রেতা হারিয়ে অনেকেই নার্সারী বন্ধ করে দিয়েছেন। কেননা বৃক্ষমেলার মাধ্যমেই নার্সারী মালিকরা ক্রেতা পেয়ে থাকেন।
সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও সোনাডাঙ্গার ডালিয়া নার্সারীর মালিক শেখ আবু মাসুদ বলেন, নার্সারী মালিকদের জন্য পৃথক জায়গা দেয়ার জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে। বিশেষ করে খুলনার গল্লামারী লিনিয়ার পার্ক সংলগ্ন ফাঁকা জায়গাটি তাদের জন্য বরাদ্দ দেয়া হলে অনেককে সেখানে স্থান দিয়ে টিকিয়ে রাখা সম্ভব হতো। শহরের রাস্তাঘাট যেভাবে সম্প্রসারণ হচ্ছে তাতে নার্সারীর জন্য পৃথক জায়গা না দেয়া হলে এ ব্যবসায় মানুষ আর টিকে থাকতে পারবে না বলেও তিনি আশংকা করেন।
খুলনা সার্কিট হাউজ মাঠের বিভাগীয় বৃক্ষমেলায় এবারের আকর্ষণীয় বিষয় হচ্ছে পরিবেশ রক্ষায় ভিন্নরকম কর্মসূচি। নিরালার গ্রীণ গেøাব নার্সারীর স্টলে ঝুলছে সেই ভিন্ন শ্লোগানের প্লাকার্ড। যেখানে লেখা রয়েছে ‘প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ চাহিয়া লজ্জা দিবেন না’, ‘আপনার ব্যাগই আপনার পরিচয়’। ওই স্টলে রাখা হয়েছে নিজস্ব তৈরি কাপড়ের ব্যাগ। যেসব ক্রেতা ব্যাগ ছাড়া মেলায় আসছেন তাদেরকে প্লাষ্টিকের বা পলিথিন না দিয়ে দেয়া হচ্ছে ওই ব্যাগ। বিনিময়ে রাখা হচ্ছে ৫০ টাকা করে। তবে পরবর্তীতে ওই ব্যাগ ফেরত দিলে টাকাও ফেরত দেয়া হচ্ছে। পরিবেশ রক্ষায় এমন উদ্যোগও অনেকের নজর কাড়ছে।
খুলনা বৃক্ষমেলায় কৃষি সম্প্রসারণের স্টলের সামনে একটি আদর্শ বাড়িতে কিভাবে একইসাথে মাছ ও বিভিন্ন প্রকার সবজি চাষ করা যায় তার বাস্তব চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। সেই সাথে রয়েছে ঘেরের আইলে সবজি চাষের প্রদর্শনীও।
সব মিলিয়ে খুলনা বিভাগীয় বৃক্ষমেলা ধীরে ধীরে জমে উঠছে। মেলায় আসছেন বৃক্ষপ্রেমিরা। কিনছেন বিভিন্ন প্রকার গাছের চারা।