নগরীর বাগমারা প্রধান সড়ক
* ৩.৮ ফুট চওড়া এবং গড়ে ৫ ফুট গভীর হবে ড্রেন
এজন্য ৬/৭ ফুট গভীর পর্যন্ত মাটি খুঁড়তে হবে
* ড্রেন ঘেঁষে নির্মাণ করা শতাধিক দোকান, দুই শতাধিক
বাড়ির সীমানা প্রাচীর সবকিছুই ঝুঁকিতে
* হেলে পড়ায় ভাঙা হচ্ছে একটি ৩ তলা ভবন

এ এইচ হিমালয় ঃ ড্রেন নির্মাণের জন্য খোঁড়া গর্তে তিন তলা একটি আবাসিক ভবন হেলে পড়ার ঘটনা সবাই কমবেশি অবগত। নগরীর বাগমারা প্রধান সড়কের দুই পাশে ড্রেন নির্মাণ করতে গিয়ে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ভবনটি হেলে পড়ে। বাগমারা চেয়ারম্যান বাড়ি মোড়ে অবস্থিত ওই ভবনটি এখন ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে।
পুরাতন এই খবরের পেছনে উদ্বেগজনক আরেকটি খবর হচ্ছে, গভীর ওই ড্রেন নির্মাণ করতে গিয়ে ঝুঁকিতে পড়েছে ওই এলাকার শতাধিক দোকানপাট ও বেশকিছু আবাসিক ভবন। ড্রেন নির্মাণের জন্য প্রায় ৪ ফুট চওড়া এবং ৬ থেকে ৭ ফুট গভীর পর্যন্ত মাটি খুঁড়তে হবে। কাজ শুরু হলে এতে ড্রেন ঘেঁষে নির্মাণ করা এসব স্থাপনা যে কোনো সময়ে ধসে পড়ার আশংকা রয়েছে। ইতোমধ্যে ড্রেনের দুই পাশের স্থাপনা সরিয়ে নিতে এলাকায় মাইকিং শুরু করেছে কেসিসি। কিন্তু এই ঘোষণাকে তেমন গুরুত্ব দিচ্ছে না এলাকাবাসী।
কেসিসির পূর্ত বিভাগ থেকে জানা গেছে, জলাবদ্ধতা নিরসনে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় নগরীর বাগমারা প্রধান সড়কের দুই পাশে ড্রেন নির্মাণ করা হচ্ছে। ওই এলাকার মতলেবের মোড় থেকে বাগমারা ব্রিজ পর্যন্ত ১ দশমিক ৬৪০ কিলোমিটার ড্রেন নির্মাণ হচ্ছে। এই কাজে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ কোটি ২২ লাখ টাকা। ২০২১ সালের ২৩ আগস্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দিয়েছে কেসিসি। গত ২০ সেপ্টেম্বর থেকে তারা কাজ শুরু করেছে। ইতোমধ্যে মতলেবের মোড় থেকে দুই পাশে ড্রেনের প্রথম অংশের কাজ শেষ হয়েছে। এই অংশের গভীরতা কম ছিলো।
মাঝখানে কিছু অংশ বাদ দিয়ে চলতি মাস থেকে চেয়ারম্যান বাড়ি মোড় থেকে বাগমারা ব্রিজ পর্যন্ত ড্রেন নির্মাণের কাজ শুরু হয়।
ড্রেন নির্মাণ কাজ তদারকির দায়িত্বে থাকা কেসিসির উপ-সহকারী প্রকৌশলী অমিত কান্তি ঘোষ জানান, ড্রেন ৩ দশমিক ৮ ফুট চওড়া এবং গড়ে ৫ ফুট গভীর হবে। ওপরে স্লাবসহ ইউ আকৃতির ড্রেন নির্মাণ করা হবে। বাগমারাসহ আশপাশের কয়েকটি এলাকার পানি ওই ড্রেন দিয়ে বাগমারা ব্রিজ নিচে খালে গিয়ে পড়বে। এজন্য এই অংশে ড্রেনের গভীরতা বেশি।
বাগমারা এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, চেয়ারম্যান বাড়ি মোড় এলাকায় বানিয়াখামার বাগমারা জামে মসজিদের কাছেই ড্রেনের মাটি খুঁড়ে রাখা হয়েছে। গভীরভাবে গর্ত খোড়ায় আশপাশের ভবনের নিচের মাটিও ড্রেনে ধসে পড়েছে। বাঁশ দিয়ে ভবনগুলোর নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। মসজিদের পাশেই হেলে যাওয়া ভবন ভাঙার কাজ করছেন শ্রমিকরা। বাঁশ দিয়ে ভবনের ধস ঠেকানোর চেষ্টা চলছে।
দেখা গেছে, হেলে পড়া তিন তলা ভবনটির পিলার ছিলো ড্রেনের ওপর। যার কারণে ড্রেন ভাঙতেই ভবনটি নড়বড়ে হয়ে পড়ে। মাটি খুঁড়তেই ভবনটি হেলে পড়ে। পাশের ভবনটি কিছুটা দূরে হলেও গভীরভাবে মাটি খোঁড়ায় পাশের মাটি ধসে পড়েছে। মাটি খোঁড়ার আগে ঠিকাদারের পক্ষ থেকে কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। যার কারণে আশপাশের মাটি ধসে পড়ে গর্ত আরও বড় হয়েছে। ড্রেন নির্মাণের জন্য মেসার্স জিয়াউল ট্রেডার্স ও মেসার্স রোজা এন্টারপ্রাইজ (জেভি)কে কার্যাদেশ দেওয়া হলেও কাজ করছিলেন আরেক ঠিকাদার। যার কারণে নিরাপত্তার বিষয়টি তারা গুরুত্ব দেয়নি।
সড়কটি ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমান ড্রেনটি অত্যন্ত সরু। এই ড্রেনের সীমানা ঘেঁষেই শতাধিক দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। প্রায় এক ডজন আবাসিক ভবনের পিলার ও প্রাচীর স্থাপন করা হয়েছে ড্রেনের ওপর। আরও প্রাই দুই শতাধিক বাড়ির সীমানা প্রাচীর নির্মাণ হয়েছে ড্রেন ঘেঁষে। ওই স্থানে ৪ ফুট প্রশস্ত এবং ৬/৭ গভীরভাবে মাটি খুঁড়লে দোকান বা সীমানা প্রাচীর কোনো স্থাপনাই টিকবে না।
যেখানে ভবনটি হেলে পড়েছে, তার পাশের ভবনের নিচ তলয় কয়েকটি দোকান। নিচ থেকে মাটি সরে যাওয়া কোনোভাবে বাঁশ দিয়ে ঢেকিয়ে রাখা হয়েছে। বাগমারা মসজিদের সিঁড়ি ও সীমানা প্রাচীরের পিলারসহ স্থাপনা হয়েছে ড্রেনের ওপর। এমন বাড়ি ও দোকানের সংখ্যা অসংখ্য। গভীরভাবে খোঁড়া শুরু হলে কি হবে-এ নিয়ে আতংকে এলাকাবাসী।
কেসিসির উপ-সহকারী প্রকৌশলী অমিত কান্তি ঘোষ জানান, অধিকাংশ সীমানা প্রাচীর ও দোকান কেসিসির সীমানা প্রাচীর কেসিসির ড্রেনের ওপর নির্মাণ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার থেকে এলাকায় মাইকিং করা হচ্ছে। সবাইকে নিজ দায়িত্ব স্থাপনা সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে।
সড়কের সোনামনি স্কুল গলির সামনে নামবিহীন একটি কাঠের ফার্নিচারের দোকান। দোকান মালিক বলেন, ‘সকালে স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার জন্য মাইকিং করেছে। বাড়ির মালিক বলেছে, আমাদের জমির সীমানায় আমরা দোকান করেছি, আমি দোকান সরাবো কেন। এখন আমার মালামাল ভেঙ্গে পড়লে আমি কোথায় যাব ?’
স্থানীয়রা জানান, বেশিরভাগ দোকানপাট, বাড়ি, সীমানা প্রাচীর ২০-৩০ বছর আগে নির্মাণ করা। তখন এসব বিষয় মাথায় আসেনি। এখন একটি ভবন হেলে পড়ায় সবাই আতংকিত। এলাকার অনেক মানুষ আছে, যাদের সীমানা প্রাচীর ভেঙ্গে নতুন করে নির্মাণের সামর্থ্য নেই। তাদের দুশ্চিন্তা সবচেয়ে বেশি।
তাদের দাবি, এতো গভীরভাবে ড্রেন নির্মাণের আগে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। অন্যথায় ড্রেনের দূরেও যে সব স্থাপনা সেগুলোও ঝুঁকিতে পড়বে।
কেসিসির ২৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জেড এ মাহমুদ ডন পূর্বাঞ্চলকে বলেন, যারা ড্রেনের ওপর এবং ড্রেন ঘেঁষে দোকান, সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করেছেন-তারা নিজ দায়িত্বে এগুলো সরিয়ে নিলে দুর্ঘটনার আশংকা কমে যাবে। যাদের স্থাপনা কিছুটা দূরে এবং মজবুতভাবে নির্মাণ করা তাদের দুশ্চিন্তার কিছু নেই।