বিদায়ী অর্থ বছরে ফেরত
গেলো ১২ কোটি টাকা

এইচ এম আলাউদ্দিন ঃ আগামী কয়েক বছরের জন্য চরম সংকটে পড়তে পারে খুলনার শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালটি। বিদায়ী অর্থ বছরে এ হাসপাতালের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দকৃত প্রায় ১২ কোটি টাকা ফেরত গেলেও কোন যন্ত্রপাতি না কেনার ফলে এমন দুরবস্থার আশংকা করছেন সংশ্লিষ্টরা। আবার হাসপাতালটি চরম সংকটের মধ্যে ফেলেই বিদায় নিচ্ছেন এখানকার পরিচালক ডা: মুন্সী মো: রেজা সেকেন্দার। গত অর্থ বছরের শেষ দিন অর্থাৎ ৩০ জুন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের পরিচালক ডা: মুন্সী মো: রেজা সেকেন্দারকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ওএসডি করা হয়। পাশাপাশি তাকে ঝিনাইদহ ম্যাটস-এ সংযুক্তি দেয়া হয়েছে। যদিও আগামী সপ্তাহেই তিনি চাকরী জীবন থেকেও অবসরে যাচ্ছেন।
খুলনার হিসাব বিভাগের একটি সূত্র জানায়, শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের জন্য ২০২০-২১ অর্থ বছরের জন্য প্রায় ১২ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। যা দিয়ে প্রয়োজন অনুযায়ী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি কিনতে পারতেন। কিন্তু অর্থ বছর শেষ হলেও ওই অর্থ ছিল অব্যবহৃত। যে কারণে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে ফেরত চলে যায় ওই অর্থ।
ওই সূত্রটি আরও জানায়, আবু নাসের হাসপাতালের জন্য গত অর্থ বছরে এমএসআর বাবদ সাত কোটি ছয় লাখ, যন্ত্রপাতি বাবদ প্রায় চার কোটি, মেরামত বাবদ প্রায় ৪০ লাখ, মুদ্রণ বাবদ প্রায় সাত লাখ ২০ হাজার এবং অন্যান্য খাতে প্রায় ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ ছিল।
শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অনেক মালামালের চাহিদা সত্ত্বেও তা’ কেনা হয়নি। এমনকি কেনা হয়নি প্যাথলজী বিভাগের জন্য চাহিদা অনুযায়ী রি-এজেন্টও। এর ফলে আর কিছুদিন পর অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষাও বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলেও আশংকা রয়েছে।
হাসপাতালের সূত্রটি বলছে, কালার ডপলার, অটোক্লেভ মেশিন, মাইক্রোস্কোপ প্রিমোস্টট, ফার্মাসিইউটিক্যালস রেফ্রিজারেটর, ইলেক্ট্রলাইট প্যানেল, ইটিভি সেট, অপারেশন নিউরো মাইক্রোস্কোপ, ক্লিনার অব মাইথিক, ক্লিনিং সলুশন, কন্ডিশনিং সলুশন, চিমনিসহ প্যাথলজি বিভাগের জন্য বেশকিছু ক্যামিক্যালের চাহিদাপত্র দেয়া হলেও সেগুলো কেনা হয়নি।
হাসপাতালের অপর একটি সূত্র বলছে, সাবেক পরিচালক ডা: বিধান চন্দ্র গোস্বামীর আমলে মালামাল কেনার জন্য টেন্ডারও আহবান করা হয়েছিল। টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে কার্যাদেশও দেয়া হয়েছিল। কিন্তু বর্তমান পরিচালক যোগদান করেই ওই প্রক্রিয়ায় নিজেকে সম্পৃক্ত করতে চাননি। এমনকি এ সংক্রান্ত কাগজপত্রেও তিনি স্বাক্ষর করতে নারাজ। এর ফলে ওই সময় টেন্ডার প্রক্রিয়ার জন্য যেসব অর্থ খরচ হয় সেটিও অপচয় হয়ে গেলো।
টাকা ফেরত যাওয়ার কথা স্বীকার করে খুলনা হিসাব অফিসের অডিটর মোল্লা নজরুল ইসলাম বলেন, যে প্রতিষ্ঠানের জন্য যে অর্থ বরাদ্দ থাকে তা যদি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে খরচ না করা হয় তাহলে ৩০ জুন তা স্বয়ংক্রিয়ভাবেই ফেরত চলে যাবে। শহীদ শেখ আবু হাসপাতালের ক্ষেত্রে তেমনটিই হয়েছে। গত অর্থ বছরের শেষ দিনে ওই হাসপাতালের ১২ কোটি টাকারও বেশি ফেরত গেছে বলেও তিনি জানিয়েছেন।
টাকা ফেরত যাওয়ায় হাসপাতালটি আগামী কয়েক বছরের জন্য পিছিয়ে গেলো উল্লেখ করে তিনি বলেন, একবার টাকা ফেরত গেলে পরে আর তা পুন:বার দেয়া হয়না। তাছাড়া এ বছর টাকা ফেরত যাওয়া মানেই হচ্ছে আগামী বছর বরাদ্দ কমিয়ে দেয়া। অর্থাৎ আগামী বছর হয়তো স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বা অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দের পরিমাণ কমিয়ে দেয়া হবে। যেটি কাটিয়ে উঠতে আগামী কয়েক বছর লেগে যেতে পারে।
অবশ্য এর আগে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে থাকাবস্থায় সেখানেরও প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা আগের অর্থ বছরে(২০১৯-২০) ফেরত যায় মন্ত্রণালয়ে। এর ফলে ওই হাসপাতালে গত অর্থ বছরের নিয়মিত বরাদ্দ কমিয়ে দেয়া হয় বলে সেখানকার হিসাব বিভাগের একটি সূত্র জানিয়েছে।
শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের বিদায়ী পরিচালক ডা: মুন্সী মো: রেজা সেকেন্দার বলেন, অহেতুক কোন মালামাল কিনে সরকারি অর্থ অপচয় করতে তিনি নারাজ। এজন্যই প্রয়োজনের অতিরিক্ত অর্থ কেনা হয়নি।