দেড় ঘণ্টা আগেই ভোট বর্জনের ঘোষণা

স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতা (দাকোপ) ঃ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পরই করোনাভাইরাস ধরা পরে খুলনার চালনা পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী আবুল খয়ের খানের। গত ১ ডিসেম্বর খুলনা একটি বেসরকারি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয় তাকে। পরবর্তীতে গত ২৩ ডিসেম্বর খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে স্থানান্তর করা হয়। গতকাল সোমবার বিকাল সাড়ে ৩টায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটেই মারা যান তিনি।
করোনা আক্রান্ত থাকা অবস্থায় তার পক্ষে প্রচারণায় অংশ নেন দাকোপ উপজেলা ও জেলা বিএনপির নেতারা। নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগে সোমবার দুপুর ২টায় ভোট বর্জনের ঘোষণা দেয় বিএনপি। দাকোপ উপজেলা বিএনপির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে আনুষ্ঠানিকভাবে ভোট বর্জনের এই ঘোষণা দেন উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল মান্নান। এর দেড় ঘণ্টা করেই প্রার্থীর মৃত্যুর খবর আসে।
নিহত আবুল খয়ের খান দাকোপ উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও চালনা পৌরসভার প্রথম প্রশাসক ছিলেন। তার বয়স হয়েছিলো ৬০ বছর।
ভোট চলাকালীন সময়ে প্রার্থীর মৃত্যুতে উপজেলার বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ, বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
এদিকে গতকাল সোমবার সকাল ৮ থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বিরোতিহীনভাবে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। পৌরসভায় মোট ভোটার সংখ্যা ছিলো ১২ হাজার ১০০ ভোট। নির্বাচনে ৭৬ দশমিক ৬৬ ভাগ ভোট প্রদান করেছেন ভোটাররা।
নির্বাচন চলাকালে বিভিন্ন ভোট কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, ছোট খাটো দুই একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়াই দাকোপে চালনা পৌরসভার নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে। এই প্রথম বারের মত ইলেকট্রনিক ভোটিং (ইভিএম)এ ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হওয়ায় প্রতিটি ভোট কেন্দ্রেই ভোটাররা বিড়াম্বনায় পড়েন। সকাল থেকে ভোটাররা শান্তিপূর্ণভাবে ভোট প্রদান করেন। ভোটকেন্দ্রের সামনে নারী ও পুরুষদের লম্বা লাইন দেখা গেছে। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ তুলে দুপুরে ভোটগ্রহণের ঘোষণা দেন প্রার্থী প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট ও উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল মান্নান। দাকোপ উপজেলা বিএনপির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি অভিযোগ করেন, সকালে ভোট গ্রহণ শুরুর পর আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকেরা ধানের শীষের এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়। বুথে ভোটাররা আঙুলের ছাপ (ফিঙ্গার প্রিন্ট) দেওয়ার পরই ইভিএমের গোপন কক্ষে নৌকার এজেন্টরা তাদের জোর করে নৌকায় ভোট দিতে বাধ্য করছেন। অনেক কেন্দ্রে গোপন কক্ষে নৌকা প্রতীকের লোকজন আগে থেকেই বসে ছিলেন।
একই অভিযোগ করেন চালনা পৌরসভার সাবেক মেয়র ও স্বতন্ত্র প্রার্থী অচিন্ত কুমার মন্ডল। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, কেন্দ্র থেকে তার এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে। আঙুলের ছাপ দেওয়ার পর গোপন কক্ষে বসে নৌকার এজেন্টরা ইচ্ছামতো ভোট দিয়ে দিচ্ছে।
তবে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী সনত কুমার বিশ্বাস দাবি করেন, ভোট সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হচ্ছে।
চালনা পৌরসভা নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মোঃ মাজহারুল ইসলাম বলেন, প্রার্থীরা কেউ এ ধরনের অভিযোগ করেনি। শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে। ৮০ ভাগ ভোটার ভোট দিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, চালনায় মোট ভোটার ১২ হাজার ১০০ জন। নির্বাচনে মেয়র পদে ৪ জন, কাউন্সিলর পদে ২৭ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ১০ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
পৌর কর্তৃপক্ষের শোক ঃ চালনা পৌরসভার সাবেক প্রশাসক আবুল খয়ের খানের মৃত্যুতে পৌরসভার মেয়র, কাউন্সিলবৃন্দ, কর্মকর্তা/কর্মচারী বৃন্দের শোক প্রস্তাবের পাশাপাশি মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনাসহ শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করা হয়েছে। শোকবার্তায় প্রকাশ করেন চালনা পৌর মেয়র সনত কুমার বিশ্বাস, পৌর সচিব মোঃ সিরাজুল ইসলাম, পৌর সহকারী প্রকৌশলী প্রনব মল্লিকসহ অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ।