নিজস্ব সংবাদদাতা, চুকনগর(খুলনা): চুকনগরে নিখোঁজের ১০দিনের মাথায় একটি ঝোঁপের মধ্য থেকে এক কিশোরের শরীরের বিভিন্ন অংশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ডুমুরিয়া থানাধীন চুকনগর পালপাড়া থেকে নরনিয়া গ্রাম অভিমুখি একটি গ্রামীণ সড়কের হাতিপোতারডাঙা নামক স্থান থেকে গত রবিবার রাত ৮টার দিকে এগুলো উদ্ধার করা হয় বলে ডুমুরিয়া থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
পুলিশ জানায়, এলাকাবাসীর মাধ্যমে সংবাদ পেয়ে ডুমুরিয়া থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে রাস্তার পাশে একটি ঝোঁপের মধ্যে মানবদেহের গলে পঁচে যাওয়া বিভিন্ন অংশ দেখতে পায়। এরপর খুলনা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সার্কেল-সি) আবীর সিদ্দিকী শুভ্র (পিপিএম), ডুমুরিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মাসুদ রানা, খুলনা জেলা পিবিআইর পরিদর্শক ইকবাল হোসেন এবং খুলনা সিআইডির এস আই প্রাণোতোষের নেতৃত্বে সিআইডির ফরেনসিক ইউনিট ঘটনাস্থলে হাজির হয়। তারা গভীর ঝোঁপের মধ্যে তল্লাশি চালিয়ে উদ্ধার করে মানব দেহের গলে পঁচে যাওয়া বিভিন্ন অংশ। তার মধ্যে রয়েছে মাথার খুলি, দাঁতের পাটি, পা, হাত, তার ব্যবহৃত লুঙ্গি, টি শার্ট, মোবাইল ফোন ইত্যাদি। প্রথমে সেগুলো শনাক্ত করা না গেলেও লুঙ্গি, টি শার্ট, মোবাইল ফোন দেখে নরনিয়া গ্রামের রেজাউল সরদার জানান এগুলো তার নিখোঁজ হওয়া ছেলে ইসমাইলের।
উল্লেখ্য, রেজাউল ইসলামের ১৫ বছর বয়সী ছেলে ভ্যানচালক ইসমাইল গত ১ আগষ্ট ভ্যান চালাতে গিয়ে নিখোঁজ হয়। গত ১০ দিনে কোন সন্ধান মেলেনি তার, অবশেষে রবিবার রাতে ইসমাইলের শরীরের বিভিন্ন অংশ উদ্ধার করল পুলিশ। রেজাউল সরদার তার পরিবার পরিজন নিয়ে চুকনগর বাজারের অরুন মজুমদারের রাইসমিলের চাতালে বসবাস করেন।
তিনি জানান, নরনিয়া গ্রামের আজব আলী সরদারের ছেলে শাহিনুর রহমান গত ১ আগষ্ট সন্ধ্যায় ইসমাইলকে ওই চাতাল থেকে সাতক্ষীরা যাবার কথা বলে ভাড়া করে নিয়ে যায়। তার পর থেকে ইসমাইল আর বাসায় ফেরেনি। ওইদিন রাত থেকে তার মোবাইল ফোনও বন্ধ পাওয়া যায়। পরদিন ইসমাইলের নিখোঁজের ব্যাপারে ডুমুরিয়া থানায় সাধারণ ডায়রী করেন রেজাউল। ঘটনার এক দিন পর থেকে শাহিনুরও লাপাত্তা হয়ে যায়। একারনে পুলিশের ধারণা এই শাহিনুরই ইসমাইলকে হত্যা করে তার ভ্যান নিয়ে পালিয়ে গেছে। শাহিনুর ভ্যান ছিনতাইয়ের কথা তার স্ত্রীর কাছে স্বীকার করেছে এবং ভ্যানটি মাত্র ১৫ হাজার টাকায় সে বিক্রি করেছে বলেও স্ত্রীকে জানিয়েছে। এ বিষয়টি তার স্ত্রী স্বীকারও করেছেন। তবে সে এখন কোথায় আছে তা তার স্ত্রী বা পরিবারের কেউ জানে না বলে জানায়। শাহীনুরের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটিও বন্ধ রয়েছে।
সোমবার বিকেলে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ইসমাইলের পিতা রেজাউল সরদার বাদী হয়ে ডুমুরিয়া থানায় মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলমান ছিল বলে জানিয়েছেন ডুমুরিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মাসুদ রানা। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, উদ্ধারকৃত মানবদেহের অংশ বিশেষ নিখোঁজ ইসমাইলের এটা প্রায় নিশ্চিত। এজন্য তার ময়না তদন্ত শেষে দাফনের জন্যে সোমবার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
তিনি বলেন, এই হত্যার মোটিভ উদঘাটনের জন্য পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট তৎপর রয়েছে। আমরা আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি এ অপহরণ ও হত্যার সাথে জড়িতদের গ্রেফতার করে আইনের কাছে সোপর্দ করতে পারব।