# তাপমাত্রার সীমা অতিক্রম
# বছরের অর্ধেক জুড়েই সাগর উত্তপ্ত
# ঘনঘন লঘুচাপ, নিম্নচাপ, ঘূর্ণিঝড়

ফারুক আহমেদ ঃ জলবায়ু পরিবর্তনের জেরে বাংলাদেশের উপকূলে আবার শঙ্কা তৈরী হলো। এ শঙ্কা এখন থেকে বাড়তেই থাকবে। কারণ বঙ্গোপসাগরে পানির তাপমাত্রা সীমা মানছে না। প্রায়ই ব্যত্যয় ঘটছে এ সীমার। যে কারণে সমুদ্র উত্তপ্ত থাকছেই বছরের প্রায় অর্ধেক সময় জুড়েই।
সমুদ্র বিজ্ঞানীদের মতে, সাধারণত সমুদ্র পৃষ্ঠের পানির তাপমাত্রা ২৮ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে গেলেই ‘সীমা’অতিক্রম করেছে বলে ধরে নেয়া হয়। সীমা অতিক্রমের এমনি পরিস্থিতিতে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির পরিবেশ তৈরী হয়। বঙ্গোপসাগরে এখন এমনি অবস্থা প্রায়ই তৈরী হচ্ছে এবং এটাই শঙ্কার কারণ। বিজ্ঞানীদের মতে, সমুদ্রের উপরিস্থিত পানির তাপমাত্রা স্বাভাবিকভাবে ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকার কথা। কিন্তু এখন প্রায়ই থাকছে ২৮ এর উপরে।
বিজ্ঞান সাময়িকী ‘ক্লাইমেট ডায়নামিক্স স্পিঙ্গার’ নামক জার্নালের উদ্ধৃতি দিয়ে ভারতের একাধিক বিজ্ঞানী উল্লেখ করেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের জেরে উত্তাল হতে পারে ভারত এবং বাংলাদেশের উপকূল। বাড়তে পারে সমুদ্রের পানির তাপমাত্রা ও উচ্চতা। বিজ্ঞানীদের পূর্বাভাস ছিল এ বছর পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় বেশী গরম পড়তে পারে। এ কারণে ‘মার্চ-এপ্রিল-মে’- এই সাইক্লোন সিজনে একাধিক সাইক্লোন তৈরী হতে পারে বঙ্গোপসাগরে। হয়েছেও তাই। তাদের পূর্বাভাস অনুযায়ী মার্চ মাসে বঙ্গোপসাগর প্রচন্ড উত্তপ্ত হয়ে ঘূর্ণিঝড়ের অবস্থা তৈরী হয়েছিল। এখন মে মাসে আবারও আন্দামান সাগরে ঘূর্ণিঝড়ের অবস্থা তৈরী হয়েছে। জলবায়ুর এ বিক্ষুব্ধ অবস্থার কারণে এখন থেকে ঘনঘনই ভারত মহাসাগরের আন্দামান সাগর এবং বঙ্গোপসাগর ফুঁসে উঠবে। তৈরী হবে ঘূর্ণিঝড়-সাইক্লোনের মত প্রাণঘাতি দুর্যোগ। তাদের মতে, বিশ^ জলবায়ুর তপ্ত হওয়ার প্রভাব জল এবং স্থলভাগের উপর সমভাবে পড়ছে। স্থলভাগেও তাপমাত্রা মার্চ থেকে এপ্রিল অবদি বাংলাদেশে ৪০-৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠেছে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ৪৫-৪৬ সেলসিয়াসে উঠানামা করেছে। বঙ্গোপসাগরে জল উপরিস্থিত তাপমাত্রা থাকার কথা ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু এখন থাকছে ২-৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশী। সমুদ্র, মহাসমুদ্রের বিশাল জলরাশির তাপমাত্রা বৃদ্ধির এ মাত্রা সমুদ্র পরিবেশের ব্যাপক পরিবর্তন। এর ফলে প্রচুর পরিমাণ জলীয়বাস্প তৈরী হচ্ছে। ফলে প্রতি মুহূর্তে বায়ুমন্ডলে যে পরিমাণ জলীয়বাস্প নেয়ার ক্ষমতা তার চেয়ে অনেক বেশী পরিমাণ জলীয়বাস্প তৈরী হচ্ছে যা বঙ্গোপসাগরের উপর বায়ুমন্ডলে জলীয়বাস্পের যে চাপ তা’ উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে দিয়েছে। কোন সাগর বা মহাসাগরে এ ধরণের পরিস্থিতি তৈরী হলে ঘনঘন ঘূর্ণিঝড় বা সাইক্লোন তৈরী হতে পারে। শঙ্কার বিষয় হলো- সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত মহাসাগর ও বঙ্গোপসাগরে এ ধরণের পরিস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে- অভিমত সমুদ্র বিজ্ঞানীদের।
এ ব্যাপারে শাহ জালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের ওশোনোগ্রাফি (সমুদ্র বিজ্ঞান) বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর মিজানুর রহমান এ প্রতিনিধিকে জানান, মাত্রাতিরিক্ত কার্বণ নিঃসরণ করার কারণে ‘সী সারফেস টেম্পারেচার’ (সমুদ্র পৃষ্ঠের তাপমাত্রা) ক্রমেই বাড়ছে। বিশ^ব্যাপীই এ ঘটনাটি ঘটছে। এর প্রভাবে উপকূলের দেশ হিসেবে বাংলাদেশের জন্য ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলা এখন প্রত্যহিক ঘটনায় পরিণত হতে পারে।
স্থলভাগেও তাপমাত্রা মার্চ থেকে এপ্রিল অবদি বাংলাদেশে ৪০-৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠেছে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ৪৫-৪৬ সেলসিয়াসে উঠানামা করেছে। আবহাওয়া বিজ্ঞানীদের মতে, কোন স্থানে বায়ুর তাপ বৃদ্ধি পেলে সেখানকার বায়ু উপরে উঠে যায়। ফলে বায়ুর চাপ ব্যাপকভাবে হ্রাস পায়। একে ‘নি¤œচাপ’বলে। এ নি¤œচাপ অঞ্চল প্রায় বায়ুশূণ্য অবস্থায় থাকে বলে আশপাশের অঞ্চল থেকে বায়ু প্রবল বেগে ঘুরতে ঘুরতে নি¤œচাপ কেন্দ্রের দিকে ছুটে আসে। এ নি¤œচাপ কেন্দ্রমুখী প্রবল ঘূর্ণি বায়ু প্রবাহকে ‘ঘূর্ণিঝড়’বা‘সাইক্লোন’বলে।
বাংলাদেশের অধিকাংশ ঘূর্ণিঝড় উৎপত্তি হয় বঙ্গোপসাগরের আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের কাছাকাছি। ঘূর্ণিঝড় উৎপত্তি হয় গভীর সমুদ্রে এবং এর জন্য সমুদ্রের পানির তাপমাত্রা ২৮ ডিগি ্রসেলসিয়াস বা তার চেয়ে বেশী থাকে। ঘূর্ণিঝড় সেখানে সৃষ্টি হয় সেখানের ১০-৪৫ কিলোমিটারের ব্যাসার্ধে তাপমাত্রা অনেক বেশী থাকে। এখানে বায়ুর গতিবেগ খুব কম থাকে। এখানে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ খুবই কম। এ অঞ্চলটিকে বলে ঘূর্ণিঝড়ের চোখ। এর বাইরেও ১৫০ হতে ৭৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত ব্যাসার্ধে ঘূর্ণিঝড় বিস্তৃত হতে পারে। ২০০৭ সালের নভেম্বরে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় ‘সিডরের’ ব্যাসার্ধ ছিল ৫০০ কিলোমিটারেরও বেশী। যার ফলে সিডরে প্রায় সারাদেশই কমবেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। ঘূর্ণিঘড়ের ব্যাসার্ধের মধ্যে ঘনকালো মেঘের বিস্তার ও প্রবল বায়ুর প্রবাহসহ বৃষ্টিপাত এবংউপকূলে জলোচ্ছ্বাস সংঘটিত হয়।