# উপজেলা সাধারণ সম্পাদকসহ
বিএনপির ১১ নেতাকর্মী আটক

* আরেক চেয়ারম্যান প্রার্থীর
৪টি ক্যাম্প, মাইক ভাঙচুর

এ এইচ হিমালয় : প্রথম তিন ধাপে খুলনার ৬৭টি ইউনিয়ন পরিষদের ভোট শেষ হয়েছে। চতুর্থ ধাপে আগামী ২৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে খুলনার সবচেয়ে বড় ইউনিয়ন পরিষদ জলমার নির্বাচন। ঘনবসতি এবং সবচেয়ে বেশি ভোটার সন্নিবেশিত এই এলাকায় নির্বাচন নিয়ে উদ্দীপনার শেষ নেই এলাকাবাসীর। খুলনা নগরীর নিকটবর্তী হওয়ায় এর কিছুটা আচ পড়েছে শহরেও। তবে শেষ সময়ে এসে হঠাৎ পাল্টে গেছে নির্বাচনী পরিবেশ।
গত ২০ ডিসেম্বর একরাতেই বটিয়াঘাটা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদকসহ বিএনপির ১১ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। সাবেক বিএনপি নেতা ও বর্তমান চেয়ারম্যান আশিকুজ্জামান আশিকের হয়ে কাজ করছিলেন তারা। এ নিয়ে গতকাল দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে বিএনপি।
ওই রাতেই ভাঙচুর করা হয়েছে আরেক চেয়ারম্যান প্রার্থী আবদুল গফুর মোল্লার ৪টি নির্বাচনী ক্যাম্প, প্রচার মাইক। প্রার্থীরা বিষয়গুলো রিটার্নিং কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে জানিয়েছেন। সার্বিক পরিবেশ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রার্থীরা।
জেলা নির্বাচন অফিস থেকে জানা গেছে, খুলনার ৬৮টি ইউনিয়নের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোটার জলমা ইউনিয়নে। আর এ কারণেই পঞ্চম ধাপে জেলার একটি মাত্র ইউপিতে ভোট হচ্ছে। বর্তমানে জলমা ইউনিয়নের ভোটার রয়েছেন ৫০ হাজার ১৭৯ জন। খুলনার বেশিরভাগ ইউনিয়নে গড়ে ৯টি ভোট কেন্দ্র থাকলেও এই ইউনিয়নে ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ১৮টি।
আয়তন ও ভৌগলিক কারণে ইউনিয়নটি নিয়ে কিছুটা জটিলতা রয়েছে। প্রশাসনিক দিক থেকে এটি বটিয়াঘাটা উপজেলার মধ্যে পড়েছে। কিন্তু আইন-শৃংখলার দিক থেকে এটি খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের হরিণটানা ও লবণচরা থানার আওতায়। কিছু অংশ রয়েছে জেলা পুলিশের বটিয়াঘাটা থানার ভেতরেও।
নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ এই ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৫ জন। এছাড়া ৯টি সাধারণ ওয়ার্ডে সদস্য প্রার্থী ৫৬ জন। এদের সবাই কমবেশি প্রভাবশালী। এছাড়া ৩টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে প্রার্থী রয়েছেন আরও ১৩ জন নারী।
ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন বর্তমান চেয়ারম্যান শেখ আশিকুজ্জামান আশিক, সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল গফুর মোল্লা, আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিধান রায়, ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মো. শফিউল ইসলাম এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী দিদার শিকদার। এর মধ্যে দিদার শিকদার ছাড়া বাকিরা বিরামহীন প্রচারণায় ব্যস্ত।
ইউনিয়ন ঘুরে প্রার্থী ও ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে জমজমাট প্রচারণায় উৎসবমুখর হয়ে উঠেছে নির্বাচনী এলাকা। মাইকিং, ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টারে ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলো সয়লাব হয়ে গেছে।
কিন্তু ২০ ডিসেম্বর রাতের ধরপাকড়ের পর অনেক দৃশ্যই পাল্টে গেছে।
জানা গেছে, গত ২০ ডিসেম্বর রাতে বটিয়াঘাটা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার ফারুক হোসেনসহ ১১ জন নেতাকর্মীকে আটক করেছে খুলনা সদর থানা পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে তাদের আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। গত ২২ নভেম্বর খুলনা সদর থানায় পুলিশের দায়ের করা সহিংসতা মামলায় তাদের গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
গ্রেফতার অন্যরা হলেন বটিয়াঘাটা থানা বিএনপির সদস্য নুরুল ইসলাম, মিজানুর রহমান, নূর ইসলাম, সৈয়দ অহিদুজ্জামান, হেমায়েত হাওলাদার, রফিকুল ইসলাম, আলমগীর, আনসার, আব্দুস সালাম ও জাকির শিকদার।
বিএনপি নেতারা সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেছেন, ইউনিয়ন পর্যায়ে বিএনপি সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থীর পক্ষে কাজ করায় তাদের আটক করা হয়েছে। গত ২২ নভেম্বরের মামলায় গত এক মাসে নতুন কেউ আটক হয়নি। হঠাৎ করে খুলনা সদর থানা পুলিশ বটিয়াঘাটায় গিয়ে নেতাকর্মীদের আটক করে নিয়ে আসা দীর্ঘতম ষড়যন্ত্রের অংশ।
ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ও প্রার্থী শেখ আশিকুজ্জামান বলেন, এক রাতেই ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যারা আমার পক্ষে নির্বাচনী কাজ করছে তাদের গ্রেফতারের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। বিষয়গুলো লিখিতভাবে নির্বাচন কর্মকর্তাকে জানিয়েছি।
ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল গফুর মোল্লা পূর্বাঞ্চলকে বলেন, গত ১৭ ডিসেম্বর সাচিবুনিয়ায় আমার মাইক ভাঙচুর করা হয়। পরে ২০ ডিসেম্বর রাতে রাজবাঁধ, কৈয়া বাজার, শোলমারী এলাকায় আমার ৪টি ক্যাম্প, ক্যাম্পের প্যানা-পোস্টার, ফেস্টুন সব ভাঙচুর করেছে। কয়েকবছর আগে রাজবাঁধে আমি আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড অফিস নির্মাণ করি। সেখানে বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রীসহ খুলনার শীর্ষ নেতাদের ছবি ছিলো। তারা সেগুলোও ভাঙচুর করেছে। আমি সবার নাম উল্লেখ করে নির্বাচন কর্মকর্তাকে চিঠি দিয়েছি। কিন্তু তারা কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মো. শফিউল ইসলাম বলেন, গত রাতে আমার বাড়ির পাশ থেকে আশিকের দুই কর্মীকে পুলিশ আটক করে নিয়ে গেছে। তবে এখন পর্যন্ত আমার প্রচারণায় কোনো বাধা দেওয়া হয়নি।
নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বিধান রায় বলেন, নির্বাচনী পরিবেশ খুবই ভালো। কোনো কাউকে বাধা দেওয়া হচ্ছে না।
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং অফিসার বলেন, দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগগুলো সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।